Header Ads

বরাকের রাজনৈতিক শূন্যতায় প্রফুল্ল মহন্ত নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে এলেন

অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সঙ্গে বরাক উপত্যকার ভৌগোলিক বিভাজন থাকলেও মনের বিভাজন দূর হয়নি। বিজেপি সরকারও সেই বিভাজন দূর করতে পারেনি। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল সদাই বরাক ব্রহ্মপুত্র সম্প্রীতির কথা বলেন। কিন্তু বরাকের  স্বাভিমান, আবেগকে গুরুত্ব দেন না। ভাষা আন্দোলনে প্রাণ দেওয়া ১১ জন শহিদকে আজও স্বীকৃতি জানানো হল না। শিলচর রেলওয়ে স্টেশনকে ভাষা শহিদ স্টেশন হিসাবে ঘোষণা করা হলো না। ইস্ট-ওয়েস্ট করিডোরের মাত্র ২৯ কিলোমিটার পথ আটকে রেখে দিল দিসপুর সরকার, সদিচ্ছার  অভাব। পি ডব্লিউ ডি-র মত গুরুত্ত্বপূর্ণ পোর্টফোলিও দিয়ে পরে ডানা ছেটে বন বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হল পরিমল শুক্লবৈদ্যকে। ঠুঁটো জগন্নাথ করে রাখা হয়েছে। বরাকের রাস্তাঘাট নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে। চাকরি বাকরি, সরকারি সুযোগ সুবিধা সব ক্ষেত্রে বরাকের শিক্ষিত যুব সমাজকে দূরে রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ-এর অবস্থা নিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক কমলাখ্য দে পুরকায়স্থ বিধানসভার অধ্যক্ষের সামনে অনশন ধর্মঘট করেন, বিজেপি  বিধায়করা তাকে সমর্থন করেননি। বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কদের নেতিবাচক ভূমিকার কথা সবার জানা হয়ে গেছে। বরাকে কয়লা, সুপারি, ইউরিয়া, কাঠ, বালির পর এবার করোনা সিন্ডিকেট নিয়ে বিজেপি বিধায়ক, নেতা, উপনেতাদের নাম জড়িয়েছে। বরাকের কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে সি বি আই-কে দিয়ে তদন্ত করার ঘোষণা শুধু ঘোষণাই হয়ে থাকলো। বরাকের একমাত্র শিল্প উদ্যোগ কাছার পেপার মিলে মৃত্যুর মিছিল চলেছে। বিজেপি সরকারের মিথ্যাচারের সীমা পার হয়ে গেছে। এরপর গৌতম রায়রা কি বিজেপি-কে রক্ষা করতে পারবে? সচিবালয়ে, নমামী বরাক, বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট নির্মাণ প্রভৃতির নামে বিজেপি এবার ভোট চাইবে কিন্তু সাড়া পাবে কি? যদিও বিজেপি বিগত কংগ্রেস সরকারের সময়কার কংগ্রেস নেতা-মন্ত্রীদের লাগাম ছাড়া দুর্নীতিকে টেক্কা দিতে পারবে না। সব সীমা পার হয়ে গেছে। বিজেপি সেকথা বলে ভোট আদায় করতে পারে তবে বিধায়ক সংখ্যা কমে যাবে। কংগ্রেস দল এআই ইউ ডি এফের সঙ্গে সমঝোতা করলে বিজেপি বেকায়দায় পড়তে পারে। বরাকে বর্তমানে রাজনৈতিক নেতৃত্বে শুন্যতা বিরাজ করছে। একমাত্র উজ্জ্বল ভাবমূর্তির বিজেপি নেতা সাংসদ ডাক্তার রাজদ্বীপ রায় একার পক্ষে বিজেপিকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। কবীন্দ্র পুরকায়স্থের মতো নেতাকে দিসপুরের বি জে পি কর্মকর্তারা আলমারিতে সাজিয়ে পুজোই করে গেলেন। যেমন হয়েছে শিলাদিত্য দেবের ক্ষেত্রে।  মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। যত বেশি মুসলিম সম্প্রদায়কে গাল দেবে, তত বেশি বিজেপির লাভ, ভোট বিভাজন হবে। শিলাদিত্য দেবের মত দক্ষ, করিত কর্মা, উজ্জ্বল  ভাবমূর্তির বিজেপি যুব নেতা কম আছে। কিন্তু ৪ বছরে তাকে কিছুই দেওয়া হল না। বড় অপরাধ সে বাঙলি। বরাকের তথা রাজ্যে একমাত্র মুসলিম বিধায়ক বরাকের আমিনুল হক লস্করই বা কি পেলেন? বিধানসভার উপাধ্যক্ষ পদ সম্মানের হলেও রাজনৈতিক গুরুত্ব নেই। বিজেপি সরকারের উচিত ছিল শিলাদিত্য এবং আমিনুল হক লস্করকে মন্ত্রী পদে বসানোর। দিলীপ পালই বা কি পেলেন? শিলচরের মতো গুরুত্ত্বপূর্ণ আসন থেকে জয় লাভ করেছেন। দলের দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলেছেন বলেই কি কিছু পেলেন না? বরাকের রাজনৈতিক আকাশ শূন্য। এই পরিস্থিতিতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্তের হঠাৎ বরাক সফরকে গুরুত্ব না দিয়ে পারা যাবে না। তিনি একটানা তিনদিন বরাক সফর করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, অগপ মন্ত্রী কেশব মহন্ত, সভাপতি অতুল বরা গুরুত্ব না দিলেও বরাকের দল মত নির্বিশেষে সব মানুষ আজও মহন্তকে মনে রেখেছেন। অগপ মন্ত্রী শহিদুল আলমের হাত ধরে প্রফুল্ল কুমার মহন্ত বরাকের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ছিলেন। অসম সাহিত্য সভার অধিবেশন বরাকে অনুষ্ঠিত করে বরাক ব্রহ্মপুত্র   সম্প্রীতির সেতুকে সুদৃঢ় করে ছিলেন। অগপ দুই  মন্ত্রীকে আর দু'চারজন মন্ত্রীর দাক্ষিণ্য পাওয়া নেতা বাদ দিলে অগপ-র তৃণমূল পর্যায়ের সব কর্মী প্রফুল্ল কুমার মহন্তের পাশে আছেন। অতুল বরা দলে বিভাজন নেই বললেও অগপ বিভাজন  স্পষ্ট। মহন্ত সারা রাজ্যে ঘুরে তার জনপ্রিয়তা মাপার চেষ্টা করেছেন। বরাকের ১০০ শতাংশ মহন্তর পাশে আছেন। বরাকের বিভিন্ন সূত্র সেই দাবি করলেন। এক অগপ সূত্র জানায়, বন্যা, করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতি সেই সঙ্গে দলের অবস্থা খতিয়ে দেখতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিমান ছেড়ে সড়ক পথে তিন জেলা সফর করেন। প্রিয় বন্ধু,  মন্ত্রী শহিদুল আলম চৌধুরীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে আলগাপুরে যান। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আমিরি শরীয়ত তইবুর রহমান বরভুইয়ার সমাধি স্থলেও শ্রদ্ধা জানাতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী যান। হাইলাকান্দির অগপ জেলা সভাপতি সামসুল আলম চৌধুরী, কামরুল ইসলাম বরভুইয়া, রানা চক্রবর্তী, রাহুল পাল প্রমুখ তার সঙ্গে দেখা করে ভবিষ্যতে মহন্তের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তার হাতে গড়া সংস্কৃত বিদ্যালয়ে   ভৈরববাড়ি যান। সেখানে তাকে বিপুলভাবে সংবর্ধনা জানানো হয়। অনেকে জানেন না এই বিদ্যালয়ে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করেন। 
বরাকে কোভিভ চিকিৎসার নামে ব্যাপক দুর্নীতি চলছে। কোভিড সেন্টারগুলো অপরিস্কার, টয়লেটের অবস্থা সঙ্গীন, আস্বাস্থকর, সাধারণ জ্বরের ঔষধ দেওয়া হয় না। দক্ষিণ হাইলাকান্দি অলয়ছড়া গার্লস হোস্টেলের কোভিড সেন্টারে, কারিচরা কোভিড সেন্টারে খাবারের নামে নিম্ন মানের খাবার পরিবেশন করার অভিযোগ নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত হাইলাকান্দির ডেপুটি কমিশোনারকে বিষয়টি নিয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। তারপর থেকে কোভিড সেন্টারগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দেওয়া হচ্ছে। টয়লেট সাফ করা হচ্ছে। ধ্রুব জ্যোতি শর্মাকে সঙ্গে নিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্তের তিন দিনের বরাক সফর অগপ-র ভবিষৎ রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে। সেই পূর্বাভাস পাওয়া গেছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.