করোনাকালে ভার্চুয়াল দুর্গাপুজো
কেমন হবে করোনাকালের এবছরের ভার্চুয়াল দুর্গাপুজো? আর মাত্র কিছুদিন বাকী বাঙালির প্রাণের উৎসব
দুর্গাপুজো। সবার মনে একটাই চিন্তা ২০২০ সালের পুজো কিরকমভাবে উদযাপিত হবে।
পরিবারের সবাইকে সুস্থভাবে সঙ্গে নিয়ে কাটাতে পারবো তো। নতুন জামা-কাপড় চাই না।
চাই সবাই সুস্থ থাকুক করোনার সংক্রমণ থেকে।
'মা' তো অন্তরযামী,
তিনি হয়তো আগে থেকেই টের
পেয়েছিলেন। তাই এবছর সবকিছু ধীরে সুস্থে করার জন্যই হয়তো মহালয়ার প্রায় একমাস পর
আরম্ভ হবে দুর্গাপুজো। পুজো কমিটির সদস্যরাও হাতে পাবেন অনেক দিন সময়। সেই সময়কে
কাজে লাগিয়ে নানা প্রযুক্তির মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে হয়তো তুলে ধরতে পারেন চিলতে
আনন্দ।
এতদিন শুনে এসেছি বিদেশের উইকত্রঙেরূ দুর্গাপুজো। এবার আমরাও সামিল হতে চলেছি
ওই ধরনের ঐতিহাসিক দুর্গাপুজোর। এবারের পুজো কমিটিগুলিও পুজোর চাঁদা তোলার বদলে
পাড়ার সকলের মোবাইল নাম্বার জোগাড় করবেন যাতে নিজের পাড়ার পুজোটা অন্তত
প্রতিবেশীরা একসঙ্গে "গুগল মিটে" এনজয় করতে পারেন। এছাড়াও ফেসবুক লাইভ
তো রয়েছেই। সেখানেই আমরা একত্রিত হবো এবছরের পুজোর কলাবৌ স্নান করোনা দেখা থেকে
শুরু করে অষ্টমীর সন্ধিপুজোতে। চিত্রটা অনেকটা এরকম হতে পারে।
অষ্টমীর সকালে বাড়ির মেয়ে গিন্নীকে সঙ্গে নিয়ে কর্ত্তামশাই পুষ্পাঞ্জলী
সেখানেই সেরে ফেলবেন। তারপরেই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির কর্ত্তা হয়ে উঠবেন ফেমাস
ফটোগ্রাফার। নানা ভঙ্গীমায় তুলতে থাকবেন পরিবারের সকলের ফটো। তারপর কত তাড়াতাড়ি সেগুলো
ছেড়ে দেওয়া যায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম। সারা দুপুর ধরে বইতে থাকবে লাইক আর কমেন্টের
বন্যা। তার মাঝে ভোজন রসিক বাঙালি কিন্তু সেখানে খামতি রাখবেন না, গিন্নী মা আগে
থেকেই পুজোর স্পেশাল রেসিপি শিখে নিয়েছেন ইউটিউব থেকে। সেইগুলোরই চটপট
এক্সপিরিমেন্ট করবেন পুজোর দিনগুলোতে।
সোশ্যাল ডিস্টান্স মেনটেন, নো গ্যাদারিঙের চক্করে এবারে পুজোতে তো ঠাকুর দেখতে
যাওয়ার কোনো ইস্যু থাকছে না, তাই ধীরে সুস্থে নতুন শাড়ি পড়ে একটু সেজে নিয়ে দুটো
ফটো তুলে সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইডে লাগিয়ে দিলেই তো কেটে গেল পুজোর একদিনের
সন্ধ্যে। বাড়ির অষ্টাদর্শীদের পুজোর সাজাগোজের উৎসাহ দিতে থাকছে নানান গ্রুপের
সেলফি প্রতিযোগিতা। এই সুযোগে একদল মানুষ হয়তো ‘গুগল পে’র মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবে কিছু টাকা। কারণ,
প্রতিযোগিতা একটা ফটো পাঠালেই লাগবে ১০০ টাকা। বাঙালির প্রাণের
উত্সব দুর্গাপুজোতে এহেন ১০০ টাকা খরচ করা কোনো ব্যাপারই নয়। কিন্তু, কি হবে সেই
ফুচকা বিক্রেতার। সারা বছর যো তাকিয়ে থাকে পুজোর সময় ওই নামী দামি প্যান্ডেলের
সামনে ফুচকার স্টল লাগালে রোজগারটা একটু বেশী হবে। এবছরে তো করোনা মহামারী খেটে
খাওয়া মানুষগুলোর রোজগারের পথ একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে। কি হবে যে বেলুন বিক্রি
করে বাচ্চাদের মুখ হাসিতে ভরিয়ে দিত। এবছর পুজোয় ওর বাচ্চাটা নতুন জামা একটা পড়তে
পারবে তো? এবার পুজোর তো ওদের আর দেখতে পাবো না যারা
পাড়ায় পাড়ায় স্টল দিত বন্দুক দিয়ে ছোট ছোট বেলুন ফাটানোর। দূর দূর থেকে ওরা এই
পুজোর সময় ব্যবসা করতে আসতো। জানি না, এবার পুজোয় ওদের কি হবে? বিগ বাজেটের পুজো কমিটিগুলো জানিয়েছে, এবারে তাদের বাজেটের কাটছাট করে
অনেকটাই টাকা তুলে দিচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মধ্যে। সমাজের কল্যাণের কাজে,
তাদের কাছে সামান্য অনুরোধ পুজোর সঙ্গে যে মানুষগুলো পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন এদের
কথাও মনে রাখবেন।
করোনা মহামারী যতই আমাদের চোখ রাঙিয়ে ভয় দেখাক না কেন, সাধারণ মধ্যবিত্ত
কিন্তু পুজোর প্রস্তুতিতে খামতি রাখছেন না। মহিলারা এখন থেকেই অনবরত দেখে চলেছে
নানান বুটিকের লাইভ শো-গুলি। কোথায় এক্সক্লুসিভ শাড়ি, পোষাকে ডিসকাউন্ট পাওয়া
যাবে, তার সঙ্গে হোমমেড জুয়েলারি ও ম্যাচিং করে অনলাইনে কেনা শুরু করে ফেলেছেন।
এবার পুজোয় নতুন ড্রেসের সঙ্গে চাই ম্যাচিং মাক্সও। সোশাল মিডিয়াতে নিত্যনতুন থিমসও
দেখছি, কোথাও ট্যাগলাইন এবার পুজোর দশমী হোক সাদা মাস্ক লাল পাড়ে মোড়া। কোথাও
দেখি ফেস শিল্ড লাগিয়ে দুর্গামণ্ডপের সামনে সেলফি উঠাচ্ছেন। মানুষ আশায় বাঁচে।
বাড়িতে থেকে সুরক্ষিতভাবে যদি একটু আনন্দে সামিল না হন, জীবন যে তাহলে ভীষণ বেরঙীন
হয়ে উঠবে। আসুন না এভাবেই এবছরের পুজোতে নানানভাবে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে
ভার্চুয়াল পুজো এনজয় করি সবাই।
Khub sundor bhabe lekha hoyche👌
উত্তরমুছুন