Header Ads

যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত এনজিটি-এর, ২০০০ ফ্ল্যাটের ওয়েট ল্যান্ড আবাসন ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ


অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা, ২৫ জুলাই: যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। সোনারপুরে জলাজমি বুজিয়ে ২০০০ ফ্লাটের আবাসন প্রকল্পকে অবিলম্বে ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। সম্প্রতি, ১৬ই জুলাই এই রায় ঘোষনা করেন বিচারপতি ওয়াংডি ও নাগিন নন্দার ডিভিশন বেঞ্চ।  এই মুহূর্তে জাতীয় পরিবেশ আদালতে প্রায় ১২০০০ জমি বুঝিয়ে অবৈধ আবাসনের কেস ঝুলছে। তাই আদালতের এই রায় আগামী দিনে অসাধু প্রোমোটারদের জন্য কড়া হুঁশিয়ারি হয়ে থাকল।
 উল্লেখ্য, বেআইনি ভাবে জলা জমি বুজিয়ে আবাসন প্রকল্প তৈরির প্রতিবাদ জানিয়ে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অল ইন্ডিয়া লিগাল এড ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় এই মামলাটি করেছিলেন। এর আগে রাজ্য সরকারের হস্ত্ক্ষেপ দাবি করে চিঠিও লিখেছিলেন। উত্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে জয়দীপ পরিবেশ দূষণের বিধি ভঙ্গের জন্য জাতীয় পরিবেশ আদালতের দারস্থ হন। তারপরেই আদালত রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও প্রশাসনিক স্তরের রিপোর্টে পাঠায়। সেই রিপোর্টে পরিষ্কারভাবে এই আবাসন প্রকল্প কে বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছিল। স্বভাবতই ইস্ট কলকাতা জলাভূমি রক্ষা কমিটি ও খেয়াদহ পঞ্চায়েতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আদালত। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ লড়াই এর পর অবশেষে তথ্যের ভিত্তিতে জয় হল আইনজীবী জয়দীপের। তিনি এই জয়কে সত্যের জয় বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
 কলকাতা ও শহরতলি জুড়ে জলা জমি বুজিয়ে আবাসন গড়ে তোলা প্রমোটারদের কাছে এখন জলভাত। যতই রাজ্য প্রশাসন কড়া মনোভাব দেখাক বা স্থানীয় মানুষ প্রতিবাদ করুক। প্রশাসনের কড়া আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যত্র তত্র কলকাতা ও শহরতলিতে জলাজমি বুজিয়ে গড়ে উঠেছে বড় বড় আবাসন প্রকল্প। সোনারপুরের ২০০০ ফ্ল্যাটের এই আবাসন প্রকল্প তারই অন্যতম উদাহরণ। এ প্রসঙ্গে জয়দীপ বলেন, '২০০৮ সালে বাম আমল থেকেই এই আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলেন বাম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ প্রমোটার ভোলা পাইক। যদিও ঐ  অসধু প্রমোটার দাবি  করেন আদালতের কাছে ২০০৪ সালে খেয়াদহ পঞ্চায়েত প্রধানের অনুমতি নিয়ে এই আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু নিয়ম অনুসরে পঞ্চায়েত প্রধানের অনুমতির এখানে কোন মান্যতা নেই। তবুও অবৈধ ভাবে আনুমানিক ৪০০ বিঘা জলা জমি বুজিয়ে এই আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছিল। প্রশাসনিক স্তরেও এই আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার সময় বিরোধিতা করে থানায় এফআইআর ও পরিবেশ আদালতে হলফনামা জমা দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও পুর নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব অসধু প্রমোটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোন কিছু তোয়াক্কা না করেই কাজের গতি আরও বাড়িয়ে দেয় ঐ অসধু প্রমোটার। প্রশাসনিক স্তরে এই নির্মাণের বিরোধিতা করা হলেও ইস্ট কলকাতা জলাভূমি রক্ষা কমিটি ও খেয়াদহ পঞ্চায়েত কোন বিরোধিতা করেনি। তাই খেয়াদহ পঞ্চায়েত ও ইস্ট কলকাতা জলা জমি রক্ষা কমিটির দিকে প্রশ্ন চিহ্ন উঠে যাচ্ছে। যেখানে অসাধু প্রমোটারের বিরুদ্ধে এফআইআর রয়েছে তা সত্ত্বেও কিভাবে না নির্মাণকার্য সম্পন্ন হল। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো জমি রক্ষা কমিটির অফিসারের মদত রয়েছে। আর তাই সমস্ত তথ্য যাচাই করে এবং প্রশাসনিক রিপোর্ট নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালত এই নির্মাণ কে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে।'
 জয়দীপ আরও বলেন, 'আমি তাই রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি আদালতের এই নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করে আবাসন ভেঙে দেওয়া হোক।' হুশিয়ারি দিয়ে তিনি জানান, অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনি ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন বিষয়টি নিয়ে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.