Header Ads

বরেণ্য সাংবাদিক পিতার প্রতি পদার্থবিদ পুত্রের স্মৃতিচারণ

অপ্রতিম নাগ

কিছুদিন আগে আমার বন্ধুবর ও সহকর্মী শান্তনু চৌধুরী মারফত জানতে পারলাম যে তার বাল্যবন্ধু ও বর্তমানে দিল্লিতে কর্মরত প্রথিতযশা সাংবাদিক  রত্নজ্যোতি দত্ত চাইছেন যে গুয়াহাটি থেকে প্রকাশিত বাংলা নিউজ পোর্টাল “নয়া ঠাহর”-এর পূজা সংখ্যার জন্য আমি যেন একটা লেখা দিই।

আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল কারণ লেখার অভ্যাস আমার একদম নেই। আবার আমার অপারগতা জানাতেও অস্বস্তিবোধ হচ্ছিল। এরই মধ্যে ক’দিন পর রত্নজ্যোতিবাবু নিজেই ফোন করে আমাকে বললেন যে আমি যেন আমার বাবাকে নিয়ে কিছু লিখি। আমার বাবা বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রয়াত অমিত কুমার নাগের প্রতি যে তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে তা তাঁর কথার মাধ্যমেই আমি অনুধাবন করতে পারলাম। তাঁর কথাতেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
আমার বাবা অমিত কুমার নাগ তদানীন্তন আসাম প্রদেশের সিলেট শহরে ১৯৩৩ সালের ২রা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। আমার পিতামহ উপেন্দ্র চন্দ্র নাগ সিলেটের প্রসিদ্ধ মুরারীচাঁদ কলেজের গ্রন্থাগারিক ছিলেন। যদিও বাবা সিলেটেই বিদ্যালয় জীবন অতিবাহিত করেন, তবে তিনি প্রাইভেট ছাত্র হিসাবে শিলচরের নরসিং স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে পাশ করেন। তারপর মুরারী চাঁদ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট (বিজ্ঞান) পরীক্ষাও কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। দেশ ভাগের পর ১৯৫০ সালে পরিবারের সঙ্গে বাবা শিলচরে পাকাপাকিভাবে চলে আসেন ও গুরুচরণ কলেজ থেকে কলা বিভাগে স্নাতক পরীক্ষায় ১৯৫২ সালে ডিস্টিংসন সমেত প্রথম শ্রেণিতে চতুর্থ স্থান দখল করেন। তাঁর যে মেধা ছিল, তিনি অনায়াসেই যে কোনও চাকরির পরীক্ষা পাশ করে একটি নিশ্চিন্ত জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু বাবার ছোটবেলা থেকেই সাংবাদিকতার প্রতি ঝোঁক ছিল। তিনি মনে করতেন যে সাংবাদিকতার মাধ্যেমেই বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যা তুলে ধরে তার সমাধান করা সম্ভব।
  সিলেটে থাকাকালীন সময়ে ছাত্র জীবনেই বাবা সেই সময়ের প্রথম সারির ছাত্র নেতাদের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪৮-৫০ সময়কালে যখন পাকিস্তান সরকার প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর দমননীতি প্রয়োগ করে, তখন মাত্র ১৫/১৬ বছর বয়সেই বাবা তাদের বেশ কয়েকজনকে আত্মগোপন করতে সহায়তা করে।
  ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সাংবাদিকতার সাথে জড়িয়ে যান। সেই সময় কলকাতা থেকে প্রকাশিত বাংলা দৈনিক “সত্যযুগ” ও “অমৃত বাজার পত্রিকা”, মুম্বাই থেকে প্রকাশিত “ভারত জ্যোতি” ও এলাহাবাদ থেকে প্রকাশিত "ন্যাশনাল হেরাল্ড" সংবাদপত্রে তিনি নিয়মিত লিখতেন। তাছাড়াও লন্ডন থেকে প্রকাশিত “ইষ্টার্ন ওয়ার্ল্ড” মাসিক পত্রিকা ও মায়ানমার থেকে প্রকাশিত “গার্জিয়ান” মেগাজিনে তাঁর প্রবন্ধ ছাপা হত। যে সময় পণ্ডিত নেহরুর শাসনকালে “হিন্দী-চিনি ভাই-ভাই” শ্লোগানে দেশ মুখরিত ছিল, সেই সময় ম্যাকমোহন লাইন নিয়ে চায়নার দুরভিসন্ধির ব্যাপারে বাবার একটি সংবাদ প্রতিবেদন বেশ আলোড়নের সৃষ্টি করেছিল।
  পরবর্তীকালে বাবা বৃটিশ সংবাদ সংস্থা নাফেন (এশিয়া)র সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেন এবং “কারেন্ট” নামক একটি ইংরেজি নিউজ ম্যাগাজিনেও তাঁর প্রতিবেদন নিয়মিত প্রকাশিত হত।
  উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন উপজাতী গোষ্ঠীর নানা সমস্যা বাবা বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। অত্যন্ত কম বয়সেই তিনি একজন কৃতী সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। “থট (Thought)” নামক দিল্লি থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা এবং চেন্নাই থেকে প্রকাশিত “ইন্ডিয়া রিভিউ” নামক পত্রিকয় তাঁর লেখা বের হতো। গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে অমিত কুমার নাগের অসংখ্য প্রতিবেদন দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ভারত সরকারের প্রকাশনা বিভাগের অত্যন্ত সম্মানীয় সাময়িকী “দ্য মার্চ অব ইন্ডিয়া”য় উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন উপজাতী সম্প্রদায়ের জীবন ও সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর বেশ কয়েকটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
  বাবা হাতে গোনা কয়েকজন সাংবাদিকের মধ্যে ছিলেন যাদের আত্মগোপনকারী নাগা ও মিজো বিদ্রোহীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার সামর্থ ছিল। তাঁর কাছে শুনেছি যে একবার কোহিমা যাওয়ার পথে ডিমাপুরে কার্ফুর মধ্যে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল কারণ কেভিচুষা নামক অসম প্রশাসনিক সেবার এক অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক এবং অতি সম্মানীয় নাগা ভদ্রলোক বাবাকে ডিমাপুরে অপেক্ষা করতে বলেন যাতে তাঁর ভ্রমণ সংক্ৰান্ত তথ্য নাগা বিদ্রোহীদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন এবং তাঁর কোনও ক্ষতি না হয়
  মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট নেতৃত্বাধীন জঙ্গি আন্দোলনের সময়কালে আত্মগোপনকারী বিদ্রোহীরা বাবাকে ওদের দখলে থাকা জায়গা পরিদর্শন করার আমন্ত্রণ জানায়। মিজোরামের সর্বস্তরের মানুষের সাথে বাবার একটা আত্মিক সম্পর্ক ছিল। সেখানের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী চালচুংগা গুরুচরণ কলেজে বাবার সহপাঠী ও খুব কাছের বন্ধু ছিলেন। পরবর্তীকালে “দ্য মিজো ডাইলেমা” নামক একটি বইও বাবা লেখেন যা খুব সমাদৃত হয়েছিল। এছাড়াও প্রবাদপ্রতিম নাগা স্বাধীনতা সংগ্রামী রানী গাইদিনলিউকে নিয়েও তিনি একটি বই লেখেন। 
বাবার সঙ্গে কথোপকথনের সময় তাঁর সাংবাদিক জীবনের বেশ কিছু ঘটনা জানার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তদানীন্তন নেফা (আজকের অরুণাচল প্রদেশ)য় চাইনিজ আগ্রাসনের খবর বাবা যখন ফ্ল্যাশ করেন, তখন প্রথমে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই খবরকে খণ্ডন করে। তবে পরে খোদ প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু যখন ভারতবর্ষের অবস্থান ঘোষণা করেন, তখন বাবার দেওয়া খবরের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
  ১৯৬৪ ইংরেজির এপ্রিল-মে মাসে বাবার একটি স্কুপ খবর যে নাগা বিদ্রোহীরা পূর্ব পাকিস্তানের দিকে কাছাড়ের জালালপুর হয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তা যথেষ্ট আলোড়নের সৃষ্টি করে। সেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন স্বঘোষিত জেনেরাল কাইটে সেমা।
