Header Ads

পূর্বোত্তরের বইপত্রের আন্তর্জাল ঠিকানা কাঠের নৌকা পার করল একটি দশক


নয়া ঠাহর প্রতিবেদন, তিনসুকিয়া ঃ ঠিক আজকের দিনে যাত্রা শুরু করেছিল 'কাঠের নৌকা' ১০ বছর আগে। আন্তর্জালে একেবারেই আনাড়ি কবি বিজয় ভট্টাচার্যের বইটি কীভাবে সংগ্রহ হয়েছিল ভুলে গেছি। তখনো ঈশানের পুঞ্জমেঘ নেই। ফেসবুকে লোকজনের ভিড় কম। বাংলা প্রায় কেউ লিখছেন না গোটা ভারতেই। পূর্বোত্তরে মাত্র তিনজন। সুশান্ত কর,  , শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার, সপ্তর্ষি বিশ্বাস।.বাংলাদেশে এমন প্রচুর বই পত্রের সংগ্রহ এসে গেছে। সমবায়ী ব্লগ প্রচুর। ভারতে কফি হাউসের আড্ডা, গুরুচন্ডালী আছে। গুরুচণ্ডালী পত্রিকা নির্ভর। ফলে সমবায়ী স্বভাবটি সেরকম ছিল না। আমরা কফি হাউসের আড্ডা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু সেটি নিজেও নানা কারণে অস্তিত্বের সংকটে ভুগছিল। বড় সমস্যাই এই ছিল যে ভারতের লোকজনে বাংলা লিখছেন না। একই সমস্যা অসমিয়াতেও ছিল। ফলে একদিকে সারা ভারতে বাংলা, ও অসমে অসমিয়ার প্রচারে প্রসারেই ছিল আমাদের মন। তাঁদের অনেকেই অসম তথা পূর্বোত্তরের লেখক ও লেখার সংবাদ জানতে চাইছিলেন। সেখান থেকেই আমরা কাঠের নৌকার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু আশানুরূপ পিডিএফ পাচ্ছিলাম না। এখনো সেরকম পাই কই? বুঝতে পারছিলাম, প্রযুক্তি নিয়ে লেখক, সম্পাদক, মুদ্রকদের অজ্ঞতা পাহাড় প্রমাণ। তায় আমাদের লেখকরা পাঠকের কথা ভাবছিলেন কম। বললেই, বলতেন---আমি ভাই শুয়ে বসে বই পড়তে ভালোবাসি। অথচ, কথাটি তো তাঁর বা তাঁদের পড়বার না। পাঠকের পড়বার। ফলে আমরা ক্রমেই ঈশানের পুঞ্জমেঘের কথা ভাবতে শুরু করি। সেটি আসে পরে। তেরো মাস পরে ভূপেন হাজরিকার মৃত্যুর পরে চন্দ্রানী পুরকায়স্থের তাঁর স্মরণে একটি কবিতা দিয়ে। হ্যা, শুরুর দিকে আমাদের সহযাত্রী ছিলেন চন্দ্রানী, শৈলেন দাস, স্বাগত চৌধুরী, সপ্তর্ষি বিশ্বাস,  শতদল আচার্য,অমিতাভ দেব চৌধুরী , পঙ্কজ ভট্টাচার্য, নন্দিতা ভট্টাচার্য, মৃন্ময় দেব, জাকির হুসেইন  প্রমুখ... কেউ কেউ শুরুর দিকে এডমিন ছিলেন। এখন নেই। কেউ কেউ সদস্য হয়েও নেই।  কবি গল্পকারেরা নিজেদের লেখা বাংলাতে ছড়াতে বেশি আকর্ষিত হবেন এটি খুব স্বাভাবিক ছিল। ফলে একটি ভ্রম দেখা দিয়েছিল, যেন আমরা কেবল সাহিত্যের জন্যে কাজ করছিলাম। ভ্রমটির আরেকটি বড় কারণ ছিল, আমরাই বহু কষ্টে শিলচরের একটি পত্রিকার সম্পাদককে বাংলা লেখা শিখিয়েছিলাম। তাঁর সুগভীর বিশ্বাস ছিল আন্তর্জালে বাংলা ভালো লেখা যায় না। সেই বিশ্বাস যখন আমরা ভেঙে দিই, তিনি তাঁর পত্রিকার নামে গোষ্ঠী খুলে ফেসবুকে বেশ সফল আসর জমালেন। কিন্তু আমাদের যে গভীর ভাবনা---গোটা পূর্বোত্তরের মানুষজনের মধ্যে বাংলা ছড়ানো এবং সামাজিক মাধ্যমের বাইরে ব্লগে নিয়ে আসা---পূর্বোত্তরের বাইরের মানুষের মধ্যে, এবং পূর্বোত্তরেও প্রতিবেশি সমাজে আমাদের ভাষা ও সাহিত্যকে মর্যাদার আসনে দাঁড় করানো , সেটি হচ্ছিল না। কাঠের নৌকারও সুবিধে হচ্ছিল না, ফলে আমরা পরে ঈশানের পুঞ্জমেঘ গোষ্ঠী করি। এখন এই দশ বছর পরে আমাদের প্রাপ্তির ঘরে বহু কিছুই সঞ্চিত হয়েছে। অনেকেই বলেন, বাংলা লেখাটি তাঁরা রপ্ত করেছেন ঈশানের জন্যে। আমরা যদিও মনে করি---তাতে সামাজিক মাধ্যম এবং স্মার্টফোনের একটি বড় ভূমিকা গেল চার পাঁচ বছর ধরে রয়েছে। দেখাদেখি লোকে দ্রুত আয়ত্ব করে ফেলেছেন। কিন্তু এই ফেসবুকে হোয়াটসএপেই আটকে থেকে গেছেন---কেননা এর