অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিনের সর্বশেষ তথ্যাদি কালই জানা যাবে !!
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু প্রতীক্ষিত ভ্যাকসিন সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করতে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এই ভ্যাকসিনের উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও এস্ট্রাজেনেকার গবেষকরা। বর্তমানে ব্রাজিলে ভ্যাকসিনটির মানবদেহে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে।
মানবদেহে এই ভ্যাকসিন প্রবেশের যে প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে তার তথ্য প্রকাশ করা হবে আগামিকাল সোমবার। ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নালে ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্ট সবিস্তারে জানানো হবে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি যে কোনো সময়েই তাদের ভ্যাকসিন নিয়ে সুখবর দিতে পারে এমন জল্পনা চলছে। তবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন কবে বিশ্বের বাজারে আসছে এই ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য এখনো মেলেনি।
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়েছিল এপ্রিল থেকেই। প্রথমে দু’জনের শরীরে ইনজেক্ট করা হয়েছিল ভ্যাকসিন। তাদের মধ্যে একজন মহিলা বিজ্ঞানী। নাম এলিসা গ্রানাটো। তারপর প্রথম পর্যায়ে কম সংখ্যক মানুষের শরীরে টিকার পরীক্ষা করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে হাজারের বেশি জনকে টিকা দেওয়া হয়। এই দুই পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্টই ইতিবাচক বলে খবর সামনে এসেছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চালাচ্ছিল অক্সফোর্ড। এই পর্যায়ের ট্রায়ালেও টিকার প্রভাব সন্তোষজনক বলেই দাবি করা হয়েছে। যদিও টিকার ডোজ বা ক্লিনিকাল ট্রায়ালের রিপোর্ট সামনে আনা হয়নি।
ব্রিটেনে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলার সময়েই ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকাতে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়। ব্রাজিলে করোনার হটস্পট সাও পাওলো ও রিও ডি জেনিরোতে তিন হাজার জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। অন্যদিকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানেই দক্ষিণ আফ্রিকায় এই টিকার হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করে উইটওয়াটারস্র্যান্ড ইউনিভার্সিটি তথা উইটস। বেছে নেওয়া হয় ২ হাজার জন স্বেচ্ছাসেবককে। ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় অক্সফোর্ডের টিকার ট্রায়ালের রিপোর্টও আশানুরূপ ভালোর দিকেই বলে জানায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
জেন্নার ইউনিভার্সিটির গবেষকদের সাহায্যে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) টেকনোলজি ব্যবহার করে ভেক্টর ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করেছে অক্সফোর্ডের ভাইরোলজিস্ট সারা গিলবার্টের টিম। এই গবেষণায় রয়েছেন অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড, টেরেসা লাম্বে, ডক্টর স্যান্ডি ডগলাস ও অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল। পরে অক্সফোর্ডের সঙ্গে এই ভ্যাকসিন গবেষণায় যুক্ত হয় ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানি অ্যাস্ট্রজেনেকা।
সারা গিলবার্টের টিম জানিয়েছেন, অ্যাডেনোভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে তৈরি এই ভেক্টর ভ্যাকসিন মানবদেহের বি-কোষ ও টি-সেল’কে উদ্দীপিত করে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি করবে। যেহেতু নিষ্ক্রিয় ভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তাই এই ভ্যাকসিনের কোনো 'অ্যাডভার্স এফেক্ট' দেখা যাবে না মানুষের শরীরে। এই ডিএনএ ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত বলেই দাবি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য, ব্রাজিলের মোট ৪৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল প্রায় শেষের পথে। সোমবার মানবদেহে ট্রায়াল সম্পর্কিত ফলাফল প্রকাশ করা হবে। লন্ডনের বার্কশায়ার রিসার্চ এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান ডেভিড কার্পেন্টার জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। নির্দিষ্টভাবে কোনো তারিখ বলা সম্ভব না, তবে মোটামুটি সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকেই মিলতে পারে করোনার ভ্যাকসিন। যথেষ্ট পরিমাণ যেন সরবরাহ করা যায় সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছে উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো।
বিশ্বের ১৪০ রকম ভ্যাকসিনের মধ্যে যে ১৫-টি ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে ট্রায়াল করা হয়েছে তাদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকা ও আমেরিকার মোডার্না বায়োটেক।
কোন মন্তব্য নেই