  ১৯৫৭ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে বাবা শিলচর থেকে ‘সম্ভার’নামক একটি সাময়িক পত্রিকা বের করেন এবং তিনি এই পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। অতি কম সময়ের মধ্যেই ‘সম্ভার’ পাঠক মহলে এক নিজস্ব স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে তিনি একটি ইংরেজি সাময়িকী ‘ট্রাইবেল মিরর’ শিলচর থেকে প্রকাশ করেন।
  গত শতকের সত্তর দশকের শেষ দিকে জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে বাবাকে একজন কর্তব্যনিষ্ঠ, সৎ, সদাব্যস্ত সাংবাদিক হিসেবেই দেখেছি। তিনি অত্যন্ত সহজ সরল জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। যথার্থ সংসারী বলতে যা বোঝায়, তা বাবা হয়ত ছিলেন না তবে আমার মা বা আমার প্রতি দায়িত্ব বা কর্তব্য পালনে তিনি কখনও কোনও খামতি রাখেননি। যেহেতু খবর সংগ্রহের জন্য দিনের বেশীরভাগ সময় বাবাকে বাইরেই থাকতে হত, তাই সংসারের মূল দায়িত্ব তিনি আমার মা পূরবী নাগের হাতেই তুলে দিয়েছিলেন। তাঁর দৈনন্দিন রুটিন এরকম ছিল- সকালবেলা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে তিনি বাজারে চলে যেতেন। বাজার থেকে ফিরে প্রাতঃরাশ সেড়ে তিনি বেরিয়ে যেতেন। দুপুরবেলা দেড়টা থেকে দুটার মধ্যে ঘরে একবার এসে মধ্যাহ্নভোজন করে সঙ্গে সঙ্গেই আবার বেরিয়ে পরতেন। সন্ধ্যার সময় কোনো কোনো দিন একবার বাড়িতে আসতেন বা নাহলে সোজাসুজি আড্ডা দিতে চলে যেতেন, সেটা অবশ্যই তাঁর খবর পাঠানোর কাজ শেষ করে। রাত ন'টা নাগাদ বাড়িতে এসে হাত মুখ ধুয়ে সাড়ে ন'টা থেকে দশটার মধ্যে রাত্রির আহার শেষ করে তাঁর টাইপ রাইটার নিয়ে বসে যেতেন। আজ যখন আমি কম্পিউটারে বসে কিছু লিখি আর বার বার ডিলিট করে আবার লিখি তখন অবাক হয়ে ভাবি বাবা একনাগারে নির্ভুলভাবে কিভাবে টাইপরাইটারে লিখে যেতেন। রাত এগারোটা-সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত বাবা লেখাপড়া করতেন।
  বাবা খুব পড়াশোনা করতেন। নিজের সাধ্যমত বই কেনার উপরেও তিনি ব্রিটিশ লাইব্রেরি, জেলা গ্রন্থাগার, ইত্যাদির সভ্য ছিলেন এবং নিয়মিত বই এনে পড়তেন। বাবা সব সময় বলতেন, ভাল সাংবাদিক হতে হলে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হয়।
  গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষ দিক ও আশীর দশকের প্রথম দিকে আসাম আন্দোলনের সময় যখন আমি বেশ ছোট ছিলাম, তখন বাবাকে বেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করতে হয়েছে। সেই দিনগুলোতে প্রায়ই আন্দোলনকারীরা জনতা কার্ফুর ডাক দিত। আমরা সেই সময় গুয়াহাটির রেহাবাড়িতে একটি ছোট্ট ভাড়াঘরে থাকতাম। প্রত্যেক ঘরে ঘরে সবাই সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ঘরে ফিরে আসতো। কিন্তু খবর সংগ্রহের জন্য বাবাকে রাত এগারোটা-বারোটা পর্যন্ত বাইরে থাকতে হত। আমি আর মা চুপ করে বসে বাবার অক্ষত ফিরে আসার জন্য প্রহর গুণতাম। প্রশাসনের তরফ থেকে বেশ কয়েকবার বাবাকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নেওয়ার জন্য বললেও তিনি রাজি হননি। কারণ তিনি ছিলেন নির্ভীক ও অকুতোভয়।
  ১৯৭০ সাল থেকে দুই দশকেরও বেশী সময় বাবা গুয়াহাটিতে “অমৃত বাজার পত্রিকা” ও “যুগান্তর”-এর নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সহজ সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত বাবাকে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পরতে হয়েছে। যখন আমি উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র, তখন “যুগান্তর” ও “অমৃত বাজার পত্রিকা” হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। বাবা কিছুদিনের জন্য কর্মহীন হয়ে