কৃষ্ণাঙ্গদের হত্যাকে কেন্দ্র করে আমেরিকায় উত্তাল, হোয়াইট হাউসে বিক্ষোভ
১৭ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ ট্রেইভর মার্টিন, স্কুল ছাত্র, ফ্লোরিডার একটি অঞ্চলে আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলো ছেলেটি। সাদা চামড়ার চৌকিদার গুলি করে মেরে ফেলে তাকে। শাস্তি হয়নি চৌকিদারের। আইন বাঁচিয়ে দিয়েছে তাকে। সালটা ২০১২।
রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে সাণ্ড্রা ব্ল্যান্ড একটা সিগারেট ধরিয়েছিলেন। আমেরিকান সাদা চামড়ার পুলিশ আসছিলো তার দিকে। সিগারেট নিভিয়ে দিতে বলে তারা। সান্ড্রা নেভায় নি। এটুকুই। গ্রেফতার করা হয় তাকে। তিনদিন পর কৃষ্ণাঙ্গ রমনী সান্ড্রা আমেরিকার কারাগারে আত্মহত্যা করেন, সালটা ২০১৫। আত্মহত্যার কারন অজানা।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুটা আশ্চর্যের ছিলো না। এবং অবাক করার মত বিষয় হলো যে ভয়ঙ্করভাবে ওকে মেরে ফেলা হলো। এমনটাই হয়। একটা সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে আমেরিকায় প্রতিবছর এক হাজারের বেশী মানুষকে স্রেফ এমনি এমনি গুলি করে মেরে ফেলা হয়, এবং সন্দেহাতীতভাবে তার সবচাইতে বড় অংশটা কালো মানুষ বা কৃষ্ণাঙ্গ।
হোয়াইট হাউসে বিক্ষোভ হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে খুনীদের, সারা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পরেছে। কিন্তু তারপর? বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কৃষ্ণাঙ্গ খুনের দোষীদের ছেড়ে দেওয়া হয় সঠিক প্রমান না পেয়ে। বিপ্লব চাপা পরে যায় একদিন, কিন্তু মৃত্যু সংখ্যা বাড়তে থাকে।
মাত্র পঁচিশ বছরের এক ছাত্র, নাম সাগর সেজওয়াল। এক বন্ধুর বিয়েতে অংশ নিতে ২০১৫ সালে গিয়েছিলেন শিরদি শহরে। ভাইদের নিয়ে বেরিয়েছিলেন দোকানে। ফোন আসে তার, ফোনের রিং টোন ছিলো বি এর আম্বেদকরক কে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটা গান।
দোকানের বাইরে মদ্যপান করছিলো আটজন ছেলে,
সকলেই উচ্চবর্ণের। এই রিং টোনে আপত্তি জানায় তারা। ফোনের রিং টোন পরিবর্তন করতে বলেন। প্রাথমিক ঝগড়াঝাঁটি এক পর্যায়ে মারামারিতে রূপ নেয় এবং হামলাকারীরা সেজওয়ালকে একটি বোতল দিয়ে আঘাত করে। তাকে ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। তারপর তাকে একটি মোটরবাইকে তুলে সেখান থেকে নিয়ে চলে যায়। তিনদিন পর সাগরের মৃতদেহ পাওয়া যায় পাশের একটি ক্ষেতে।
মধ্যপ্রদেশে প্রকাশ্যে মলত্যাগের অপরাধে’ দলিত সম্প্রদায়ের দুই শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। রোশনি ও অবিনাশ নামের দুই দলিত শিশু গ্রামের রাস্তার পাশে মলত্যাগ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়। শিশুদের পরিবার জানায়, তাদের বাড়িতে কোনো শৌচাগার নেই।
জর্জ ফ্লয়েড বাদ দিয়ে এই নামগুলোর মধ্যে বাকী কাউকে চেনেন আপনি? কখনো জর্জ ফ্লয়েড কখনো রোহিত ভেমুলা, মৃত্যুরও বিজ্ঞাপন দরকার হয়ে পড়ে। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের একটি রিপোর্টে লেখা আছে ভারতে প্রতি বছর শুধু কৃষক আত্মহত্যা করেন পনেরো থেকে কুড়ি হাজার।
এত অন্ধকার রাতের শেষে সকাল আসবে কোনদিন?
সাধারন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা মানে,
পৃথিবীকে হত্যা করা।
ক্যামেরুন থেকে কায়রো, সিরিয়া থেকে শিকাগো, পাকিস্তান থেকে প্যালেস্টাইন,
বার্মা থেকে বেলুচিস্তান।
একটা পিঁপড়ের থেকে, একটা ছারপোকার থেকে, একটা কেঁচোর থেকে, পায়ে দলে পিষে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া সবুজ ঘাস থেকেও সহজ একটা মানুষকে মেরে ফেলা।
যে ঘৃণা ছড়িয়ে আছে সারা পৃথিবী জুড়ে,
তার চাইতে সাংঘাতিক ভাইরাস আসেনি কখনো, এই পৃথিবীতে। সভ্য,শিক্ষিত পৃথিবীর থেকে সভ্য জঙ্গল। আমরা যেটাকে জঙ্গল ভাবি, আসলে সেটাই আসল ভালোবাসার পৃথিবী।
সুদীপ ভট্টাচার্যের সৌজন্যে
কোন মন্তব্য নেই