Header Ads

মুকুল সাইডলাইন হলে একুশে কি ফলবে বিজেপির জয়ের স্বপ্ন ! চাপে ‘সেনাপতি’ দিলীপ !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
মুকুল রায়ের সঙ্গে বিজেপির দূরত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার দিন থেকেই প্রতিকূলতা ছিল। তা সত্ত্বেও মুকুল রায় পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নির্বাচনী ভার কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২১-এ মুকুল রায়কে সাইডলাইনে রেখে দিলীপ ঘোষের উপরই পূর্ণ দায়িত্ব দিতে চলেছে বিজেপি /আরএসএস, তাতেই সঙ্কট বাড়ছে বিজেপির ! 
 
মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পর তাঁর অনুগামীরাও এখন একে একে পদ্মশিবিরে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূলকে ভাঙতে মুকুল রায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন। ২০১৯-এর আগে ও পরে তৃণমূলের কোমর তিনি ভেঙে দিয়েছেন। এখনও তৃণমূল ভেঙে বিজেপিকে শক্তিশালী করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এখনও অনেকে মুকুলের সবুজ সংকেতের আশায় আছেন বলে দাবি বিজেপিরই।
কিন্তু মুকুল রায় যদি দলে গুরুত্ব হারিয়ে সাইডলাইন হয়ে যান, তবে বিজেপির হয়ে ফ্রন্টফুটে খেলবে কে? কেউ কি মুকুল রায়ের মতো দক্ষ হয়ে উঠতে পারবে এই কাজে? তখন দিলীপ ঘোষের উপর চাপ মারাত্মক বেড়ে যাবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ। মুকুলকে সাইডলাইন করে দিলে বিজেপির সংকট বাড়াবে বলেই তাঁদের অনুমান। মুকুল তৃণমূল ভেঙেছেন, বাকি বুঝবেন দিলীপ !
তবে বিজেপি নেতৃত্ব বুঝি একটু অন্যরকম ভাবছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিজেপি মনে করছে মুকুল রায়কে দিয়ে তৃণমূলকে ভেঙে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বাকি কাজ দিলীপ ঘোষ এবং অন্যন্যরা করে দিতে পারবেন। মুকুল রায়কে দিয়ে যা কাজ করানোর তা করা হয়ে গিয়েছে। এখন মুকুলের যুক্তি তাঁদের ঠিক বলে মনে হচ্ছে না তাই মুকুল রায়ও মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন! সেই কারণেই মুকুল রায় ২০১৯-এ বিজেপির কাছে আশার আলো হয়ে উঠলেও ২০২১-এ তাঁকে কাণ্ডারি ভাবার প্রয়োজন মনে করছে না বিজেপি ! তাই হয়তো ‘অপমানিত' মুকুল রায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। একুশের নির্বাচনের আগে দূরত্ব বাড়িয়ে তুলছেন বিজেপির সঙ্গে। যদিও তিনি সাফ জানিয়েছেন, তাঁর বৈঠক ছেড়ে ফেরা চোখের ডাক্তার দেখানোর জন্যই।
এতদিন মুকুল রায়কে কেন্দ্রবিন্দু করেই আবর্ত হচ্ছিল বিজেপির বাংলা জয়ের স্বপ্ন। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিজেপির পাল্লা ভারী হওয়ায় মুকুলকে আর আগের মতো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে মুকুল-ঘনিষ্ঠরা ক্ষুণ্ণ। মুকুল রায়ের সঙ্গে বঙ্গ বিজেপির দূরত্ব যে বেড়েই চলেছে, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে দিল্লির বৈঠকে।
বিজেপির কোর্টে বল ছুঁড়েছেন মুকুল রায়! মুকুল রায় দীর্ঘদিন ধরেই বঙ্গ বিজেপির সঙ্গে একই পথে হাঁটছেন না। তিনি সদর অফিসে যাওয়া ছেড়েছেন। এবার অমিত শাহের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি একদিন আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন দিল্লিতে বিজেপির বৈঠকে। কিন্তু সেই বৈঠকের মাঝেই তিনি ফিরলেন কলকাতায়। অভিযোগ, বৈঠকে চূড়ান্ত মতনৈক্যের কারণেই তিনি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির রণকৌশল স্থির করা নিয়ে ‘প্রস্তুতি' বৈঠকে মুকুল রায়ের তোলা যুক্তিকে খণ্ডন করে দেওয়া হয়। তাতেই অপমানিত হয়ে তিনি কলকাতায় ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। তাল কেটে যায় বৈঠকের। বাংলার প্রতিটি কোণাকে হাতের তালুর মতো চেনেন মুকুল রায়। অথচ তাঁর যুক্তি গ্রাহ্য করা হয়নি। বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা দাবি করেছিলেন, রাজ্যের যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৯০টি আসন পেতে পারে। এরপর আপত্তি জানিয়ে মুকুল রায় বলেন, খাতায় কলমে বাংলা জয় সহজ মনে হলেও কাজটা আসলে বহুগুণ কঠিন। এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তবের কোন মিল নেই।
তাঁর এই যুক্তি বিজেপির বৈঠকে খণ্ডন করে দেওয়ার বিজেপি নেতৃত্বের মনোভাব ভালোভাবে নেন নি মুকুল রায়। এরপরই দিলীপ ঘোষের বাড়িতে বৈঠকে না উপস্থিত হয়ে কলকাতায় ফেরার টিকিট কাটেন তিনি। এখন প্রশ্ন বিজেপিতে তাঁর ভূমিকা তাহলে কী হবে। তিনি কি এবার রাজনৈতিক পথ ফের পরিবর্তন করবেন?
২১ জুলাইয়ের আগে থেকেই মুকুল রায়কে নিয়ে চোরাস্রোত বইছিল তৃণমূলের অন্দরে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুকুলের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে নানা জল্পনা ভাসছিল। এমনকী একুশের সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আহ্বান জানান ভুল করে যাঁরা বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন তৃণমূল ছেড়ে, তাঁরা ফিরে আসুন। মুকুল কি তাহলে সেই পখে পা বাড়াবেন নাকি, অন্য কোনও ভাবনা রয়েছে তৃণমূলের প্রাক্তন সেকেন্ড ইন কম্যান্ডের?
 
এখন বিজেপির কোর্টে বল।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.