Header Ads

লামডিঙের বাঙালিদের গোলাপের বাগিচা শুকিয়ে যাচ্ছে, জল দেবার মানুষ কোথায়?

লামডিঙের বিখ্যাত শীতলা পুজো।

অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : জীবনের অপরাহ্নে, পিছনের সোনালী রুপালি, বিষাদ, যন্ত্রণার নানা স্মৃতি ভীড় করে। মধ্য অসমের রেল শহর লামডিংকে ভুলতে পারিনা। আমার সাংবাদিক জীবনের হাতে খড়ি এই শহর আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আবার অনেককিছু ছিনিয়েও নিয়েছে। তাতে আমার কোনো অনুশোচনা নেই। উদ্ভাবনী শক্তিতে ভরপুর লামডিঙের প্রতিভা দেশ জুড়ে সুনাম কুড়িয়েছে। আজ মারণ রোগ অতিমারী করোনা সংক্রমণের ভয়ে ঘরবন্দি,  স্মৃতি হাতড়ে লামডিংকে খুঁড়ে চলেছি। না খুঁজে চলেছি। বিষাদ ছবি নয়, শুধুই সোনালী উজ্জ্বল ছবি। আজ দেশজুড়ে লকডাউন, আর্থিক অবস্থা  জিরোতে পৌছিয়ে গেছে। মন খারাপ করা মেঘলা দিনে আলোর রোশনাই, লামডিঙের দেওয়াল পত্রিকা অস্থির গোলক, অভ্র আবির, হাতে লেখা রণজিৎ সেনগুপ্তের পত্রিকা শঙ্খ,  সৃষ্টিশীলতার আঁকর, আজকের অস্থির অনিশ্চয়তার জীবন মৃত্যু একেবারে পাশাপাশি। আর প্রায় ৪০ বছর আগে অস্থির গোলক, আজকের অস্থির সময়ের সঙ্গে কি কোনো সম্পর্ক ছিল? আশীষ চক্রবর্তী আর বিমলেন্দু রায় এই হাতে লেখা দেওয়াল পত্রিকার জন্ম দিয়েছিলেন। নিলয় নামে এক গল্প পত্রিকাও বেরিয়েছিল। মনে আছে কি ধীর স্থির পায়ে হাঁটতেন। মুখে মুচকি হাসি অবশ্যই জর্দা পানের সুবাস নিয়ে ঘুরতেন অজয় বোস। তিনি ফুল টাইমে সাংবাদিকদের মত অভ্র আবির নামে হাতে লেখা দেওয়াল পত্রিকা বার করতেন। এক খিলি পানেই সন্তষ্ট। আর আজকের সাংবাদিক! তখনকার অস্থির সময়ে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে আমি ভারতের এক ম্যাপ বানিয়ে পুরো ম্যাপে হত্যা, ধর্ষণ, খুন, দুর্ঘটনা, সুন্দর মুখের ছবির নানা পেপার কাটিং সংগ্রহ করে এক কোলাজ তৈরি করে টাইটেল দিয়েছিলাম যুব প্রজন্মের  অবক্ষয়। ৩৫ থেকে ৪০ বছর আগের অবক্ষয় আর লামডিঙের আজকের সার্বিক অবক্ষয়। কোথাও একটা সাদৃশ্য আছে যেন। মানুষের মূল্যবোধ, সততা কোথায় সব হারিয়ে গেছে। লামডিঙে নেপালি সম্প্রদায়ের মানুষ রাম প্রসাদ জোশি প্রথম বামপন্থী আন্দোলনের সূচনা করে ছিলেন। তারপর কৃষ্ণগোপাল বা মাস্টারদা। পরবর্তিতে সুনীল ধরকে পেয়েছিলাম। তার আর্দশ, মূল্যবোধ আমাদের আর্কষণ করত। আমিও বামপন্থী আন্দোলনে বিশ্বাসী ছিলাম। সভা-সমিতি শেষ করে ঘুঘু ডাকা, গনগনে রোদে ছোট্ট মানুষটি পোয়াখানিক চাল, দুটি আলু, পেয়াঁজ নিয়ে ঘরে ফিরে রান্না করে খেতেন। সেই দারিদ্রতা যন্ত্রণাময় জীবনের সঙ্গে আর এক ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলাম। করিমগঞ্জের লীলাময় দাস, ভোটে দাঁড়াতে বাড়ি বন্ধক, তারপর জনতা দলের ক্যাবিনেটমন্ত্রী সামান্য বেতন, পরিবার চলেনা। মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার পর  গুয়াহাটিতে ফুলের টব বিক্রি করতেন। আপনারা প্রশ্ন করবেন, ক্যাবিনেটমন্ত্রী ছিলেন কিছু কামাতে পারেননি? সততা, মূল্যবোধ থাকলে কামানো যায়না। আজকের মন্ত্রী বিধায়কদের সম্পত্তির পাহাড় দেখছেন? কি কংগ্রেস, কি বিজেপি; সব দলের দুর্নীতিবাজ নেতাদের মানুষ মনে রাখে না। মনে রাখবে লামডিঙের সুনীল ধরকে, বিজন দাকে, রেল আন্দোলন করে চাকরি খুঁইয়ে বিজন দা কত নেতাকে অনুরোধ করলেন, চাকরিটা আর ফিরে  পেলেন