যান। তাই উচ্চ মাধ্যমিকে অসমের মধ্যে অষ্টম স্থান দখল করে ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং দুটোতেই ভর্তির সুযোগ পেয়েও আমার পড়া হয়নি। সেই সময়ের অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়া বাবাকে নিজের দাদার ন্যায় শ্রদ্ধা করতেন এবং বাবা মুখ ফুটে বললেই আমার পড়াশোনার জন্য কোনও আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা হয়তো হয়ে যেত। কিন্তু বাবা তা করেননি কারণ এটা তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ ছিল।
  আমি নিজের চোখে দেখেছি যে, গোলাপ বরবরা থেকে শুরু করে তরুণ গগৈ পর্যন্ত সব মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক ছিল। প্রফুল্ল মহন্তও বাবাকে খুব শ্রদ্ধা করতেন এবং প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর পরামর্শ চাইতেন।
  'অমৃতবাজার পত্রিকা' বন্ধ হয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর বাবা গুয়াহাটি থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক “দ্য নিউজফ্রন্ট”-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। নতুন পত্রিকা, আর্থিক অবস্থাও স্বাভাবিকভাবে খুব ভালো ছিল না। সেই পত্রিকার সত্তাধিকারী গোকুল বরাকে বাবা বলতেন- “অন্য কর্মীদের বেতন আগে দিন; আমাকে পরে দিলেও হবে”। সেই সময় কিন্তু আমাদেরও আর্থিক অবস্থা বেশ টালমাটাল। সম্পাদক থাকা সময়েও বাবা কিন্তু রিপোর্টিং ছাড়েননি। বিশেষ করে আসাম বিধানসভার অধিবেশনগুলোতে তিনি নিজে উপস্থিত থেকে রিপোর্টিং করতেন।
  বাবা আড্ডাপ্রিয় মানুষ ছিলেন। অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যেও রোজ সন্ধ্যাবেলা দেড় ঘণ্টা সময় তিনি বের করে আড্ডা দিতেন। বাবাকে কেন্দ্র করেই গত শতকের সত্তরের দশকে গুয়াহাটির পানবাজার এলাকায় ‘মধুমিতা’ নামের মিষ্টির দোকানে একটি আড্ডা গড়ে ওঠে। বরাক উপত্যকার বিভিন্ন পেশার মানুষ কোনও কারণে গুয়াহাটিতে গেলে একবার ‘মধুমিতা’য় ঢু মারতেনই। পরে ‘মধুমিতা’ বন্ধ হয়ে গেলে পল্টনবাজারের ‘ইউনিভার্সাল মেডিক্যাল স্টোর্স’ নামক একটি ঔষধের দোকানে সেই আড্ডা স্থানান্তরিত হয়।
  বাবার সাথে আমার সম্পর্কের কিছু কথা বলেই শেষ করব। তিনি কখনও পড়াশুনার ব্যাপারে আমাকে চাপ দিতেন না। প্রায়ই আমার মনে হত যে আমি আমার নিজের ওপর যতখানি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারতাম, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী ভরসা ও বিশ্বাস তিনি আমার ওপর রাখতেন। যখন আর্থিক দুরবস্থার দরুণ আমার ডাক্তারি পড়া হল না, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘ডাক্তারি থেকে অধ্যাপনাতেই তুই বেশী সফল হবি’।
  ২২ মার্চ ২০০৭ সালে শিলচরের বাসভবনে বাবার জীবনদীপ নিভে যাওয়ার কিছুদিন আগে থেকেই তাঁর স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে। কিন্তু সেই অবস্থায়ও আশ্চর্যজনকভাবে তিনি নিজের লেখা বইগুলোর নাম, ‘সম্ভার’ ও ‘ট্রাইবেল মিরর’-এর নাম, এমনকি তাঁর মেট্রিক পরীক্ষার রোল নম্বরও অনর্গল বলতে পারতেন। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার কয়েকদিন পূর্বে যখন তাঁকে নাম জিজ্ঞেস করা হয়, উনি বলে উঠলেন— ‘অপ্রতিম নাগ’। এটাই আমার জীবনের সর্বোত্তম প্রাপ্তি যে তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তে আমি তাঁর অস্তিত্বের সাথে একাত্ম হতে পেরেছিলাম।

সৌঃ নয়া ঠাহর পুজো সংখ্যা ২০২০

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.