Header Ads

শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা নিয়ে অবহেলা


শিলচর : শিলচর মেডিকেল কলেজে কোনও ধরনের পরিকাঠামোগত উন্নতি না করেই কোভিড জোন বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার নামে চরম অব্যবস্থা শুরু হয়েছে। এখানে কোভিড রোগীর সংখ্যা প্রচুর এটা মানছি, তবে পর্যাপ্ত সংখ্যায় ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী নেই, নার্স নেই এবং এই দুরবস্থার মধ্যেই আক্রান্ত রোগীদের সেখানে নিয়ে রাখা হচ্ছে। যেখানে তাদের রাখা হচ্ছে সেই এলাকা অত্যন্ত নোংরা, ল্যাট্রিন-বাথরুম দুর্গন্ধময় ও অপরিষ্কার। পর্যাপ্ত সেনিটাইজেশন হচ্ছে না রোগীদের খাবার দাবার অত্যন্ত নিম্নমানের। ১১ টায় সকালের খাবার দেওয়া হয়, সাড়ে তিনটা বা চারটার সময় দুপুরের খাবার, রাতের খাবার পৌঁছতে পৌঁছতে সাড়ে এগারোটা বেজে যায়। এটা অত্যন্ত বাস্তব এবং রোগীরা এই কথাগুলো বার বার তুলে ধরছেন। প্রয়োজনে ডাক্তাররা সেখানে যান না, রোগীদের ভালোভাবে দেখাশোনা করা হয় না। এই চরম দুরবস্থার মধ্যেও আক্রান্ত রোগীরা বাধ্য হয়ে সেখানে ১৪দিন কাটাচ্ছেন। অথচ সবকিছু জেনেও স্বাস্থ্য বিভাগ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রী কি করছেন বুঝতে পারছি না। এসবে অতিষ্ঠ হয়ে শহরের বিভিন্ন পাড়ার লোক নিজেরাই রোগীদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করানোর দায়িত্ব নিচ্ছেন। আমরা সম্মতি দেখেছি হাইলাকান্দির সুকান্ত সরণি এগিয়ে এসে এই পদক্ষেপে সায় দিয়েছে। অথচ আশ্চর্যের বিষয় প্রায় তিন মাস আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিলচরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছিলেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার গ্রাউন্ডে আর্মির সহায়তায় ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি টেম্পোরারি কোভিড কেয়ার সেন্টার খুলবেন। এই প্রতিশ্রুতি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া কাছাড় জেলায় ৩০০শয্যা বিশিষ্ট একটি কোভিড হাসপাতাল করার ঘোষণাও তিনি করেছিলেন। একসময় সেই অনুযায়ী মেহেরপুরে জমি দেখাও হলো। ঘোষণা এবং জমি দেখাই সার, এরপর আর একচুলও কাজ এগোয়নি। সমস্ত কিছুই ভাওতা, প্রতিশ্রুতি মাত্র, নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারছেননা স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
প্রত্যেক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের যৌথ খাতে দেড় লক্ষ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ রোগীদের যে নিম্নমানের খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা দেওয়া হচ্ছে, আমার মনে হয় না ৫০ হাজার টাকাও খরচ হয়। তাহলে বাকি একলক্ষ টাকা কোথায় যাচ্ছে? রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর করোনা মুকাবেলায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। আমাদের ঐতিহ্যবাহী শিলচর মেডিকেল কলেজ বহু আন্দোলনের ফলে এসেছিল। যেভাবে কাগজ কল, সুগারমিল ইত্যাদি কালক্রমে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, আমার মনে হয় এই হাসপাতালকেও একইভাবে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। তাই এখন সাধারণ জনগণকে সতর্ক হতে হবে এবং জোর গলায় আওয়াজ তুলতে হবে। আমি জেলার প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে এই আবেদনটুকু রাখছি, পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, তিনি যেন এই অন্যায়গুলো চোখের সামনে হতে না দেন। এগিয়ে এসে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেন। তারই সঙ্গে আমি কাছাড়ের জেলাশাসকের কাছেও আবেদন রাখছি, তিনি যেন এসব ব্যাপারে কড়া নজরদারি রাখেন। তার মত একজন যোগ্য ব্যক্তি কাছাড় জেলায় থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে এভাবে অন্যায় হবে, এটা আমার আশা ছিল না। তার কাছে আমার অনুরোধ, তিনি যেন নিজে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড জোনে ঢুকে রোগীদের অবস্থা যাচাই করেন ।
 ডাক্তারদের চূড়ান্ত অবহেলার কারণে শিলচর মেডিকেল কলেজে দিন দিন রোগীরা মারা যাচ্ছেন, মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। গতকাল ফয়জুল হক লস্কর নামের একজন রোগীর গোল্ড ব্লাডার ব্লাস্ট হয়ে পেট ফুলে যাওয়ায় চিকিৎসার জন্য শিলচর মেডিকেল নিয়ে গেলে সেখানে কোনও ডাক্তার পাওয়া যায়নি। কোনরকম ভাবে একজন জুনিয়র ডাক্তার এসে তাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে ভর্তি করলেন, সোনোগ্রাফিতে দেখা গেল গোল্ডব্লাডার ব্লাস্ট হয়েছে, অপারেশন দরকার। অপারেশন থিয়েটারে পিজি স্টুডেন্টরা তার টেম্পারেচার চেক করলো, টেম্পারেচার স্বাভাবিক মাত্রা থেকে বেশি ছিল, ফলে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হল করোনা ওয়ার্ডে। যেখানে একজন রোগীর অপারেশন দরকার এবং সেই অপারেশন করতে খুব বেশি সময়ও লাগে না, তার অপারেশন না করে করোনা ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হল। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটে এবং আইসিইউতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং এক ঘণ্টার মধ্যেই রোগীর মৃত্যু হয়। এটা অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার এবং আমাদের চোখের সামনে শিলচর মেডিকেল কলেজে ধরনের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।

প্রদীপ দত্ত রায়
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আকসা
আইনজীবী গৌহাটি হাইকোর্ট

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.