মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করলেন প্রদীপ দত্ত রায়
গুয়াহাটি : এক বিবৃতিতে আকসা নেতা প্রদীপ দত্ত রায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন, ধুবড়ি জেলার সাংবাদিক রাজিব শর্মাকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরিপ্রেক্ষিতে সারা আসাম জুড়ে যে প্রতিবাদের বন্যা বয়ে গেছে, এর ফলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল যেভাবে চটজলদি এর জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার জন্য আমি মুখ্যমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
সেই সঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাস মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সেই সাংবাদিককে রাত দুটোর সময় অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, আমি তাঁকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধুবড়ি জেলার পুলিশ সুপার এবং ডিএফওকে শাস্তি মূলক ভাবে ট্রানস্ফার করার সিদ্ধান্তও অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
কিন্তু একই রাজ্যের বরাক উপত্যকায় কয়লা, সুপারি, বালি, পাথর ইত্যাদির সিন্ডিকেট অবাধে চলছে, ভুয়া চালানের মাধ্যমে দুর্নীতি হচ্ছে। এর চর্চা সারা রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছে, আশাকরি মুখ্যমন্ত্রী এসব ব্যাপারেও নজর দেবেন। সম্প্রতি কাছাড় জেলার পুলিশ সুপারকে শাস্তিমুলক বদলি করে মুখ্যমন্ত্রী দেখিয়েছেন তার চোখের আড়ালে কোনো বিষয়ই নয়। আমি তাকে জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। যেহেতু কাছাড়ের সিন্ডিকেটের সঙ্গে জেলা বিজেপির সভাপতি এবং রাজ্য বিজেপির এক নেতার নাম সরাসরি জড়িয়ে গেছে, আমি আশা করছি তিনি এব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি মেনেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া আমি রঞ্জিত দাসের কাছে আবেদন করব, দলকে স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত রাখতে, দলের নিজস্ব নীতি এবং আদর্শ যাতে সুন্দরভাবে পালন করা হয়। জনমনে যাতে দলের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে তাই, আসাম প্রদেশে বিজেপির সহ-সভাপতি এবং কাছাড় বিজেপির সভাপতির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হোক। আমি আশা করছি বিজেপি আবারও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রমাণ করবে তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে বিশ্বাসী।
কাছাড়ে যেভাবে পাথর ও বালির সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, এর সঙ্গে সরাসরি ভাবে জড়িত বন বিভাগের ডিএফও। এক্ষেত্রে প্রমাণের কোন অভাব নেই, ডিএফওর সহযোগিতা এবং কারসাজিতে গুমরা ইত্যাদি এলাকায় এস প্রাকৃতিক সম্পদের দুর্নীতি চলছে। আমি আশ্চর্য হচ্ছি যে বন মন্ত্রী নিজে কাছাড় জেলার হয়ে কিভাবে এগুলো সহ্য করছেন এবং কি করে এদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন? তিনি চুপ থেকে তাদের দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিচ্ছেন। পরিস্থিতি এখন এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে, সাধারণ মানুষ পর্যন্ত এসব বুঝতে পারছেন, তারা প্রতিবাদ করছেন। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে এলাকার জনবসতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এটা অত্যন্ত মারাত্মক ব্যাপার এবং আমি আশা করছি বনমন্ত্রী আর এব্যাপারে নীরব থাকবেন না।
রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একইসঙ্গে বন্যার ফলে সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত। অথচ এই করোনা এবং বন্যা পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ঘোষণা করছেন টেট উত্তীর্ণদের চাকরি দিয়ে দেওয়া হবে। আমি আশ্চর্য হচ্ছি, যেখানে সবগুলো বিদ্যালয় বন্ধ, ভয়াবহ মহামারী রয়েছে, বন্যা পরিস্থিতিও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে, সেখানে শিক্ষামন্ত্রী হঠাৎ করে নিয়োগপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে এতটা ব্যস্ত কেন হয়ে পড়লেন, ব্যপারটা আমার একেবারে বোধগম্য হচ্ছে না। এর পিছনে কি রহস্য থাকতে পারে জানিনা, তবে আমি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ রাখছি, অন্তত এবার আপনি এসব ব্যাপারে নিজে হস্তক্ষেপ করুন। এইসব নিয়োগ-প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রাখুন, এখন এসবের সময় না। আপনার সম্পত্তি দেখেছি সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বরাক উপত্যকার যুবসমাজকে কিভাবে বঞ্চিত করেছে রাজ্য সরকার, ৭০০ ছেলে-মেয়েকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে, অথচ এই তালিকায় বরাক উপত্যকায় একজন স্থান পায়নি। তাই টেট উত্তীর্ণ ছেলেমেয়েদের যখন নিয়োগপত্র দেওয়া হবে, তখন যেন আমাদের আবার বঞ্চিত না হয়, আমি মুখোমুখি কাছে আবেদন করছি তিনি নিজে যাতে এব্যাপারে একটু নজর রাখেন।
প্রদীপ দত্ত রায়
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আকসা
আইনজীবী গৌহাটি হাইকোর্ট
কোন মন্তব্য নেই