বাইরে এখনো অধিকাংশ আন্তর্জাল সম্পর্কে ভাবতে নারাজ। তবু সুখের কথা এখন প্রচুর গোষ্ঠীতে প্রচুর লোকে বাংলা লিখছেন, পড়ছেন, বলছেন। খুব কম হলেও আমরা যা চাইছিলাম, অনেকেই ওয়েব ম্যাগাজিন নিয়েও আসছেন। তাতে করে কাঠের নৌকা বা ঈশানকেও তারা আর পাঁচটি নিজেদের গোষ্ঠীর মতো গোষ্ঠী বলে ভেবে নিয়েছেন। যদিও সত্য হলো ঈশান বা কাঠের নৌকা উইকিপেডীয়ারই মতো একটি মুক্ত মঞ্চ। পূর্বোত্তরের সবার জন্যে খোলা। এই গোষ্ঠী মানসিকতার জন্যে অনেকেই কাঠের নৌকা নিয়েও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে রাজি নন। অথচ, পূর্বোত্তরে এখনো এমন একটি দ্বিতীয় মঞ্চের কথাও কেউ ভাবেন নি। বাকি ভারতীয় ভাষাতে এবং পশ্চিম বাংলা বাংলাদেশে আপনারা জানেনই--- ঘরের খেয়ে কতয় বনের মোষ তাড়িয়ে বই পত্রের বিশাল সংগ্রহ গড়ে তুলেছেন। আন্তর্জাতিক স্তরে সেরকম একটি মঞ্চ আছে আর্কাইভ ডট অর্গ। দেখে আসবেন কখনো। দুনিয়ার প্রায় সব দেশের ধ্রূপদী বই পত্রের সংগ্রহ রয়েছে। আজকাল দুনিয়া জুড়েই বৈদ্যুতিন বই পত্রের বাজার এতো বিশাল যে আমাজনে ফ্লিপকার্টে দেখবেন কিণ্ডাল সংস্করণও বিক্রি করে থাকে। আমাদের প্রকাশকেরা আমাজনেও যেতে পারেন না, বই বাজারেও ভালো পৌঁছুতে পারেন না। অথচ কাঠের নৌকার মতো শিবির বিহীন পূর্বোত্তরীয় মঞ্চ নিয়েও আগ্রহ দেখান না। দেখালে এই দশ বছরে আমাদের সংগ্রহে হাজার দেড়েক বই পত্রিকা আসতেই পারত। আসে নি। এসেছে মাত্র শ'দুয়েক। পোষ্ট হিসেবে দেখায় ১৪৭টি । তার কারণ সেলিম মুস্তফা সম্পাদিত 'পাখি সব করে রব' পত্রিকাটির একাধিক সংস্করণ কখনো আমরা এক সঙ্গে তুলেছিল। পত্রিকাটির প্রথম কয়েকটি সংখ্যা বাদে প্রায় সব সংস্করণ কাঠের নৌকাতে রয়েছে। রয়েছে অপর্ণা দেব সম্পাদিত 'সেবা' কাগজের বেশ কিছু সংখ্যা। রয়েছে তপোজ্যোতি ভট্টাচার্য সম্পাদিত সন্দীপন দত্ত পুরকায়স্থ প্রকাশিত আর্ট ইকোর একাধিক সংখ্যা। সপ্তর্ষি বিশ্বাসের একটি কবিতার বই-ও প্রথম প্রকাশিত হয় কাঠের নৌকাতে। সেরকম সুশান্ত কর অনূদিত হেমাঙ্গ দত্তের কবিতার বই প্রকাশ পেল এই সেদিন। মলয় কান্তি দে'র গল্প সংকলন 'আত্মপরিচয়ে'র দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল কাঠের নৌকাতে। অচিরেই বাসুদেব দাশ অনূদিত পঙ্কজ ঠাকুরের একটি বই-ও প্রকাশিত হবে। শান্তনু গঙ্গারিড়ি সম্পাদিত উনিশে মে কাগজ যুগপৎ অফলাইনে এবং অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৯শে। অনলাইন প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছিল কাঠের নৌকা। কাগজটির বেশ কিছু সংখ্যা এখানে আছে। আছে রাজীব কর সম্পাদিত বর্ণমালার রোদ্দূরের প্রায় সব কটি সংখ্যা। আছে স্রোত, উন্মেশ, মুখাবয়ব, সাহিত্য, মহাবাহুর কিছু সংখ্যা। আছে অঞ্জলি লাহিড়ির   উপন্যাস বিলোরিশ। সে এক দীর্গ তালিকা। আপনারা দেখে নেবেন। এই দশবছরে আপনাদে কাছে আমাদের আবেদন, কাঠের নৌকার যাত্রাকে সফল করতে গোষ্ঠী চিন্তার বাইরে আসুন, আপনার বই, আপনার সম্পাদিত বই, আপনার মুদ্রিত বই-র পিডিএফ পাঠান, বন্ধুদের পাঠাতে বলুন। কাঠের নৌকার প্রচারে হাত মেলান। এই যাত্রাকে করে তুলুন সমবায়ী যাত্রা। দশের লাঠি একের বোঝা জানেনই... অনেকতো আড্ডা দেন ফেসবুকে হোয়াটস এপে। বন্ধুরা জানতেও চান এই বই, ঐ পত্রিকা কোথায় পড়তে পাব? কেমন লাগবে, যদি আপনি সহজেই জবাব দিতে পারেন, 'কাঠের নৌকা'তে? আপনাদের অভিমত জানবার জন্যে এই পোষ্ট দিন দুই এনাউন্স হয়ে উপরে থাকছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.