Header Ads

করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণের ব্যাপকতাই পারে মহামারীর সমাপ্তি টানতে !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
মার্চে থাইল্যান্ডে যখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মাত্র বাড়তে শুরু করে, তখনই ব্যাংককের তিনটি হাসপাতাল ঘোষণা করে তারা ভাইরাসের টেস্টিং বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ তাদের বিকারক শেষ হয়ে গেছে। সে সময় থাই গবেষকরা দেশকে সহায়তা করতে ছুটে এসেছেন। তারা তখন সাশ্রয়ী ও সহজে ব্যবহার যোগ্য টেস্টের সন্ধান করতে থাকেন। সে সময় সিস্টেম বায়োলজিস্ট ছায়াসিথ উত্তমপিনেন্ট তার পুরনো পরিচিত একজনের কাছে পৌঁছলেন। তিনি ছিলেন সিআরআইএসপিআরের সহ-আবিষ্কারক ফেং জাং, যিনি জিন এডিটিং টেকনোলজি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে করোনা ভাইরাস নিয়ে একটি পরীক্ষার কাজ করেন।
 
কয়েকদিনের মধ্যে উত্তমপিনেন্ট জাংয়ের ল্যাব থেকে স্টার্টার কিট সংগ্রহ করেন। এরপর ব্যাংককের হাসপাতাল থেকে নমুনা নিয়ে সেগুলো পরীক্ষা করে দেখেন। তিনি বলেন, সেই কিটগুলো বেশ শস্তা ও কার্যকর ছিল। তিনি আশা করেন এ বছরের শেষ নাগাদ এটি ক্লিনিক্যাল ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাবে। তিনি থাইল্যান্ডের বায়োকেমিস্টদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্থানীয়ভাবে টেস্টিংয়ে বিকারক উৎপাদন করছেন। তাকে সমর্থন করার জন্য পাশে আছেন জাং। স্থানীয়ভাবে সবকিছু উৎপাদনের এই প্রচেষ্টা পৃথিবীর এই অংশে সংক্রামক রোগ পর্যবেক্ষণ ও নির্ণয়ের ওপর দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এপিডেমিওলজিস্টরা বলছেন, সার্স-কোভ-২-এর গণহারে পরীক্ষার জন্য প্রতিটি দেশে প্রতি সপ্তাহে কয়েক মিলিয়ন পরীক্ষার প্রয়োজন আছে। এটা হতে পারে বর্তমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসার বাস্তবসম্মত উপায়। এটা কর্তাব্যক্তিদের সুযোগ করে দেবে যারা টেস্টে পজিটিভ আসবে তাদের আইসোলেট করার। সেই সঙ্গে রোগের বিস্তৃতি সীমায়িত করে সাহায্য করবে নিরাপদ অবস্থায় বিধিনিষেধ শিথিল করে দিতে।
কিন্তু অনেক দেশই টেস্টিংয়ের ক্ষেত্রে সংগ্রাম করছে। একটি কারণ হলো সার্স-কোভ-২ শনাক্ত করার পরীক্ষার মানদণ্ডের ভিত্তি হলো রিভার্স-ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন কিংবা আরটি-পিসিআর। যার জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী, বিশেষায়িত কেমিক্যাল সরবরাহ ও ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি, যা কিনা ফল প্রদানের জন্য কয়েক ঘণ্টা সময় নেয়। এটি সাধারণত কেবল ল্যাবগুলোতে উপলব্ধ হয়। এর ফলে টেস্টের সংখ্যা সীমিত হয়ে পড়ে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এমনকি ধনী দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্রেও টেস্ট কিটের স্বল্পতা রয়েছে। মূলত সাপ্লাই চেইনের সমস্যার কারণে নোজ সোয়াব থেকে রাসায়নিক বিকারক সবকিছুর স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। বিশ্বাসযোগ্য টেস্টের পরিমাণ বাড়ানো চ্যালেঞ্জিং বলে প্রমাণিত হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে গবেষক দলগুলো এখন পিসিআর টেস্টের পাশাপাশি অন্য পরীক্ষার পরিকল্পনা করছে। ডায়াগনস্টিকের এক ডজন পদ্ধতি বিকশিত হয়েছে। সবাই ভাইরাল উপাদান শনাক্ত করছে কিন্তু ভিন্ন উপায়ে। কিছু কিছু আরটি-পিসিআরের সঙ্গে সমন্বিত হয়ে টেস্টকে আরো গতিশীল ও সহজ করে। অন্যগুলো জিন-এডিটিং টুল ব্যবহার করে এবং কোনো কোনোটা ভাইরাস চিহ্নিত করে প্রোটিন ব্যবহার করে, যা কিনা পৃষ্ঠে থাকে। এই টেস্টের অনেকগুলো যেমন জাংয়ের, এগুলো ক্লিনিক্যাল নমুনা ব্যবহার করে বৈধতা দেয়া হচ্ছে। কিছু কিছু এরই মধ্যে ক্লিনিকে রয়েছে। এপ্রিলে ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ করোনাভাইরাসের টেস্টের পদ্ধতি বিকাশের জন্য ১.৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে। এটি করা হয় এই গ্রীষ্মের শেষ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে লাখো পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য। ঝাং বলেন, যত দ্রুত আমরা সমাধান নিয়ে আসতে পারব, তত দ্রুত আমরা স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে পারব।
বায়োকেমিস্ট মিচেল ও’কনেলের মতে, অনেক বেশি টেস্ট করার জন্য যা দরকার তা হলো পদ্ধতিগুলোর একটা মিশ্রণ ব্যবহার করা, যা নির্ভর করবে বিভিন্ন উপকরণ ও সাপ্লাই চেইনের ওপর। ফলে বিশ্বব্যাপী চাহিদাও মূল উপকরণকে অপসারণ করতে পারবে না। তিনি বলেন, যেকোনো নতুন প্রযুক্তি টেস্টের সংখ্যাকে বাড়িয়ে দেবে, যা আমাদের জন্য শুভ সংবাদ। যদি সেসব টেস্ট দ্রুত প্রস্তুত হয় তবে তা আমাদের জন্য সুসংবাদ।
করোনাভাইরাসের টেস্ট দুটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত: একটিতে ভাইরাস কিংবা পৃথক অণু থেকে জেনেটিক উপাদান শনাক্ত করে, যা ব্যবহার করা হয় এটা ডায়াগনসিস করতে যে একজন ব্যক্তি সক্রিয় সংক্রমণ আছে কিনা। আর অন্যটি অ্যান্টিবডির উপস্থিতি গ্রহণ করে, যা কেউ সংক্রমিত হয়েছে কিনা এবং ভাইরাসের ইমিউন প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে কিনা তা প্রকাশ করে। অ্যান্টিবডি টেস্টের সীমাবদ্ধ ডায়াগনস্টিক ব্যবহার আছে: যেমন কোনো ব্যক্তির যদি সংক্রমণ চলাকালে পরীক্ষা করা হয়, তবে যখন তার ইমিউন প্রতিক্রিয়া বাড়ছে, সে সময় অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা সম্ভব নাও হতে পারে।
ডায়াগনস্টিক টেস্টের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত মানদণ্ড যা আরটি-পিসিআর ব্যবহার করে। এটি কাজ করে সার্স-কোভ-২ থেকে নির্দিষ্ট জেনেটিক সিকোয়েন্সের জন্য কোনো ব্যক্তির নাক বা গলার কোষ থেকে নমুনা নিয়ে। যদি ভাইরাল সিকোয়েন্স পাওয়া যায়, এ কৌশল শনাক্তকরণের স্তরকে বাড়িয়ে দেয়।
মার্চের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে রোগ নির্ণয়ের গতি করোনাভাইরাসের বিস্তৃতির গতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সংগ্রাম করছিল। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হাওয়ার্ড সালিস সাহায্য করতে বাধ্য হয়েছিলেন। টেস্টিংয়ে গতি আনতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন শক্তিশালী সিকোয়েন্সিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে, যা জিনোমিক গবেষণায় বৈপ্লবিক গতি নিয়ে আসে। তিন সপ্তাহ পর সালির দল এমন একটি পদ্ধতি নিয়ে এল, যা একসঙ্গে ২০ হাজার লোকের নমুনা পরীক্ষা করতে পারে।
ভাইরাসের জিনোম শনাক্ত করার চেয়ে, দ্রুত ও সাশ্রয়ী ডায়াগনস্টিক টেস্টের জন্য একটি ভিন্ন পদ্ধতি হতে পারে ভাইরাসের সারফেসে বসে থাকা অণুর সন্ধান করা। এ জাতীয় পরীক্ষায় একটি নির্দিষ্ট প্রোটিন কিংবা অ্যান্টিজেনের সঙ্গে আবদ্ধ হওয়ার জন্য অ্যান্টিবডি থাকবে। যেটা অনেক বাসায় প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করার মতোই। এগুলো উৎপাদন করা যায় সস্তায় এবং পরীক্ষা করাও সহজ, যা এরই মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণ শনাক্ত করতে ব্যবহূত হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.