অসমের নির্য্যতিত বাঙলীরা কি ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবস প্রানভরে উদযাপন করতে পারবে ?
অমল গুপ্ত,গুয়াহাটি,
আজ দেশ জুড়ে ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হচ্ছে, অপর দিকে অসমের ।লাখ লাখ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাংলাভাষী মানুষ ভিটে মাটি হারাবার ভয়ে অশেষ যন্ত্রনা ভোগ করছেন। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি রূপায়ন করার নামে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকার , সুপ্রিমকোর্ট অসমের সংখ্যালঘু মানুষ গুলো কে সুবিচার দেওয়ার নামে গত চার বছর যে ভাবে হয়রানি করছে, হেনস্থা করেছে তার তুলনা মেলা ভার। দেরহাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ৫০ হাজার কর্মচারী শুদ্ধ এন আর সি রূপায়ণ করার নামে ইচ্ছাকৃতভাবে লাখ লাখ ভুল নথি তৈরি করে যে ভাবে হেনস্থা করেছে, মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে, জেলের নামে তথাকথিত ডিটেনশন ক্যাম্পে ভরে , ভারতীয় নাগরিক কে ডি ভোটার বানিয়ে, যে অত্যাচার কংগ্রেস বিজেপি সরকার করে আসছে , তা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। এন আর সি করার নামে চূড়ান্ত প্রহসন, ১৯ লাখ মানুষ কে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হল, ৯০ শতাংশ বাংলাভাষী, তারা জীবন জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, সব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। ঐতিহাসিক অসম চুক্তিকে নস্যাৎ করে ১৯৭১ সালের বদলে ১৯৫১ সালকে ভিত্তি বছর করে ৬ নম্বর ধারা রূপায়ন কমিটি দুই ধরণের নাগরিক সৃষ্টি করার পরামর্শ দিয়েছে।আর দেশ বিভাজনের বলি হয়ে সর্বশান্ত হয়ে,মান সম্মান খুঁইয়ে লাখ লাখ বাঙলি হিন্দু অসম , পশ্চিমবঙ্গ , সহ উত্তপূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চলে আজও হ্যা আজও অস্থায়ী টিন বাঁশের ঘরে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন, দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে তাদের অবস্থান, ডান বাম সব সরকার ,কংগ্রেস ,তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি সব সমান রাজনৈতিক মুনাফা লাভের লক্ষ্যে ভোটের সময় তাদের ব্যবহার করা হয়। অসমে ১৯৫১ সালের আগে যারা এসেছেন তাদের ভূমির অধিকার সহ সব অধিকার দেওয়া হবে,১৯৭১ সালের আগে আসাদের শুধুই ভোটের অধিকার ,দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে এই রাজ্যে থাকার অধিকারটুকু থাকবে,আর আর প্রায় ৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালের পর হারা এসেছে তাদের কি হবে? ৬ নম্বর ধারা রূপায়ণ কমিটির সুপারিশ সেই সব মানুষ গুলোকে অসমের বাইরের রাজ্যে আপাতত রেখে পরে বাংলাদেশে পাঠিযে দেওয়া যাবে, সেই কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যপন চুক্তি করার দাবি জানানো হয়েছে। ৫০ বছর বাস করার পর তাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়ানো হবে,আর ১৯৭১ সালের আগে আসাদের কোন কোনো অধিকার থাকবে না। রাজনীতিতে অংশ গ্রহন করতে পারবে না, শুধু ভোট টা দিতে পারবে। এএক চূড়ান্ত অমানবিকতা,চূড়ান্ত প্রহসন, ভোট আদায় করে ডাস্ট বীনে ছুড়ে ফেলে হবে, এই হতভাগ্য মানুষগুলো কি স্বাধীন তা দিবস প্রাণ ভরে উদযাপন করতে পারবে ? নেহরু লিয়াকত চুক্তি, মুজিব ইন্দিরা সমঝোতা চুক্তি, রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশন, উদ্বাস্তু দের প্রতি কেন্দ্রীয় নেতাদের গাল ভরা আশ্বাসের কথা সবাই ভুলে গেল ? তাদের একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বিজেপি র কেন্দ্রীয় নেতা প্রাক্তন উপ প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানি ২০০৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল 2003 বিল পেশ করে বলেছিলেন ধর্মীয় কারণে যারা দেশ ত্যাগ করবে তারা উদ্বাস্তু, খাঁটি উদ্বাস্তু, তাদের প্রতি সরকারের দায়িত্ব আছে।তবে অর্থনৈতিক কারণে যারা দেশ ত্যাগ করবে তাদের কে বেআইনি অনুপ্রেবশকারী হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে। শ্রীমতি নাজমা হেপতুল্লার পৌরহিত্যে অনুষ্ঠিত রাজ্যসভার অধিবেশনে প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী যিনি দু দু বার অসমের প্রতিনিধিত্ব করে ছিলেন সেই মনমোহন সিংহ কি বলে ছিলেন? শুনবেন ? তিনি বলেছিলেন ,আমাদের দেশ ভাগ হওয়ার পর বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্য্যতিত হচ্ছে, বাধ্য হয়ে এদেশে আসতে বাধ্য হচ্ছে, সেই হতভাগ্য মানুষগুলোকে ভারতে নাগরিকত্বের ব্যবস্থা করতে হবে। জবাবে আদবানি তখন বিরোধী দল নেতা মনমোহন সিংহ কে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন , আপনার প্রস্তাব সম্পূর্ণ ভাবে সমর্থন করছি। আজ সেই আদবানির দল, সেই মনমোহন সিংহ র দল কি হতভাগ্য বাঙলি উদ্বাস্তু দের প্রতি দায়িত্ব পালন করছেন ?
কোন মন্তব্য নেই