অসমে ২২টি জেলা বন্যাক্রান্ত, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪, প্লাবিত ১২টি বিএসএফ ক্যাম্প
নয়া ঠাহর, গুয়াহাটি, ২ জুলাইঃ ব্রহ্মপুত্রের জল ধীরে ধীরে কমছে। বেশ কয়েকদিন পর দেখা মিলেছে সামান্য রোদেরও। তবে এখনও নিম্ন, মধ্য এবং উজান অসমের মোট ২২টি জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার বন্যার কবলে পড়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে অসমে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ জনে। গতকাল এই সংখ্যা ছিল ৩৩।
চলতি করোনার আবহে অসমে বছরের দ্বিতীয় বন্যা পরিস্থিতি বহুলাংশে অপরিবর্তিত। উজান থেকে শুরু করে মধ্য এবং নিম্ন অসমের ২২টি জেলার ৬০টি রাজস্ব সার্কলের ২,০৫৩টি গ্রামের ১৬,০৩,২৫৫ জন বন্যায় প্রভাবিত হয়েছেন। বন্যা কবলিত জেলাগুলির মোট ৭২,৭১৭.৯৮ হেক্টর কৃষিজমি জলে প্লাবিত হয়েছে বলে আজ সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। এই পরিসংখ্যান আজ ২ জুলাইয়ের।
অসম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএসডিএমএ) সূত্রে জানানো হয়েছে, অসমের ৩৩টি জেলার ২৭টি জেলা প্রলয়ঙ্করী বন্যার কবলে পড়েছিল। আজ বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়ে এই সংখ্যা কমে এসেছে ২২-এ। এখনও যে সকল জেলা বন্যার কবলে রয়েছে সেগুলি যথাক্রমে ধেমাজি, লখিমপুর, বিশ্বনাথ, চিরাং, দরং, নলবাড়ি, বরপেটা, বঙাইগাঁও, কোকরাঝাড়, ধুবড়ি, দক্ষিণ শালমারা, গোয়ালপাড়া, কামরূপ (গ্রামীণ), মরিগাঁও, হোজাই, নগাঁও, গোলাঘাট, যোরহাট, শিবসাগর, ডিব্রুগড়, তিনসুকিয়া এবং পশ্চিম কারবি আংলং জেলা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এএসডিএমএ আরও জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত ১৬ জেলায় ত্রাণ শিবির কমেছে। আজ মোট ১৬৩টি ত্রাণশিবিরে ১২,৫৯৭ জন বন্যার্ত আশ্রিত রয়েছেন। এছাড়া বহু লক্ষ জীবজন্তু প্রভাবিত হয়েছে। এর মধ্যে বড় পশু রয়েছে ৮,৬৩,৯৩৫টি; ছোট ৪,৪৭,৯২৭টি এবং পল্ট্রি ১০,৪৫,৫০৫টি। অন্যদিকে বসতবাড়িও ধ্বংস হয়ছে বহু। এর মধ্যে মোট ২০৯টি বসতবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৫১২টি আংশিক ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়ায় একজন জলের তোড়ে ভেসে গেছেন। ইতিমধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে।
এএসডিএমএ সূত্রে জানানো হয়েছে, ধেমাজি, বরপেটা, বঙাইগাঁও, ধুবড়ি, দক্ষিণ শালমারা জেলার বিভিন্ন স্থানে ১২৬টি নৌকা নিয়ে ২,৮৫২ জন এনডিআরএফ, এসডিআরএফ জওয়ান, স্থানীয় মানুষ এবং প্রশাসনের লোকজন উদ্ধারকার্য ও ত্রাণ সামগ্রী বণ্টনে নিয়োজিত হয়েছেন। আজ বন্যা কবলিত এলাকায় ৪,২২১.৬৭ কুইন্টাল চাল, ৭৮৪ কুইন্টাল ডাল, ১২৩.৯৪ কুইন্টাল লবণ এবং ১,০৪৬.৪৫ লিটার সরষে তেল বণ্টন করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি পূর্ত সড়ক এবং নদীবাঁধ ভেঙেছে বন্যার তোড়ে।
এদিকে, নিম্ন অসমের ধুবড়ি এবং দক্ষিণ শালমারা-মানকাচর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার জলে ভাসছে। দুই জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ১০ থেকে ১২টি বিএসএফ ক্যাম্পের ওপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র প্রবাহিত হচ্ছে, অবস্থা খুবই শোচনীয়। দেশের সুরক্ষার স্বাৰ্থে বন্যার জলে দাঁড়িয়েই বিএসএফ জওয়ানদের দিন রাত নজরদারি চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
সৌজন্যে হিন্দুস্থান সমাচার
কোন মন্তব্য নেই