Header Ads

প্রকৃতির প্রতিশোধ বড় নিষ্ঠুর

শুভ সুন্দর দেব চৌধুরী, বদরপুর 
জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের সবুজ সমারহ নিয়ে বরাকবঙ্গে চিরকালের মতো থাকতে চাইছি আমরা। এখনও বরাকের পাহাড়ি জঙ্গল ফুরিয়ে যায়নি, যা আছে, তার শেষরক্ষা করার দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখাটা আজ খুবই প্রয়োজন। বরাকবঙ্গের বনাঞ্চল নানা প্রজাতির গাছ-গাছড়া, পশু-পক্ষী,  বনৌষধি সহ ঘন সবুজায়নে ঘেরা ছিল। কিন্তু আজ তা বিলুপ্তপ্রায়। আমরা ধরে রাখতে পারিনি পুরান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটুকু। যেখানে নানা প্রজাতির পাখিরা ঝাঁকেঝাঁকে ঝুলে  থাকতো পুরোনো গাছের ডালে। গাছপালা গুলো ছিল তাদের আশ্রয়স্থল তথা শান্তির জায়গা। সবুজ ধ্বংসকারি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে বিলুপ্ত হতে চলেছে সবুজ ঘন অরণ‍্য।
সম্প্রতি, কেরলের মালাপ্পু্রমের অন্তঃসত্ত্বা হাতির নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা সমগ্ৰ দেশ তথা আমাদের বরাক উপত্যকার পরিবেশপ্রেমী মানুষের কাছে এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। পুরানোকাল থেকেই পরিবেশ রক্ষা ও গাছের পূজার্চনা, বৃক্ষরোপণ,পশু-পক্ষীদের দানা-পানি দেওয়া রেওয়াজ  ছিল ভারতীয় সাংস্কৃতিতে। আমাদের ভারতীয় সংবিধানের 51 (জি) ধারায় মতে "প্রতি জন ভারতীয় নাগরিক বন এলাকা,পরিবেশ,বন‍্যপ্রানী, নদ-নদী, হ্রদ,খাল,বিল আদির সুরক্ষা উন্নতি সাধন করতে বাধ্য"। বনাঞ্চল ও পশু-পক্ষীদের  সুরক্ষা আমাদের সংবিধানিক দায়িত্ব। আজ থাকে ৪৮  বছর আগে ৫ই  জুন ১৯৭২ সালে স্টকহোমে অনুষ্টিত ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন দ‍্য হিউম‍্যান এনভায়রনমেন্টর দাবি সনদে পৃথিবীর সব দেশকে বনধ্বংসের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে সাবধান করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক কেরলে হাতির বর্বরোচিত হত্যা এক অতি লজ্জাজনক ঘটনা। কুচক্রী উর্ব্বর মস্তিষ্কের মানুষের এ অমানবিক আচরণের ঘটনাকে ধিক্বার জানাচ্ছেন পশুপ্রেমী সহ গোটা দেশের জনসাধারণ ও লেখক নিজেও। সেইসঙ্গে, অতিসত্বর হাতি হত্যা চক্রকে  চিহ্নিত করে কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি  দিতে আওয়াজ উঠেছে সর্বত্র। এরূপ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রতি সর্বদা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে বনবিভাগের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে পশুপ্রেমী সহ গোটা দেশের জনসাধারণ।
সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ নিজের  কর্মফলের জন্য দায়বদ্ধ। বিপর্যস্ত বা সময়ে সময়ে দূ্র্যোগের বেহাল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সর্বত্র ত্রাহি ত্রাহি রব। নেই কোনো প্রতিষেধক ঔষধ । আমরা  সবাই গৃহবন্দী। সরকারি স্বাস্থ্যদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ মতো বাঁচার পথ মেনেই চলছি। বর্তমানের এ অবস্থার দায়বদ্ধতাও আমাদেরই।
