উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে ৭২ ঘণ্টা সময় চায় ভারত !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 

 

লাদাখ সংঘাতের পর কমিউনিস্ট চীনের মুখের কথায় আর কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে চায় না নয়াদিল্লি। বরং সীমান্তে স্থিতাবস্থা ও শান্তি কায়েমের লক্ষ্যে বেইজিং সাদা-কালোয় কী করছে তা পুরোপুরি দেখে নিতে চায় ভারত। তাই উত্তেজনা কমাতে কোনো রকম পদক্ষেপের আগে অন্তত ৭২ ঘণ্টা সময় নিতে চাইছে সাউথ ব্লক। অর্থাৎ সীমান্তে চীন কোনো ব্যবস্থা নিলে তা তিন দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হওয়ার পর ভারত সমতুল্য কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে।

১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীনা সেনাদের সঙ্গে সংঘাতের পর সীমান্তে উত্তেজনার পারদ অনেকটাই চড়ে গিয়েছে। কৌশলগত কারণেই হোক বা ঘরোয়া রাজনীতির চাপে সেক্ষেত্রে কট্টরপন্থা নিয়ে চলছে নয়াদিল্লি--‘তুমি চোখ রাঙালে আমিও চোখ রাঙাব’।

 

সাউথ ব্লকের কূটনীতিকরা বুঝতে পারছেন লাদাখের দু’ছটাক জমি দখল করে নেওয়া বেইজিংয়ের লক্ষ্য নয়। ভারতের ওপর চাপ তৈরিই উদ্দেশ্য। তাই পাল্টা চাপের কৌশল নিয়ে চীনের উদ্দেশে যেমন সামরিক চোখ রাঙানি চলছে, তেমনই অর্থনৈতিক দিক থেকে বেইজিংকে চাপে ফেলার কৌশলও নিয়েছে নয়াদিল্লি। সমস্ত চীনা অ্যাপের উপর নিষেধাজ্ঞা আসলে প্রতীকী পদক্ষেপ। নয়াদিল্লির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হলে ভারত মহাসাগর দিয়ে চীনা বাণিজ্যও যে রীতিমতো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে-সেই বার্তাও দিতে শুরু করেছে সাউথ ব্লক।

কিন্তু তা যেমন ঠিক তেমনই এও ঠিক যে সার্বিক পরিস্থিতিতে সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমিত করা গেলে দু’দেশের পক্ষেই তা ভাল। তাই লাদাখ সীমান্তে ভারত-চীন কোর কমান্ডার স্তরে বৈঠক চলছে। তৃতীয় দফার বৈঠকে স্থির হয়েছে উত্তেজনা প্রশমনে দুই দেশ কী অবস্থান নেবে। কীভাবে সীমান্তে সেনা উপস্থিতি কমাবে এবং উত্তেজনা কমিয়ে শান্তি স্থাপন করবে।

কিন্তু সেনাবাহিনী সূত্রে বলা হচ্ছে, সীমান্তে উত্তেজনা যদি সত্যিই কমে তা হলে তা ধাপে ধাপে কমবে। সমঝোতা অনুযায়ী চীন সত্যি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা তা দেখা হবে। তার ধারাবাহিকতা থাকছে কিনা তা কম করে ৭২ ঘণ্টা ধরে পর্যবেক্ষণ করা হবে। সে ব্যাপারে নিশ্চিত হলে তবেই ভারত উত্তেজনা কমানোর ব্যাপারে সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করবে। কারণ এ সব ব্যাপারে কমিউনিস্ট ও তার লাল ফৌজের বিশ্বাসযোগ্যতার বিশাল ঘাটতি রয়েছে বিশ্বব্যাপী।

দু’দেশের সেনাবাহিনীর কোর কম্যান্ডার স্তরে বৈঠক হয়েছে গত মঙ্গলবার। তাতে স্থির হয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখাকে দু-দেশই মর্যাদা দেবে। দু-দেশের বাহিনী নিজেদের মধ্যে অন্তত ১০০ মিটারের তফাৎ রেখে টহলদারি চালাবে। প্যাংগং লেকে দু-দেশের টহলদারি বাহিনীর নৌকো পরস্পরকে ধাক্কা মারবে না কিংবা একজনের টহলদারি জিপ অন্য বাহিনীর জিপকে ধাক্কা দেবে না ইত্যাদি।

বাস্তব হল, তৃতীয় দফার আলোচনার পরেও সমঝোতা সূত্রের বাস্তবায়ণের কোনো লক্ষণ এখনও পিপলস লিবারেশন আর্মির মধ্যে দেখা যায়নি। সেনা কর্মকর্তাদের মতে, আসলে উত্তেজনা কমাতে এখন অনেকটা সময় নেবে। তা ছাড়া যে ধরনের চড়া সুরে কূটনৈতিক দ্বৈরথ চলছে, তাতে উত্তেজনা এখনই কমার কথাও নয়। কে আগে চোখের পলক ফেলে সেটাই এখন দেখার।

করোনা ভাইরাসকে পুঁজি করে বিশ্ববাণিজ্য ক্ষেত্রে এক নম্বর হয়ে ওঠার হঠকারী গেম-প্ল্যান শেষপর্যন্ত যে বিচ্ছিরিভাবে এক্সপোজ হয়ে গিয়ে গোটা খেলাটাই পুরোপুরি লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে সেটা চীন কল্পনাও করতে পারে নি। এই বিচ্ছিরি পরিস্থিতির দিক থেকে বিশ্বের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতেই এখন ভূমি-মাফিয়ার রাজনীতি আঁকড়ে ধরতে হয়েছে চীনকে। চীনের সীমান্ত লাগোয়া প্রায় সবদেশেই তারা তাদের ভূখণ্ডাংশ দাবি করে চলেছে--রাশিয়াকেও ছাড়ে নি !