Header Ads

তরুণ গগৈ রাজনীতিক জীবনে বহু বিরল মুহূর্ত রেখে গেলেন

 অমল গুপ্ত

ভারতে বহু রাজনীতিবিদের জন্ম হয়েছে, হবেও, কিন্তু আমার ৩৫ বছরের সাংবাদিক জীবনে তিনি বিরলতম উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ছিলেন,যে কোনও জটিল মুহূর্তে তিনি সহজ ও সরল ভাবে সব কিছু গ্রহণ করতেন,মনে হত কিছুই হয় নি। সব কিছু হালকাভাবে উড়িয়ে দিতেন। এই হচ্ছেন আমাদের সবার প্রিয় তরুণ গগৈ, তিন তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী,কেন্দ্রীয় মন্ত্রী,বহু মার্যাদাপূর্ণ পদ অলংকৃত করা ৮৬ বছরের তরুণ,নিজের দল কংগ্রেস, বিজেপি, এআইইউডিএফ, সব বামপন্থী দলের কাছে সমান জনপ্রিয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে তিনি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে তিনি পরাজিত বিরোধী আসনে ছিলেন। যেদিন বিজেপি নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সর্বানন্দ সোনোয়াল শপথ নিয়ে বিধানসভাতে, তিন তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও পরাজয়ের সব গ্লানি দূরে ফেলে প্রথম দিনেই বিধানসভাতে হাজির থেকে সব রেকর্ড ভেঙে দেন। সবার সঙ্গে গ্রুপ ছবিও তোলেন। যা কেউ পারেনা। আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত এক সম্পর্ক ছিল, প্রতি বছর ১ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে আমাকে মুখ্যমন্ত্রী ফুলের স্তবক ও অন্যান্য উপহার দিয়ে সম্বর্ধনা জানতেন। আমার সঙ্গে বাংলাতে কথা বলতেন। আমার শরীরের খবর নিতেন হাটু ব্যাথা ভালো হবার নানা পরামর্শ দিতেন। গত বিধানসভার করিডরে দেখা হতেই কেমন আছেন,শরীর ভালো তো? বলে আমার খবর নিলেন। অসমে ডিটেনশন ক্যাম্প,ডি ভোটারের সমস্যা নিয়ে তিনি বার বার  বাঙালিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই প্রতিবেদক মন্ত্রী ডাক্তার অর্ধেন্দু কুমার দে, প্রাক্তন বিধায়ক অজয় দত্ত প্রমুখদের নিয়ে তরুণ গগৈর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এক সরকারি নথি তুলে দিয়েছিলাম,পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এদেশে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থার কথা ছিল,অথচ বাংলাদেশ থেকে আগত বাঙালি হিন্দুদের সেই ব্যবস্থা নেই। তিনি বার বার আমার দেওয়া নথি দেখে ডাক্তার দে এবং প্রাক্তন মন্ত্রী রকিবুল হুসেনকে নির্দেশ দিলেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে দিল্লি যাবার জন্য তারপর আর কিছুই এগোয় নি। তিনি শেষ দিন পর্যন্ত জোর গলায় বলে গেছেন ডি ভোটারের ৯০ শতাংশই ভারতীয়।
আজ খারাপ লাগছে ডিটেনশন ক্যাম্পে ৩৬ জন মারা গেছেন প্রায় বিনা চিকিৎসায়, সবাই বাঙালি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও তিন বছর থেকেও বেশি সময় বিনা বিচারে বন্দি,বিজেপি সরকার নীরব,আর্থিক দুরবস্থায় জামিন পাচ্ছেন না। জেলে বন্দি,চিকিৎসার সুবন্দোবস্থ নেই,পেট পুরে খেতেও পায় না,মানবতাবাদী সংগঠন গুলো সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ দায়ের করেছেন, সরকার বা সর্বোচ্চ আদালত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এত বড় অন্যায়ের পরও বাঙালিদের ভোটের জন্যে বিজেপি তৎপরতা চালাচ্ছে। তরুণ গগৈ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মত নেতাকে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে তৈরি করে দিয়েছেন। হিমন্ত বার বার বিদ্রোহ করে মুখ্যমন্ত্রীর আসন ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিলেন, ৫৫ জন বিধায়ককে হাতে নিয়ে শেষ চেষ্টা করেছিলেন। হিমন্ত তরুণ গগৈয়ের সম্পর্ক ছিল প্রায় পিতা পুত্রের মতো, একবার দুজনে চোখের জলে ভাসিয়েছিলেন। তারপরও হিমন্ত পিতাকে অপমান করতে ছাড়েননি। এমন বহু কটু কথা বলেছেন,যা মেনে নেওয়া যায় না। এআইডিইউএফ প্রধান বদরুদ্দীন আজমল গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা মারণ রোগে আক্রান্ত তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছেন আপনি সুস্থ হয়ে ফিরুন, কংগ্রেস এআইইউডিএফ সমঝতার কাজ শুরু হবে, তিনি আর ফিরলেন না। এই সমঝোতা কি এবার ভেঙে যাবে। তরুণ গগৈ হু ইজ বদরুদ্দীন বলে মন্তব্য করে ইতিহাস সৃষ্টি করে ছিলেন,আজ তিনিই ইতিহাস হয়ে গেলেন। তাঁর অভাব কোনওদিন পূরণ হবে না। সাংসদ পুত্র গৌরব গগৈ বাবার উজ্জ্বল পরম্পরা ধরে রাখতে পারবেন তো। বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনে বর্তমানে এই প্ৰশ্নেরই উদ্ৰেক হচ্ছে।
তরুণ গগৈ এর সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্কের এক ঘটনা উল্লেখ না করে পারছি না, যে দিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শরৎ চন্দ্র সিনহা মারা যান সেই দিন আমার আর্টিস্ট ভাই অরুপ গুপ্ত গুয়াহাটি আর্ট গ্যালারিতে এক ছবির প্রদর্শনী করেছিল, তা উন্মোচন করেন তরুণ গগৈ, তাঁর ব্যক্তিগত অ্যাসিস্টেন্ট জানিয়ে দেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুর জন্যে তরুণ গগৈ প্রদর্শনী উন্মোচন করবেন না। এই প্রতিবেদক বলেছিল আমার দিল্লির ভাইয়ের সম্মান রক্ষা করা হোক, সে কথা শুনে তরুণ গগৈ ৫ মিনিট সময় দিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট কাটিয়েছিলেন। ভাই একটি গণেশের ছবি মুখ্যমন্ত্রী গগৈকে উপহার দিয়েছিলেন। তা আজও মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে শোভা পাচ্ছে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্ৰকাশ করেছে ‘নয়া ঠাহর’ গোষ্ঠী। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.