শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তাররা ভগবান, কোভিড যুদ্ধের নায়কদের তুলনা নেই : বিধান সভার উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি :
১৯৫৯ সালে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চলিয়া, অর্থমন্ত্রী ফকরুদ্দিন আলী আহমেদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুপম ব্রহ্ম সিদ্ধান্ত
নিয়েছিলেন ডিব্রুগড়ে মেডিক্যাল কলেজ এবং অনগ্রসর দক্ষিণ অসমের শিলচর শহরে একটি মেডিক্যাল
কলেজ স্থাপন করার, সেই সিদ্বান্ত অনুযায়ী ১৯৬৮ সালের ১৫ আগস্ট শিলচর
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম অধ্যক্ষ ডাক্তার রুদ্র গোস্বামী
মাত্র ৫০ জন এমবিবিএস ছাত্র নিয়ে হাসপাতালের সূচনা করেছিলেন। অর্ধশত বছর অতিক্রান্ত মেডিক্যাল
কলেজ ও হাসপাতালের প্রতি দিসপুরের কৃপা দৃষ্টি নেই বললেই চলে। আজ তিন দশকের বেশি
সময় বিধানসভা কভার করছি, প্রায় প্রতি অধিবেশনে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে
ডাক্তারদের শূন্য পদ, অত্যাধুনিক মেশিনের
অভাব প্রভৃতি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়ে আসছে আর সরকারের বাধা ধরা জবাব শুনে আসছি,
কি কংগ্ৰস, কি অগপ, কি বিজেপি সব
সমান। তবে পরিকাঠামো নিয়ে, শূন্য পদ নিয়ে নানা সমস্যা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু
ডাক্তারদের কর্তব্য নিষ্ঠার কোনো অভাব ঘটেনি। রুগীদের প্রতি অবহেলা
করার অভিযোগ শোনা যায়নি। অসম বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আমিনুল হক লস্কর কোভিড
সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। প্লাজমা থেরাপি দিয়ে তাকে সুস্থ করা হয়। মহিলা
সভানেত্রী সুস্মিতা দেবও কোরোনা আক্রান্ত হয়ে ভত্তি হয়েছিলেন। ডেপুটি স্পিকার আমিনুল হক লস্কর আজ তার
চিকিৎসার ব্যাপারে নিয়োজিত ডাক্তারদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, অধ্যক্ষ বাবুল বেজ বড়ুয়া, হাসপাতাল সুপার অভিজিৎ স্বামী প্রমুখ ডাক্তাররা
রাতদিন পরিশ্রম করে কোভিড রুগীদের সেবা করছেন। অধ্যক্ষ বেজ বড়ুয়া ১৮ থেকে ১৯ ঘন্টা কাজ করে করোনার
আক্রান্তদের সুস্থ করে বাড়ি পাঠাচ্ছেন। সব ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, স্বাস্থ্য
কর্মীরা প্রাণ ঢেলে রুগীদের সেবা করছেন। এই কোভিড যোদ্ধারা তো ভগবান। অথচ দুর্ভাগ্যের কথা,
এত করার পরও ডাক্তারদের বদনাম করা হচ্ছে। তিনি বলেন,
কোভিড লক্ষণ ধরা পড়া
সত্ত্বেও হাসপাতালে না পাঠিয়ে গুরুতর রুগীকে শেষ অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই রোগীকে বাঁচানো যাচ্ছে না। দাবি
করেন কাছাড়ে সুস্থতার হার বেশি, তবে মানুষের সচেতনার বড় অভাব। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে না। জানান শিলচর
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৪০০ কোভিড বেড আছে। আই সি ইউ আছে ১৯টি। এক সপ্তাহের মধ্যে
আরও ৪০টি আই সি ইউ বেড করা হবে। ১২০০-র বেশি কোভিড রুগীর চিকিৎসা চলছে। ত্রিপুরা, মিজোরাম প্রভৃতি
রাজ্য থেকে রোগীরা আসছেন। প্রতিদিন রুগীর চাপের
মধ্যেও ডাক্তার ডি জি পাঠক, ডাক্তার ইসমাতারা
বেগম, ডাক্তার সুনিতা দত্ত,
ডাক্তার অভিজিৎ দাস,
ডাক্তার দীপান্বিতা সূত্রধর,
ডাক্তার রূপঙ্কর নাথ,
ডাক্তার অরিন্দম
ভট্টাচার্য, ডাক্তার রানাধী
পল, ডাক্তার পূজা চৌবে,
ডাক্তার আহমেদ খুদ,
ডাক্তার অন্বেষা ঘোষ প্রমুখ
ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়, স্বাস্থ্য কর্মীরা কোভিড যুদ্ধে দিনরাত লড়ে
যাচ্ছেন। শিলচরের সাংসদ ডাক্তার রাজদ্বীপ রায় বলেছেন, ভালো কাজ করা সত্ত্বেও শিলচর
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বরাকের বিরুদ্ধে দিসপুরের
বঞ্চনা অবহেলার নানা প্রসঙ্গ তুলে আকসার প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ দত্ত রায় বরাবর
সোচ্চার, তার সব অভিযোগ
উড়িয়ে দেওয়া যায় না । তিনি আজ শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে আঙ্গুল
তুলে বলেন, এই হাসপাতালের
পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মন্ত্রী পরিমল শুক্ল বৈদ্য। ভাইস চেয়ারম্যান সাংসদ রাজদ্বীপ রায় থাকা
সত্বেও এই হাসপাতালে কার্ডিওলজি, নিওরিলজি বিভাগে
ডাক্তার নেই কেন? ৫০ বছর পার হয়ে যাওয়া এই হাসপাতালে অর্ধেক
ডাক্তারের পদ খালি কেন? ৪ থেকে ৬ জন ডাক্তার গুয়াহাটি বা ডিব্রুগড়ে থেকে বেতন
তুলছেন কেন? কোভিড চিকিৎসার
নামে সিন্ডিকেট চলছে। এমন সব গুরুতর অভিযোগ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব
শর্মার কানেও গিয়েছে বলে খবর আছে। আবার বলছি দিসপুরের অবহেলা বঞ্চনা কিন্তু শেষ
হবার নয়, কারণ বরাকের নেতা-মন্ত্রীদের
যোগ্যতা নিয়ে দিসপুর প্রশ্ন তুলেছে। বরাকের জটিল কোনো সমস্যা নিয়ে বরাকের ১৫ জন বিধায়ক ও
দুজন সাংসদকে কোনোদিন একজোট হতে দেখেনি। ঐক্যবদ্ধ সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ কোথায়?
কোন মন্তব্য নেই