Header Ads

পরিস্থিতি রিপুন বরার অনুকুলেই যাচ্ছে !


অমর পাল, গুয়াহাটি ঃ

অসম প্রদেশ কংগ্রেস দলের সভাপতি ছিলেন হরেন তালুকদার । ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত। অসম আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিকে তোয়াক্কা না করেও রাজ্যে কংগ্রেস (ই) দলকে ক্ষমতাসীন করতে সারা অসম চষে বেড়িয়ে ছিলেন । তার আগে তিনি শরৎ সিংহ এর মন্ত্ৰীসভায় শিক্ষামন্ত্রীও ছিলেন । কিন্তু সম্ভবত কোচ-রাজবংশী সম্প্রদায়ের নেতা হওয়ার দরুণ মুখ্যমন্ত্রীত্বের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পারেন নি । ১৯৮৩ সালে হঠাৎ প্রয়াত হিতেশ্বর শইকীয়ার রাজনৈতিক উত্থানের দরুন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হওয়া সত্বেও হরেন তালুকদার মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন নি । তবে কী কোচ রাজবংশী সম্প্রদায়ের যোগ্য নেতা হওয়া সত্বেও প্রদেশ কংগ্রেস তথা সাংসদ রিপুন বরার ক্ষেত্রেও অতীতের পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে? সম্প্রতি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনে এ প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে!

প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী ১৯৮০ সালে কেন্দ্রের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য রাজনীতি তে আলোড়ন সৃষ্টি হওয়ার দরুণ মুখ্যমন্ত্রী গোলাপ বরবরা-র জনতা সরকার কে ১৯৮০ সালের ১৩ই জানুয়ারি তারিখে ভেঙে দেওয়া হয়েছিলো। ইন্দিরা গান্ধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের পরামর্শ অনুসারে ১৯৮১ সালে আনোয়ারা তাইমুরকে মুখ্যমন্ত্ৰীর পদে বসানো হয়েছিলো। কোচ রাজবংশী সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা শরৎ চন্দ্র সিংহ বিলাসীপাড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন । তিনি ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত অসমের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন । প্রয়াত হিতেশ্বৰ শইকীয়া তখন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতি মন্ত্রী হন । আনোয়ারা তাইমুরকে গদিচ্যূত করে ৬৫ দিনের জন্য কেশব গগৈকে মুখ্যমন্ত্রী বানানো হয়েছিলো। যদিও কেশব গগৈকে সরিয়ে দু মাসের জন্য যোগেন হাজরিকাও মুখ্যমন্ত্রী হন। ভাঙ্গাগড়ার এই খেলার পেছনে প্রভাবশালী ধর্মীয় সংখ্যালঘু নেতা নগাঁওয়ের ইদ্রিস আলী সাহেব ছিলেন বলে অনেকেই মনে করেন। তারপর ১৯৮৩ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত নেলির এক তরফা গণহত্যার পর ইদ্রিস আলী, মুকুট শর্মা প্রমুখদের সমর্থনে হিতেশ্বর শইকীয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। প্রদেশ কংগ্রেসের তদানীন্তন সভাপতি হরেন তালুকদার ১৯৮৩ সালের নির্বাচনের আগে সমগ্র অসমে দিনরাত একাকার করে ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্ৰদায়ের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সমর্থন আদায় করে কংগ্রেসের সরকার গঠন করার এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন। যদিও ইদ্রিস আলী সাহেব সংখ্যালঘু কার্ড খেলে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে থেকে ছিনিয়ে এনে হরেন তালুকদারের পরিবর্তে আহোম সম্প্ৰদায়ের নেতা হিতেশ্বর শইকীয়াকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে স্থলাভিষিক্ত করেন। বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপুন বরা ২০১৭ সাল থেকে অবিরাম ভাবে প্রতিটি জেলার প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে পৌঁছে জনগণের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছেন । এর আগে অন্য কোনো সভাপতি সাংগঠনিক তৎপড়তা বাড়াতে এতো পরিশ্রম করেছেন বলে মনে পড়ে না। কিন্তু আগামি নির্বাচনের পর কী পরিস্থিতি হতে পারে, তা নিয়ে রাজনৈতিক ভবিষ্যদ্বাণী করা দুরূহ ব্যপার। যদিও এক সূত্র মতে জানা গেছে, রিপুন বরা শুধু সনিয়া গান্ধীর পছন্দের ব্যক্তি নয়, রাহুল গান্ধীর কাছেও অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। সেদিক থেকে নিঃসন্দেহ হতে পারলেও নগাঁওয়ের সংখ্যালঘু নেতা রকিবুল হুসেনের সমর্থন কোন দিকে যায়, সেটাই ভাববার বিষয়। কারণ গৌরব গগৈ মুখে যাই বলুক না কেন যে তিনি মুখ্যমন্ত্রীত্বের দৌঁড়ে নেই, তবু সম্প্রতি গৌরব গগৈকে লোকসভা ডেপুটি লীডার নিয়োগের বিষয়টি তে বোঝা যাচ্ছে যে গগৈ রাহুল গান্ধীর খুব কাছের মানুষ। ওদিকে, বিরোধী দলপতি দেবব্রত শইকীয়াও মুখ্যমন্ত্রী পদটি বাজপাখীর মতো ছোঁ মেরে নেওয়ার জন্য ওৎ পেতে বসে আছেন । সভাপতি রিপুন বরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে স্থিতপ্ৰজ্ঞতার সঙ্গে এগোতে হব। সে ক্ষেত্রে আগামি নির্বাচনে রিপুন বরা তাঁর ক' জন নিজস্ব বিশ্বাসী মানুষকে প্রার্থিত্ব দিয়ে জিতিয়ে আনতে পারবেন, তার ওপরই নির্ভর করবে রিপুন বরার স্বপ্ন পূরণের বাস্তব হবে। পরিস্থিতি রিপুন বরার অনুকুলেই যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.