Header Ads

হাতরসের চিতায় আজও ‘নির্ভয়া’র শরীরের হাড়ের টুকরো পড়ে আছে, গভীর রাতের ডিজেলও দলিত কন্যাকে ছাই করে দিতে পারেনি

ছবি, সৌঃ ইন্টারনেট



অমল গুপ্ত

 কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল ক্রাইম রিসার্চ ব্যুরো দেশের সব রাজ্যের অপরাধ জনিত ঘটনাবলির পরিসংখ্যান তুলে ধরে, মহিলাদের প্রতি অত্যাচারের ঘটনা উত্তর প্রদেশে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এনসিআরবি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশে প্রতিদিন ৮৮ জনকে  ধর্ষণ করা হয়েছে। হাতরস-এর মত ঘটনা প্রতিদিন ঘটে চলেছে। আর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ শুক্ৰবার টুইট করে বলেন মা বোনেদের মান সম্মান  রক্ষা করবে তাঁর সরকার, দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। ঘটনার পর থেকে সরকার ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে গেছে আজ দেখা গেল জাতীয় পর্যায়ের হিন্দি চ্যানেলে ক্রমাগত যোগী সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি শুনিয়ে চলেছে, আর কলকাতার এবিপি চ্যানেল শুধুই হাতরসে নির্যাতিতার পরিবারের ঘটনা বিস্তারিত দেখাবার চেষ্টা করছে, তাদের ক্যামেরায় দেখা গেল হাতরসের যে জায়গাতে রাত দুটোতে ডিজেল ঢেলে জ্বালানোর পরও দলিত কন্যার শরীরের এক হাড় অক্ষত থেকে গেছে। উচ্চবর্ণের কয়েকজন যুবক মা ভাইয়ের কাছ থেকে ১৯ বছরের দলিত কন্যাকে দূরে নিয়ে গিয়ে  মারধোর করে ধর্ষণ করে তাঁর শিরদাঁড়ার হাড় ভেঙ্গে ফেলে, জিভে কামড় দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে তোলে, সেই অবস্থাতেও অপরাধীদের নাম বলে গেছেন নির্যাতিতা কন্যা। এরপরও উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী জানান ধর্ষণের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সারা দেশের রাজনৈতিক দল সংবাদ মাধ্যম হাত রসয়ের গ্রাউন্ড জিরো বুলগর হির যে ঘরের কাছে পৌঁছতে না পারে তাই পুলিশ মিথ্যা গুজব রটিয়ে দেয় ওই পরিবারে করোনা সংক্রমিত হয়েছে।  আজ জেলার ডেপুটি কমিশোনার পুনরায় পরিবারের সব সদস্যের মোবাইল সেট কেড়ে নিয়ে সবাইকে ঘর বন্দি করে রাখে, নির্যাতিতার এক ভাই এবিপি আনন্দের কাছে অভিযোগ করে প্রায় ২০০ পুলিশ ঘরের আশে পাশে ছাদে পাহাড়া দিচ্ছে, ঘরের মানুষকে ঘরে আটকে রেখেছে, হুমকি দিয়েছে কোনও কথা বাইরে গেলে ফল ভুগতে হবে। এবিপি-র সাংবাদিক প্রতিমা মিশ্রও মনোজ অধিকারী গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের আটকানো হয়। ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। প্রতিমা মিশ্র সমেত তিনজন মহিলা সাংবাদিক ৬, ৭ ঘন্টা ধরে ঘটনার বিবরণ দেন, সেই সময় দেখা গেল অধিকাংশ দেশ সেবা করা টিভি চ্যানেলে উত্তরপ্রদেশ সরকারের উন্নয়নমূলক কোটি কোটি বিজ্ঞাপন চলছে। গতকাল রাহুল গান্ধীকে পুলিশ ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। আজ তৃণমূল কংগ্রেস দলের ডেরেক ও ব্ৰায়েন সমেত তিন সাংসদকে পুলিশ হেনস্থা করে, গ্রামে ঢুকতে দেয় নি। কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রতিমা মণ্ডল ও ডেরেক ও ব্রায়েন এই তিন জনের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়, ডেরেক মাটিতে পড়ে যান। 

 ২০১২ সালে দেশে নির্ভয়া কাণ্ডের মতো ঘটনার পরও স্বাধীনতার ৭০ বছরে দেশের অর্ধাকাশ মহিলাদের নুন্যতম নিরাপত্তা নেই। ন্যাশনাল ক্রাইম  রিসার্চ ব্যুরোর প্রতিবেদন বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস তারতম্য করে না, তাদের প্রতিবেদনে রাজস্থানে দলিত মহিলাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার ধর্ষণের ঘটনা সবাইকে টেক্কা দেবে। রাজস্থানে গতবছর ৫৫৪ টি এবং উত্তরপ্রদেশে ৩৩৭ টি ঘটনা ঘটেছে, দুই রাজ্যে দলিত কন্যা ধর্ষণের ঘটনা ২৬ শতাংশ। এই ঘটনা ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশে প্রতিদিন হ্যাঁ আমি কিন্তু ভুল লিখছি না, হ্যাঁ প্রতিদিন ৮৮ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সেই প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিচ্ছেন মা বোনেদের নিরা পত্তা সুনিশ্চিত করা হবে। পশ্চিমবঙ্গের সরকার তো এনসিআরবি- র কাছে প্রতিবেদনই পাঠায় নি। সেই রাজ্যে  ধর্ষণের ঘটনা, মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা কি কম? টিভির পর্দায় চোখ রাখলে জানা যায়, রাজ্যের সংবিধানিক প্রধান কি বলছেন। প্রশ্ন বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল নয়, আমরা আজও মহিলাদের উপযুক্ত সম্মান দিতে পারছি না। হাতরসের, নির্ভয়া কাণ্ডের পরও। বড় লজ্জা,তা ঢাকার জায়গা নেই।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.