Header Ads

বন্যা প্লাবিত কাজিরঙাতে মন্ত্রীর কনভয় আটকালো অভুক্ত, নিরাশ্রয় গন্ডার, নিরাপত্তা রক্ষীর গুলি

অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : এক খড়্গ বিশিষ্ট বিপন্ন প্রজাতির গন্ডারের আবাসভূমি অসমের কাজিরঙা রাষ্ট্ৰীয় উদ্যান পরিদর্শনে সারা বিশ্বের পর্যটকরা আসেন। দিসপুরকে না চিনলেও কাজিরঙাকে চেনেন। সেই বিপন্ন প্রজাতি গন্ডার রক্ষা করতে বিগত সরকার চরম ব‍্যর্থ হয়েছিল। বর্তমান বিজেপি সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কাজিরঙা প্রতিবছরের মত এবারও ব্রহ্মপুত্র নদের প্লাবনে প্রায় ৮০ শতাংশ ডুবে গেছে। জলমগ্ন কাজিরঙায় খাদ্য ও বাসস্থানের তাগিদে প্রাণিকুল প্রাণভয়ে ছুটাছুটি করছে। এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, কৃষিমন্ত্রী অতুল বরা ও সাংসদ কামাখ্যা প্রাসাদ তাসা কনভয় ছুটিয়ে মিহিমুখ কোহরা রেঞ্জের বন পথে যাওয়ার সময় এক প্রকান্ড গন্ডার বন পথের দুধারের প্লাবন থেকে বাঁচার জন্য বন পথে  আশ্রয় নিয়েছিল, তাকে হটিয়ে শান্তি ভঙ্গকারী ভনভয়ের রাস্তা ক্লিয়ার করার জন্য নিরাপত্তা কর্মীকে কয়েক রাউন্ড শূন্যে গুলি ছুঁড়তে হয়। তারপর গন্ডারটি নিরাপত্তা কর্মীকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। অভুক্ত, নিরাশ্রয় অসহায় গন্ডারটিকে, টিভির পর্দায় তা স্পষ্ট দেখা যায়। এই 
ঘটনায় রাজ্যের প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠনগুলো তীব্র নিন্দা করেছে। বন্যপ্রাণীর এই দুরবস্থার সময় বনের গভীরে কেন বন্যাদুর্গত প্রাণীদের শান্তি ভঙ্গ করে মন্ত্রীর কনভয় প্রবেশের অনুমতি  দেওয়া হল? মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালও দু'দিন আগে কাজিরঙা গিয়েছিলেন। কিন্তু কোর এরিয়াতে কনভয় নিয়ে যাননি। অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার এই সফরের জন্য টুইট করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা উজান থেকে ফেরার পথে আজ সকালে কাজিরঙার বন্যাদুর্গত অঞ্চলে স্পিডবোটে ঘোরেন পরে জীপ সাফারি করার পথে বন্যাপীড়িত গন্ডারের বাধা পান। চলিত বন্যায় কাজিরঙাতে সরকারিভাবে ১১ টি গন্ডার মারা গেছে বলে বন বিভাগ দাবি করেছে। ৪ টি বুনো মোষ, ৭ টি বুনো  শুকর, দুটি সজারু, ১টি অজগর সাপ সহ বিভিন্ন প্রজাতির ৯০ টি হরিণ মারা গেছে। ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ি চাপা পড়ে ১৬ টি হরিণ মারা গেছে। প্রায় ১৫০ টি বন্য জন্তুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে বন বিভাগ দাবি করলেও প্রকৃত সংখ্যা বহু বেশি বলে বিভিন্ন মহলের দাবি। বন বিভাগের উপবন সংরক্ষক, বন্যপ্রাণী আজ যে স্পষ্টীকরণ দিয়েছে তাতে নানা বিভ্রান্তি আছে। তিনি দাবি করেছেন, বিজেপি সরকারের নির্দিষ্ট পরিকল্পনার জন্য গন্ডার হত্যা কমেছে। আবার বলছে, ২০১৬ সালের জুন মাস থেকে ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত ৪৮৩ টি গন্ডারের প্রাণ গেছে। চোরা শিকারিদের হাতে প্রাণ গেছে ২৯ টি গন্ডারের। অন্যদিকে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৩৩২ টি গন্ডারের মৃত্যু হয়েছে এবং চোরা শিকারিদের হাতে প্রাণ গেছে ১০৬ টির। গত ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৯ সালের বন্যায় যথাক্রমে ২৭ থেকে ৪০ ও ২৫ টি গন্ডার জলে ডুবে মারা গেছে। এই বিবৃতিতে সরকার স্বীকার করেছে, তাদের আমলে চোরা শিকারির হাতে ২৯ টি গন্ডারের মৃত্যু হয়েছে। অথচ বন বিভাগ বিধানসভাতে দাবি করেছিল, তাদের আমলে গন্ডার হত্যার ঘটনা নেই। অসমের বন্যা সমস্যাকে আজও কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় বিপর্যয় বা জাতীয় সমস্যা বলে গণ্য করে আর্থিক সাহায্য করছেন না। প্রতি বছর কাজিরঙাতে বিশ্বের বিস্ময় এক খড়্গ বিশিষ্ট বিরল প্রজাতির গন্ডারের জলে ডুবে প্রাণ যাচ্ছে, এর থেকে লজ্জার আর কি হতে পারে! আজ বিবৃতিতে বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৯ সালের বন্যায় এবং এখন পর্যন্ত ১০৩টি গন্ডারের মৃত্যু হয়েছে। জলে ডুবে মৃত্যুর মধ্যে কোনো অপরাধবোধ নেই? কোনো দায়িত্ব নেই সরকারের?

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.