Header Ads

‘আমার মা ভারতীয় ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করতেন’ --দুর্লভ সাক্ষাৎকারে কমলা দেবী হ্যারিস !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ইতিহাস রচনা করলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন। দেশটির দ্বিতীয় শীর্ষ পদে নির্বাচনের জন্য প্রথম কৃষ্ণা কোনো নারীকে বেছে নেওয়া হলো। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত কৃষ্ণাঙ্গ ও ভারতীয় মিশ্রণের সিনেটর কমলা হ্যারিসকে রানিং মেট হিসেবে ঘোষণা করেছেন জো বাইডেন। তিনি আবার এশীয় বংশোদ্ভূত। কমলা হ্যারিসের মা ভারতের চেন্নাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পরে ইউসি বার্কলেতে একটি ডক্টরেট প্রোগ্রামে যোগ দিতে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
 
আজিজ হানিফফা নামের এক নারী বলেন, কমলা হ্যারিসকে রানিং মেট করার ঘোষণার অর্থ বুঝতে আমি ভারতীয় আমেরিকান এবং রাজনীতি সম্পর্কে চেনা সেরা উৎসের দিকে ফিরেছি। আসলে তিনি বুঝিয়েছেন ভারতীয় আমেরিকান এবং রাজনীতি সম্পর্কে বুঝতে চেষ্টা করছেন।
হানিফফা ছিলেন ইন্ডিয়া অ্যাবরোড নামের একটি গণমাধ্যমে নির্বাহী সম্পাদক এবং প্রধান সংবাদদাতা। সংবাদপত্রটি কয়েকদিন আগেই বিজ্ঞাপন ও কভিড-১৯ -এর কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি ২০০৯ সালের ২৬ আগস্ট কমলা হ্যারিসের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সিএনএনের এক সংবাদিককে কিছু অংশ প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েছিলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটির শিরোনাম ছিল, ‘‘কমলা দেবী হ্যারিস : দ্য ফিমেল ওবামা’ ডিসকাসস হার ক্যাম্পেইন ফর ক্যালিফর্নিয়া অ্যাটর্নি জেনারেল।’’
ওই সাক্ষাৎকারে তাঁর ভারতীয় পরিচয়ের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। আগামী মাসগুলোতে আবার সামনে আসবে ওই বিষয়গুলো। অভিবাসী কন্যা হিসেবে হ্যারিসের উত্থান। জ্যামাইকা থেকে একজন (কমলার বাবা জ্যামাইকা থেকে আসা কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ডোনাল্ড), ভারত থেকে আসা একজন (কমলার মা শ্যামলা গোপালান ভারতীয়) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী বক্তব্য এবং নীতি নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন। সাক্ষাৎকারটি ছিল এই রকম--
আজিজ হানিফফা : সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের দিক থেকে আপনার মা আপনাকে কি লালন করতে শিখিয়েছেন?
কমলা হ্যারিস : আমার মা ভারতীয় ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত ছিলেন এবং আমাদের শিখিয়েছেন। আমি ও আমার বোন মায়াকে সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব করতে শিখিয়েছেন। আমরা প্রতি কয়েক বছর অন্তর ভারতে ফিরে যেতাম। মা ছাড়াও আমার জীবনের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন হলেন আমার মাতামহ পি ভি গোপালন। তিনি আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিবের পদমর্যাদার সমান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী যোদ্ধাদের একজন। তিনি যখন বেসান্ত নগরে (তখন মাদ্রাজ বলা হতো) বাস করতেন তখন তাঁকে নিয়ে আমার কিছু স্মৃতি মনে পড়ে। আমার মাতামহ অবসর গ্রহণের পর প্রায় তার সঙ্গে সৈকতে হাঁটতে যেতাম।
তিনি প্রতিদিন সকালে সৈকতে হাঁটতেন যেতেন তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে। তাঁরা সবাই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁরা রাজনীতি নিয়ে কথা বলতেন, কিভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে এবং ন্যায়বিচার নিয়েও তাঁরা কথা বলতেন। তাঁরা হাসবেন, মতামত দেবেন, তর্ক করবেন তাদের কাজের চেয়েও বেশি, দায়িত্বশীল হতে শেখার ক্ষেত্রে আমার ওপর শক্তিশালী প্রভাব ছিল এগুলোর। সৎ হতে এবং সততা নিয়ে বেঁচে থাকতেও এগুলোর প্রভাব ছিল। যখন আমরা এটা নিয়ে চিন্তা করি, ভারত বিশ্বের প্রাচীনতম গণতন্ত্র-- এটা আমার অংশ; তখন কোনো প্রশ্ন ছাড়াই আমি আজ কি করি এবং আমি কে, এটার ওপর বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে।
আজিজ হানিফফা : এটা কি সত্যি যে আপনার নাগরিক অধিকার কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল আপনার মাতামহের সাথে সমুদ্র সৈকতে হাঁটার মাধ্যমে, যতটা আপনার বাবা-মা ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র জীবনে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনে জড়িত ছিলেন?
কমলা হ্যারিস : একটি বিষয়কে বাদ দিয়ে অন্য একটা বিষয় নিয়ে কথা না বলা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমি এটা করার প্রয়োজন অনুভব করি না। আমি কে ও বড় হওয়ার পর যে প্রভাব ফেলেছে তার দিক থেকে তারা আমার কাছে সমান। আমার দাদু-দিদিমা সব সময় বার্কলেতে আমাদের সাথে দেখা করতেন। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সাথে জড়িত সকল শ্রেণির মানুষের সাথে কাটানো সময়গুলো সবসময় উপভোগ করেছেন তাঁরা। আমি বিশ্বাস করি যে বিশ্বভ্রমণ এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি জানার একটি সুবিধা হচ্ছে, আপনি সত্যিই বুঝতে পারবেন এবং খুব পরিষ্কারভাবে দেখবেন যে মানুষ যে ভাষায় কথা বলুন না কেন, তার মধ্যে পার্থক্যের চেয়ে অনেক বেশি মিল আছে।
আজিজ হানিফফা : ববি জিন্দালের মতো কিছু ভারতীয়-আমেরিকান রাজনীতিবিদ সম্প্রদায়ের সমর্থন লাভ করে নির্বাচনী প্রচারণায় জয়লাভের পর ভারতীয়-আমেরিকান ঐতিহ্য থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে চান। জাতিগত ফ্যাক্টর কিভাবে কাজ করে, সে বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি?
কমলা হ্যারিস : আমি কে, আমার পরিবার আমার জীবনে যে প্রভাব বিস্তার করেছে, আমার সম্প্রদায় আমার জীবনে যে প্রভাব বিস্তার করেছে এবং একইভাবে আমার মেন্টর, সহকর্মী এবং বন্ধুদের প্রভাব নিয়ে আমি গর্বিত। বিষয়টি এমন নয় যে, একটি গ্রহণ করে অন্যটি বাদ দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বিষয়টি জাতিগত বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। প্লেট-কাঁচের জানালা দিয়ে সমস্যা দেখা বন্ধ করতে হবে; বিষটি যেন একমাত্রিক। এর পরিবর্তে আমাদের দেখতে হবে যে বেশীরভাগ মানুষ একটি প্রিজমের মাধ্যমে বিদ্যমান। তারা অনেক বিষয়ের সমষ্টি।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.