২৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগরের জন্মদিন, তাঁর প্ৰতি শ্রদ্ধাঞ্জলী
আশিষ কুমার দে
গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর আমি কিছু হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির খোঁজে
হাওড়া থেকে পূর্বা এক্সপ্রেসে ধরে চলে আসি জশিডি।ওখান থেকে একটা অটো ধরে
পৌঁছে যাই দেওঘর বা বৈদ্যনাথ ধামে, আগে থেকে বুক করা
ছিল হোটেল বৈষ্ণবী ক্লার্ক ইন। দুপুরের খাওয়া সেরে বেডিয়ে পরি একদা বাঙালিদের
ঐতিহ্যবাহী কুন্ডেশ্বরী মন্দির( এই মন্দিরের বিগ্রহ জগদ্ধাত্রী, কথিত আছে স্ব: রামময় বন্দোপাধ্যায় ১৮৫৬ সালে
স্বপ্নাদেশ পেয়ে একটি কুন্ড থেকে উদ্ধার করেন অষ্ট ধাতুর বিগ্রহ। রামময়
বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন রামকৃষ্ণের মামা উনি থাকতেন হুগলির মায়াপুর গ্রামে) নওলক্ষা
মন্দির যার প্রতিষ্ঠা করেন একজন বাঙালি
মহীয়সী চারুশীলা দাস ১২৯২ বঙ্গাব্দে খরচ হয়েছিল ৯লক্ষ টাকা, এবং দর্শনীয় আরেক বাঙালির কির্তী অনুকূল
ঠাকুরের আশ্রম। এই আশ্রমে আমি ১৯৭০ সালে এসেছিলাম। পরেরদিন বেলা একটা নাগাদ আমরা
একটি গাড়ি নিয়ে রওয়ানা হই বাঙালিদের তীর্থ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর শহরতলির
উদ্দেশ্যে। গতকাল ট্রেন থেকে নামাবধি অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হচ্ছে থামার নাম নেই। এর
মধ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ আসছেন সস্ত্রীক বৈদ্যনাথ ধামে পুজো দিতে
তাই সিকিউরিটির ঘেরাটোপ পার করতে বেশ কিছু সময় নষ্ট হয়ে গেল। ঝাড়খন্ড রাজ্যের
একদা বাঙালি অধ্যুষিত জামতারা জেলার একটি গ্রাম কর্মাটাঁড যেখানে মূলত সাঁওতালদের
বাস। ১৮৭২ সালে কিছুটা বিরক্ত হয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কোলকাতা ত্যাগ করে
পাকাপাকি ভাবে চলে আসেন, তৈরি করেন একটি
আশ্রম ‘নন্দন কানন’। প্রতিষ্ঠা করেন কন্যা বিদ্যালয় যা হয়ত দেশের
প্রথম কন্যা বিদ্যালয়। একটি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসালয়। এখান থেকে শুরু করেন
মেয়েদের শিক্ষা, স্থানীয় সাঁওতালদের বোঝান শুরু করেন শিক্ষার
গুরুত্ব, বিধবা বিবাহ,
শিশু কন্যা বিবাহের মত
বিষয়গুলিকে। প্রায় ১৮ বছর বিদ্যাসাগর কর্মাটাঁডে কাটিয়েছিলেন এবং এখানেই ২৮শে
জুলাই ১৮৯১ শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর পর তার একমাত্র পুত্র ‘নন্দন কানন’ কে বিক্রী করে দেন, কোলকাতার নামকরা স্বর্ণ ব্যবসায়ী মল্লিকের
কাছে।তবে নন্দন কাননকে ভেঙে ফেলার আগে বিহার বেঙলি অ্যাসোসিয়েশন বর্তমান ঝাড়খন্ড
বেঙলি অ্যাসোসিয়েশন এটিকে কিনে নেন ও সংরক্ষন করেন। কন্যা বিদ্যালয়ের পরিচালনা
করার খর্চা দিতেন কোলকাতার বেসরকারি সংস্থান, ‘বিশ্বকোষ পরিষদ’। ২০০৩ সালে বিধবা বিবাহ করার অপরাধে একটি উপজাতি
যুবকের খুনের ঘটনার পর থেকে ঐ বেসরকারি সংস্থা সম্পূর্ণ অর্থ সাহায্য বন্ধ করে
দেন। ১৯৭৪ সালে ভারতীয় রেলওয়ে কর্মাটাঁড স্টেশনের নাম বদলে রাখেন বিদ্যাসাগর
স্টেষন ও গ্রামের নাম করা হয়, ঈশ্বরচন্দ্র
বিদ্যাসাগর। ২৬/৯/২০১৯ সালে ঝাড়খন্ড সরকার কর্মাটাঁড ডেভল্পনেন্ট ব্লকের নাম করেন
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
দুদিনব্যপী দ্বীশত জন্ম বার্ষিকী উদযাপনের আয়োজন করেছিলেন ঝাড়খন্ড বেঙলি
অ্যাসোসিয়েশন । তবে বৃষ্টির জন্য আয়োজন কিছুটা মাটি হয়, মাঠে জল জমে বসার স্থান ভেসে গিয়েছিল। আমরা কিছুটা দু:খ পেলাম অনুষ্ঠানে যোগ
দিতে না পারার জন্য। এরপর আমরা ওনার বসতবাড়ি দেখতে যাই তবে রক্ষনাবেক্ষণের অবস্থা
মোটেও ভালো না। কেয়ার টেকারের দেখা পাওয়া গেল না। তবে স্কুলের বারান্দায় গরু-বাছুর
বাঁধা, যত্রতত্র আগের
দিনের ব্যবহৃত কাগজের প্লেট-কাপ ভেসে যাচ্ছে। বোঝা গেল উৎসবের আগে দেওয়ালে নতুন
পলেস্তরা, রং উঠেছে।
রাস্তাগুলিকে মুডে ফেলা হয়েছে ইন্টারলিংক
টাইলসে। আমি ১৯৭৮-৭৯ সালে ঘাটাল থাকাকালীন বেশ কয়েকবার বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান বীরসিংহ গ্রামে গেছিলাম,
দুটো স্থানের
রক্ষনাবেক্ষনের মধ্যে আকাশপাতাল তফাত। ঝাড়খন্ড সরকারের উচিত এর প্রতি আরো
দায়িত্বশীল হওয়া ।এবং এবিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়িত্ব নেওয়া প্রয়োজন। আমরা খুব
মর্মাহত হয়েছি বাঙলার বর্ণ পরিচয়ের স্রষ্টার প্রতি অবহেলা দেখে।
কোন মন্তব্য নেই