না। বড় কষ্টে জীবন কাটলো। চিফ ভিজিলেন্স কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলছে, দেশের মধ্যে রেলওয়ে বিভাগ সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত বিভাগ। লামডিঙের রেলওয়ের ডিভিশনাল অফিসের দুর্নীতি সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এই অফিসে কাজ করা অফিসার সুনীল কুমারকে ৫ কোটি ১৩ লক্ষ টাকার দুর্নীতি করার অভিযোগে সি বি আই গ্রেফতার করে। কেস নম্বর আর সি ১২,এ,১৯, লামডিঙের সঞ্জয় চক্রবর্তীর বাড়ি তল্লাশি করে সি বি আই অনেক গোপন রেকর্ড বায়েযাপ্ত করে বলে সি বি আই সূত্রে জানা গেছে। পাহাড় লাইনে ব্রডগেজ তৈরির সময়, সব দুর্নীতি আজও ধরা পড়েনি। অত্যন্ত সৎ ভাবমূর্তির বিজনদা রেল শ্রমিকদের অধিকার ফিরিয়ে দেবার জন্যে আন্দোলন করেছিলেন। সেই অপরাধে চাকরিটা ফিরে পেলেন না। অসৎ রেল অফিসারদের শাস্তি হয় না। অসমের বাংলা ভাষা আন্দোলনে বিজনদার উজ্জ্বল ভূমিকা কেউ ভুলতে পারবে না। লামডিঙের স্বাভিমানকে দিসপুর কোনোদিন গুরুত্ব দেয়নি। রাজ্যের সেকেন্ড কমান্ডার ইন চিফ অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা লামডিঙের এক সভাতে বলেছিলেন, লামডিং গোলাপের বাগিচা সুন্দর সৌরভ সবকে মুগ্ধ করে। সেই দিসপুরের  কর্তা লামডিঙের কতজন বেকার যুবককে চাকরি দিয়েছেন? লামডিঙের বেকার যুবকদের নাম কর্মবিনিয়োগ কেন্দ্র থেকে পাঠানো হয় না জানেন কি? তাদের বড় অপরাধ তারা বাঙালি বিধায়ক মহোদয় শিবু মিশ্র স্যার জানেন কি? এই প্রতিবেদক মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল,  হিমন্তবিশ্ব শর্মা থেকে শুরু করে দুনিয়ার মানুষের  ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। দেবেশ বাবু, স্বপন কর, সুশীল দত্ত, মায়াদি, উমা দি সবাই আমার পরিচিত। শিবু মিশ্র স্যারকে দূর থেকে দেখেছি, কথা বলেননি, তাই তিনি স্যার, বলতেই হবে। নতুবা তার সঙ্গীবাহিনীর যে দাপট, বেআইনি কর্মকাণ্ড শুনছি, তাতে আমাকে বিপদে পড়তে হতে পারে! দেবেশ চক্রবর্তীর মস্তান বাহিনীর সঙ্গে যদিও কারো তুলনা হয় না। সেই সময় আমাকে এক মস্তান হত্যার হুমকি দিয়েছিল। নগাঁও পুলিশ সুপার আমাকে ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা দিয়েছিলেন। সেই সব দিন ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারিনা। লামডিঙের শিক্ষিত বেকারদের বঞ্চিত করে লামডিং ডিভিশনাল অফিসের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৯০০ ফোর্থ গ্রেডের চাকরিতে নিযুক্তির অভিযোগ করেছিলেন বিরোধী দলপতি দেবব্রত শইকিয়া। লামডিঙের বিধায়ক কিন্তু কোনো অভিযোগ করেননি। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের যুবকদের সেই সব চাকরি দেওয়া হয়েছিল। দিসপুর কোনোদিন লামডিঙকে ভালো চোখে দেখেনি, আজও দেখেনা। আজও লামডিঙের মিস্ত্রিপট্টির ছন্দা দুই সন্তানকে বাড়িতে রেখে বিনা অপরাধে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। পাশে কেও নেই। ডি ভোটারদের, নাগরিকপঞ্জিতে নাম না থাকা মানুষগুলির কি দুরবস্থা, একবারের জন্যে কেউ ভেবেছেন? কি যন্ত্রনা, কি মানসিক অবস্থা, সঙ্গে মারণ রোগ করোনার সংক্রমণ, গোলাপের বাগিচাকে কে রক্ষা করবে? হিমন্তবিশ্ব শর্মা আসবেন? সেই আশা করতে পারেন কি? না দুরাশা ...

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.