এবার লড়াইয়ে অস্ত্র শাণিয়ে দাঁড়া....
স্বর্ণালী ঘোষ
স্বাধীনতার হীরক জয়ন্তীর দোর গোড়ায় পৌঁছে নিজেদের
অবস্থানটা ফিরে দেখলে নিঃসন্দেহে এদেশে মহিলারা ক্রমবর্ধমান সভ্যতার জীব বলে উপলব্ধি
হয়। আদিম সাম্যবাদী সমাজে মাতৃপ্রধান সমাজের বিবর্তনের ফলে ব্যক্তি মালিকানা স্পষ্ট
কুথ্যিগত হবার সাথে সাথে মহিলাদের পিছিয়ে পড়া অবস্থান শুরু। কারণ, বাহুবলে অর্জিত
সম্পত্তি মালিকের মৃত্যুর পর থেকে যাচ্ছে, যার ওপর উত্তরাধিকারের
প্রশ্ন জাগে। কিন্তু গোষ্ঠী জীবনে পিতৃত্ব কিভাবে নির্ধারিত হবে। আবার প্রজনন ক্ষমতা
মহিলাদের, তাই মহিলাদের স্বাধীন বিচরণ প্রতিহত হল। সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষিত করা,
সম্পদ বৃদ্ধির জন্য গোষ্ঠীর জয় পরাজয় থেকে দাস ব্যবস্থার ফলে মেয়েরা গৃহবন্দী হয়।
পরে রুশ বিপ্লবের সামাজিক বদলে মেয়েরা পেয়েছে অর্ধেক আকাশের অধিকার। নিজেদের দেশ
ও সমাজের তথা পরিবারের সমস্যা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে লড়াই করে করে মেয়েরা নিজের
অধিকারের দিকে তাকিয়েছে কারণ, শিক্ষা হল চেতনার আঁতুড়ঘর, তা সেই শিক্ষা পুঁথিগত হোক
বা অন্যভাবে।
ছবি, সৌঃ আন্তৰ্জাল
ক্রমে নবজাগরণের আলো এসে অন্ধকার ভারতবর্ষে
পরার ফলে এ দেশে নারী স্বাধীনতার দোর খুলতে লাগলো কিছু সমাজ সংস্কারকের সাহায্যে। কালের
বিবর্তনে আজকের নারী ঘর গেরস্থালি থেকে খেলার মাঠ, মহাকাশ, তথা রাজনীতির আঙ্গিনা জুড়ে
আছেন। তাছাড়া, প্রচুর আইন ও পাশ হয়েছে মহিলাদের সুবিধার্থে। কিন্তু এমন শক্ত লক্ষিন্দরের
লৌহগৃহের মত ঘরে কোথাও একটা ছেঁদা অবশ্য আছে যা দিয়ে সব বেরিয়ে নারী এখন প্রায় সবক্ষেত্রে
শারীরিক না হলেও মানসিকভাবে রক্তাক্ত, ক্ষত বিক্ষত। তার স্বাতন্ত্র বোধ নেই। সমাজ তাকে
ধীরে চলা, কথা বলা, পতিসেবা, সন্তান ধারণ পালন, এসবের কোড অফ কণ্ডাক্ট দেবে তা মানলে
চরিত্র হনন, কুৎসা রটিয়ে বিশ্বনারীকে সহবত শিখিয়ে ছাড়তে প্রতিজ্ঞ। ফলে মেয়েরা পারিবারিক
হিংসার শিকার, পুঁজিবাদী ভোগের তাড়না, পণের বলি, অনার কিলিং এর শিকার। এ দেশের দর্শন
ই ধর্ষণ, প্রতিনিয়ত যার শিকার মহিলারা এবং এভাবে আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের তালিকা
দিনে দিনে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
আধুনিকতার ধর্ম গতিশীলতা, প্রতি মুহূর্তে
যা আলোর দিকে ধাবমান। কিন্তু অন্ধকারের রং যেমন শুধু কালোই থাকে, তেমনি বর্বরতার ও
কোনও বদল নেই। যুগে যুগে তা একইভাবে বিদ্যমান। বর্তমান আর্থ সামাজিক
পরিস্থিতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা না করে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, মহিলারা সঙ্কটাপন্ন
ও বিপর্যস্ত। পৃথিবীর অর্ধ আকাশ জুড়ে যে নারীরা আছেন, তাদের অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক
ভাবে পিছিয়ে রাখলে প্রকৃত স্বাধীনতা ভোগ করা যাবেনা। সমাজে অসতের অবস্থান অপ্রতিরোধ্য।
মেয়েদের সম্ভ্রম লুঠ ও জীবন হানির বিরুদ্ধে দূর্বার প্রতিরোধ ও তাদের নিরাপত্তা দেবার
অঙ্গীকারে নারী আন্দোলনকেই হাতিয়ার করে আমাদের গড়তে হবে। আশার বার্তা আনে এবছর"মি
টু" আন্দোলন,যা মেয়েদের প্রতি গোপন অশ্লীলতার ঢাকনাকে ধাক্কা দিয়ে বহু মানী
জনের মুখোশ খুলে ফেলে। এভাবে মেয়েদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ব্যারিকেড তৈরি করতে হবে।
দোষীদের আড়ালকারীর প্রচেষ্টা রুখে দিতে হবে, প্রতিবাদের অস্ত্রকে আরও শাণিত করে। সময়ের
দাবিতে, লিঙ্গ বৈষম্য মুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে দল, মত সবকিছুর ব্যবধান ভুলে হাতের
চুড়ি আর পায়ের নূপুর রণ দুন্দুভীর আওয়াজ তুলে চেতনার ঐতিহ্য হৃদয়ে মননে নিয়ে সাধারণ
মহিলারা হয়ে উঠুক অসামান্যা।
(লেখক শিলচরের আইনজীবী।
মতামত নিজস্ব।)
কোন মন্তব্য নেই