Header Ads

সংখ্যালঘু নির্যাতন দ্বিগুণ বেড়েছে বাংলাদেশে !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট বলছে, গত ৬ মাসে দেশে ৫৯২টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এতে কোথাও এক বা একাধিক ব্যক্তি, পরিবার, প্রতিষ্ঠান ও মন্দির ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে গত ছ-মাসে দেশে সংঘটিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক।
 
পরিসখ্যান তুলে ধরে হিন্দু মহাজোট দাবি করে, ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুন হারে বেড়েছে হিন্দু নির্যাতন। গত ২০১৯ সালে সারা বছর ধরে যে পরিমান নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, ২০২০ সালের প্রথম ৬ মাসেই তার চেয়ে বেশি হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
২০১৯ সালে সারা বছরে হত্যা করা হয়েছিল ১০৮ জনকে, ২০২০’র ৬ মাসেই হত্যা করা হয়েছে ৭২ জনকে। গত বছর আহত করা হয়েছিল ৪৮৪ জনকে, অথচ এ বছরের প্রথম ৬ মাসেই আহত করা হয়েছে ৫১২ জনকে। গতবছর বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল ৪৩৪-টি পরিবারকে, এবছরের প্রথম ৬ মাসেই বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ৪৮৯-টি পরিবারকে, উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছে ১ হাজার ৪৬০ টি পরিবারকে, উচ্ছেদের হুমকি পেয়েছে ১ হাজার ৮০১ পরিবার।
গত বছর দেশত্যাগের হুমকি পেয়েছিল ৬৪১টি পরিবার। এ বছরের প্রথম ৬ মাসেই তা তিন গুন বেড়ে উচ্ছেদের হুমকি পেয়েছে ১ হাজার ৮০১ পরিবার। গত বছর দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিলো ৩৭৮-টি পরিবারকে, এ বছরের প্রথম ৬ মাসেই দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ৫৪৫টি পরিবারকে। গতবছর নিরাপত্তাহীনতায় ছিল ২ হাজার ২৬১ পরিবার, এবছর প্রথম ৬ মাসেই ৩ হাজার ৮০৬টি পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। গত বছর মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছিল ১৫৩-টি, এ বছরের প্রথম ৬ মাসেই এমন ঘটনা ঘটেছে ১৬৪-টি। বাড়িতে হামলা ভাংচুর অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছিলো ৪৪৮টি, এবছর তা বেড়ে গিয়ে হয়েছে ৪৩৭-টি।
অ্যাডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিক জানান, করোনা ভাইরাসের দুর্যোগময় মুহুর্তেও ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মত হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মঠ মন্দিরে হামলা, ভাংচুর, হত্যা, হত্যা প্রচেষ্টা, জমি দখল, দেশ ত্যাগে বাধ্যকরা সহ নানা নির্যাতন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।
তিনি বলেন, ৫০০টি আদিবাসী পরিবার, ৪৫টি হিন্দু পরিবার এবং গারো, ত্রিপুরা এবং মারমাদের ৪০টি গ্রাম শূন্য হয়েছে। আদিবাসী সম্প্রদায় ভারত ও মায়ানমারে আশ্রয় নেয়।
গত ৬ মাসে ১৫ জন হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, ১১ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে, ২ জনকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। ২ হাজার ৪৮৬ জনকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। ২৯৩ জনকে ধর্মান্তরের চেষ্টা করা হয়েছে। ৭টি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের ঘটনা ঘটেছে। মিথ্যা মামলা হয়েছে ৬৯টি, মিথ্যা মামলায় আসামী, গ্রেফতার, বরখাস্ত করা হয়েছে ৩৩ জনকে, ৩৪৩টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ৫টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে অপবিত্র করা হয়েছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেয়া হয়েছে ১৫টিতে। গরুর মাংস খাইয়ে ধর্মীয় আবেগে আঘাত করা হয়েছে ৫০ জনকে। মিথ্যা রাজাকার বানানো হয়েছে ৩ জনকে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ২৫টি। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ৭ লাখ হিন্দু শিক্ষার্থীকে ধর্মীয়ভাবে আঘাত দেয়া হয়েছে।
গোবিন্দ প্রামাণিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় কখনোই স্বাধীনতার স্বাদ পায় নি। স্বাধীনতার পরপরই ঐতিহ্যবাহী রমনা কালী মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে। যদিও তা এখন ভারতীয় অর্থে পুনঃনির্মাণ হচ্ছে। ১৯৭৪ সালের পয়লা জুলাই পরিত্যক্ত সম্পত্তি আইন পাশ করে এদেশের লাখ লাখ একর হিন্দু সম্পত্তি দখল করা হয়েছে। এরপর সংবিধান কেটেছেঁটে সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হয়েছে। ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ ধিক্কার জানালেও সেই সমস্ত নির্যাতনকারী অপরাধীদের একজনও শাস্তি পায়নি।
তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধে এবং সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একটি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করেছে। কিন্তু সরকার দাবী দুটির প্রতি কর্ণপাত করে নি। যে কারণে দিন দিন হিন্দু নির্যাতন বেড়েই চলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে করোনা পরিস্থিতিতে হিন্দু মহাজোটের কার্যক্রম তুলে ধরে গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, তাঁর সংগঠন হিন্দু মহাজোট শব সৎকার টিম গঠন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মরদেহ হাসপাতাল ও বাসাবাড়ি থেকে গ্রহণ করে শ্মশানে সৎকারের ব্যবস্থা করছে। বিভিন্ন শ্মশানে সৎকারকর্মীদের সুরক্ষার জন্য গামবুট, পিপিই সহ নিরাপত্তা সামগ্রীও দিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.