আমরা আজ আধুনিক যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির চরমে শিখরে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি। অন্যদিকে কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি, বন্যা, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের সভ্যতাকে গ্ৰাস করতে চলছে। প্রকৃতির এ রোষানল থেকে আমরা কতটুকু নিজেদেরকে বাঁচতে পারছি বা পারব ? আমরা নিজেদের স্বার্থ তাগিদে বন-জঙ্গল, অরণ্য, পশু-পক্ষী, গাছপালা, পাহাড়-পর্বত তথা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করছি। শিল্পায়নের প্রয়োজনে প্রাকৃতিক সম্পদকে ধ্বংস করেই শহর থেকে নগর, নগর থেকে মহানগর তৈরি করা চলছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে গাড়ি-ঘোড়া, কল-কারখানাগুলোরও প্রয়োজনে বাড়ছে। কিন্তু, সঙ্কুচিত হচ্ছে সবুজ ঘন অরণ‍্য। 
বর্তমান পৃথিবীতে 'পরিবেশ' এক প্রাসঙ্গিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাগতিক উন্নয়নের সঙ্গে  প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিধি ছোট হচ্ছে । 'দূষণ'-র  কালো ছায়া চারিদিক থেকে আমাদের ঘিরে ধরেছে। একবারও কিন্তু আমরা চিন্তা করছিনা - কেন আমরা আজ প্রকৃতির পরিবেশ ভারসাম্য হারাতে বসেছি ? উত্তর অনেক কিছুই হতে পারে। তবে, এটা সত্যি যে, প্রকৃতিকে নষ্ট  করলে, প্রকৃতি তার জবাব দেবেই। শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে প্রকৃতি রক্ষার দায়বদ্ধতার কথা আজ আমরা মাথায় রাখতে চাইছি না। এ শুধু নিজেদের স্বার্থের তাগিদে। উন্নয়নের দোহাই দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে রাতারাতি পাহাড়, টিলা, বন, জঙ্গল আদি অবৈজ্ঞানিক ভাবে প্রতিদিন ধ্বংস করে দিচ্ছি। গাছপালা, বৃক্ষদি  ছেদন করে  ছোট-বড় বনাঞ্চল বিনষ্ট করার এক অসুস্থ মানসিকতা গড়ে তুলছি। 
সম্প্রতি বরাক উপত্যকায় ভূমিষ্ফলনের কারণে অনেক পরিবারের লোকদের প্রাণ চলে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে।এধনের মৃত্যুর মৌলিক কারণগুলো নিয়ে তদন্তের খুব প্রযোজন। অবৈজ্ঞানিক ভাবে টিলামাটি কাটার জন্য কি প্রায়ই এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে?
তাছাড়া, অরণ্যের পশুপাখি, জীবজন্তু, গাছপালা, কীটপতঙ্গ কিছুকেই রেহাই দিচ্ছে না  স্বার্থপর মানুষ । পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার ফলে ভালো ভাবে বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিতে পারছে না জীবজগত তথা প্রাণীজগতও। আজকাল প্রায়ই  জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে সংঘাতের চিত্রটি সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে।বনদস্যুদের দাপটে ও জনবিষ্ফোরণে জীবজন্তুরা খাদ্যের তাগিদে লোকালয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া,  শব্দদূষণের বিকট আওয়াজে বন্যপ্রাণীগুলি স্বস্তিতে নেই বনাঞ্চলেও। বরাকের মধ্যে বড়াইল অভয়ারণ্য থাকা সত্ত্বেও পশুপাখিদের নিরাপদে বিচরণ করার মতো পরিবেশ তথা তাদের রক্ষণাবেক্ষণের সঠিক মূল্যায়ন কতটুকুইবা হচ্ছে?  না শুধু নামেই বড়াইল এক অভয়ারণ্য? 
কোন পশুপাখি বনাঞ্চল থেকে লোকালয়ে এসে ধরা পড়লে, তাদেরকে বনবিভাগের সাহায্যে বড়াইল অভয়ারণ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরে মুক্তিপ্রাপ্ত পশুরা কীভাবে বেঁচে আছে তার খবর কেউ রাখছে নাকি? 
বতর্মান বরাকের বড়াইল অভয়ারণ্য সমস্যা নিয়ে অসমের বনমন্ত্রীর আরো সুদৃষ্টির প্রয়োজন আছে বলে পশু-পক্ষী প্রেমীরা মত পোষণ করেন ।

[লেখক নয়া ঠাহর নিউজ পোর্টালের বরাক ব্যুরো চিফ, মোবাইল - ৯৪৩৫২৭৬৫০৩ (হোয়াটস্যাপ)।]

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.