Header Ads

প্রসঙ্গ : একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র সরকার গঠনের সম্ভাবনা কতটা !! (১)

 বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
প্রথমেই কোনোরকম সংশয় না রেখেই বলা ভাল আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনের আগে যদি পুর নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয় তাহলে একটা বিচিত্র গোলমেলে ফলাফল সামনে উঠে আসা সম্ভব।

বিধানসভা নির্বাচনকে এই গোলমেলে পুর নির্বাচনের ফলাফল বেশ খানিকটা প্রভাবিত করবে। যদিও পুর নির্বাচনের সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য থাকেই। খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে অত্যাল্প ভোটারদের কাছে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতার পরীক্ষা হয় পুর-পঞ্চায়েত নির্বাচনে। বিধানসভার মতো বৃহত্তর পরিসরে সে অঙ্ক খুব একটা খাটে না। ফলে পুর পঞ্চায়েত নির্বাচনকে যারা সেমিফ্ইান্যাল হিসেবে চিহ্নিত করেন তাদের মনে করিয়ে দেব গত লোকসভা নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৫% নমিনেশন আটকেও বিরোধীশূন্য ক্ষমতা অর্জন করতে না পারলেও তৃণমূল বিপুল জয় ছিনিয়ে নিতে পেরেছিল। কিন্তু অল্পদিনের ব্যবধানে লোকসভা নির্বাচনকে সেই পঞ্চায়েতের ফলাফল বিন্দুমাত্র প্রভাবিত তো করতেই পারে নি বরং মারাত্মক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল--যার ফলে এক আধটা নয়--এক লপ্তে ১৮-টা লোকসভা আসন ছিনিয়ে নিয়ে তৃণমূলকে অপ্রত্যাশিতভাবে পথে বসিয়ে দিয়েছিল ! এটাই ছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনের নেতিবাচক প্রভাব !
ঠিক এই জায়গাতেই মনে পড়ছে এবিপি আনন্দের লোকসভা ভোট সমীক্ষার কথা। তারা প্রগাঢ় জ্ঞানী ভোট সমীক্ষকদের দিয়ে যে সম্ভাব্য ফলাফল সামনে এনেছিল তাতে তাদের অনুমান ছিল বিজেপি চারটে আসন পাবে ! তৃণমূল বিজেপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলোকে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিয়ে ড্যাং-ড্যাং করে জিতে যাবে এবং সংসদে কিং-মেকার তো বটেই--কিং-ও হয়ে যেতে পারে ! ঐ একই সময় আমি গোটা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে বলেছিলাম--বিজেপি ১৬ থেকে ১৮-টি আসন পেতে পারে। স্বভাবতঃই আত্মতুষ্টির চূড়ায় দোল খেতে অভ্যস্ত তৃণমূলের চুনোরা বেজায় ক্ষেপে গিয়েছিল। আমাকে রাজনৈতিক বোধবুদ্ধি ও কাণ্ডজ্ঞানহীন ফালতু বিশ্লেষক হিসেবে চিহ্নিত করতে একটুও দেরি করে নি। অনেক আঁতেল দিগ্গজও আমার লেখা বা বিশ্লেষণকে রীতিমতো কটাক্ষ করে নিজেদের  জ্ঞানগম্যি যে ভঙ্গিতে ও ভাষায় প্রকাশ করেছিলেন তাতে আমি অবাক হই নি। কারণ, রাজনীতি যে সকলেরই হজম শক্তিকে সুরক্ষা দিতে পারে না আমি তা আমার অভিজ্ঞতা থেকেই জেনে এসেছি। এবিপি যখন বলছে বিজেপি চারটে আসন পেতে পারে--তখন আমি বলছি বিজেপি ১৬ থেকে ১৮ আসনে পেতে পারে এবং তৃণমূল ২০ থেকে ২২-টি আসন পেতে পারে ! না এর মধ্যে কোনো গল্প ছিল না। গত বছরে করা আমার ঐ রাজনৈতিক বিশ্লেষণ এ বছরে একই দিনে ফেসবুক ফিরিয়ে দিয়েছিল--যারা দেখার তারা দেখছেন নিশ্চয়ই। আমি কি জানতাম না, এবিপি’র অনুমানের সঙ্গে আমার অনুমানের মধ্যে অস্বাভাবিক দূরত্ব থাকলে আমাকে কেউ ছেড়ে দেবে না? চামড়া ছিঁড়ে নেবে? আমি সেটা জানতাম এবং জেনেশুনেই আমি আমার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ভিত্তিক সমীক্ষার ফলাফল ফেসবুকে প্রকাশ করেছিলাম। আত্মতুষ্টির চূড়ায় দোল খেতে থাকা তৃণমূল এবং প্রায় অপ্রাসঙ্গিক এবং চর্চার বাইরে চলে যাওয়া বাতেলাবাজিতে সিদ্ধমুখ সিপিএম ও কংগ্রেস যেটা জানতো না সেটা হল--এবিপি’র নিজস্ব রাজনীতি ! চূড়ান্ত মুহূর্তে এবিপি জানিয়ে দিল বিজেপি চারটে আসন পেতে চলেছে--এই ঘোষণায় মারাত্মক দুটি প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল তৃণমূল ও বিজেপি’র মধ্যে। আত্মতুষ্ট তৃণমূল দিল্লিতে বাঙালি প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানকে কীভাবে বিশ্বব্যাপী উদযাপন করবে তাই নিয়েই মত্ত হয়ে গেল। এটা যে কতটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে তা বুঝে ওঠার মতো ন্যূনতম রাজনৈতিক জ্ঞান তারা হারিয়ে বসেছিল। বিজেপি ঠিক যেটা চেয়েছিল--এবিপি সেটাই করে দিয়ে তাদের বেশ কিছুটা এগিয়ে দিয়েছিল। বিজেপি রাজ্যে চারটের বেশি আসন পাচ্ছে না এবং কেন্দ্রে বিজেপি যদি কোনোক্রমেও ক্ষমতায় আসে এনডিএগতভাবে তাহলেও বহু দলকে নিজেদের দিকে টানতে হবে বহুমূল্যের বিনিময়ে--এটাই ছিল এবিপি’র সমীক্ষা। আমি তখন পূর্বাভাস দিচ্ছি বিজেপি একাই ২৯০ থেকে ৩০০ আসন পেতে চলেছে এবং এনডিএগতভাবে ৩৩০ থেকে ৩৩৩ আসন পেতে পারে ! ফলে আমাকে কাণ্ডজ্ঞানহীন যদি তুড়িয় মেজাজে থাকা রাজনৈতিক পণ্ডিতরা বলেও থাকেন--আমি তাদের কাণ্ডজ্ঞানের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই দোষারোপ করতে পারি নি।
এবিপি ফের প্রায় একই রকম কাজ করে বসলো সম্প্রতি। গোটা দেশ তথা রাজ্য যখন করোনা, আম্ফান ও পরিযায়ী শ্রমিক সমস্যায় জেরবার হচ্ছে--ঠিক তখনই এবিপি তাদের অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন সমীক্ষকদের দিয়ে সমীক্ষা করিয়ে জানিয়ে দিল একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ফের ড্যাং-ড্যাং করে জিতে এসে ক্ষমতায় বসতে চলেছে। প্রবল নাচনকোদনও সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল আত্মতুষ্টির চূড়ায় দোল খেতে অভ্যস্ত তৃণমূলের অংশবিশেষে--এবিপি তো বলেই দিয়েছে আমরা ক্ষমতায় ফিরছি--কিস্যু করতে পারবে না বিজেপি ! সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে পড়ে গেল গত লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তাদের সমীক্ষার ফলাফলের কথা ! এত তাড়াতাড়ি এই আয়োজন কেন? তৃণমূলকে আরও তুড়িয় মেজাজে তুলে দেওয়ার জন্য? নেতিবাচকতাকে ভুলিয়ে দিয়ে ইতিবাচকতার অলীক জগতে তৃণমূলকে খুব সহজেই যে নিক্ষেপ করা যায় এটা বাংলার অধিকাংশ মিডিয়া খুব ভালভাবেই জানে। নেতিবাচকদিকগুলো ভুলে সবকিছুই ইতিবাচক মনে করলে যে বিজেপি’র বিশেষ লাভ--এটা প্রভাবশালী মিডিয়ার একাংশ খুব ভাল করেই জানে ও বোঝে। তৃণমূল যে ফাঁদে  পা দেবেই এটা তাদের অজানা নয়। এর পেছনে একটাই উদ্দেশ্য--কেন্দ্রের কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন।
সে যাইহোক, তৃণমূলের কথায় পরে আসবো। এখন বিজেপি’র হালহকিকৎটা একটু বুঝে নেওয়া যেতে পারে। প্রথমেই যেটা বলে দেওয়া ঠিক নয়--আমি সেটাই বলে দিয়ে বিশদ বিশ্লেষণে যাব। এই মুহূর্তে যদি বিধানসভা নির্বাচন হয় তাহলে বিজেপি ৪০ থেকে ৫৪-টার বেশি আসনে জেতার জায়গায় নেই। তার মানে অবশ্য এই নয় যে তৃণমূল ২৪০-টা আসনে হাসতে হাসতে জিতে যাবে। রাজ্য রাজনীতিতে একটা চমকপ্রদ নতুন রাজনৈতিক সমীকরণও তৈরি হতে পারে যার ধাক্কায় একুশের ফলাফল ত্রিশঙ্কু হয়ে ঝুলে থাকতে পারে। তেমনটা হলে কে কোনদিকে যাবে সেটা এত তাড়াতাড়ি বলা খুব কঠিন। আমার কাছে এখনও পর্যন্ত যত রকমের খবরাখবর রয়েছে তাতে আমার মনে হতেই পারে--বেশ কিছু বীতশ্রদ্ধ এবং টিকিট না পাওয়ার সম্ভাবনায় অস্থির তৃণমূল নেতা সদলবলে দল ছাড়তে চলেছেন। কিন্তু বিজেপিতে যাচ্ছেন--এমন সিদ্ধান্ত তারা নিয়ে ফেলেছেন এমনটা কিন্তু এখনও স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে বিজেপি থেকেও বেশ কিছু আরএসএস প্রভাবমুক্ত পুরোপুরি বাঙালিয়ানার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী নেতাও সদলবলে বেরিয়ে আসতে পারেন। এলেও তারা তৃণমূলে যাবেন এমনটাও এখনও নিশ্চিত নয়। এ রকমই কিছু সিপিএম ও কংগ্রেসও দল ছাড়লেও তৃণমূল বা বিজেপিতে যাচ্ছেন বলে খবর নেই।
এখন প্রশ্ন হল--তৃণমূল বা বিজেপি থেকে দলত্যাগের সম্ভাবনাটা কেন তৈরি হচ্ছে? সেই ব্যাপারটাই আগে বুঝতে হবে।
(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.