"প্রতিবাদ"
সম্পাদক, সমীপেষু
প্রতিবাদ শব্দ টা শুনতে খুব ভালো লাগে,
আমরা ছোটবেলা থেকেই বারবার শুনতে অভ্যস্ত অন্যায় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত্ । আমরা সবাই কম বেশি প্রতিবাদ করতেও শিখেছি ছোটবেলা থেকেই। যেমন দুধে মিষ্টি কম হলে হাত পা ছুঁড়ে প্রতিবাদ করেছি তরকারি তে ঝাল হলে, ডালে নুন কম হলে, ভাই বোনের মধ্যে ভালো লাগা খাবারের ভাগ কম বেশি হলে তীব্র প্রতিবাদ করেছি।তারপর স্কুলে যদি কেউ না বলে রবার বা পেনসিল নিয়ে নিতো তাহলে তো সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পরে প্রতিবাদ যা হত তা আর এখন বলা যাবে না।সবাইকে না হয় নিজের নিজের মনের কোনে জমে থাকা স্কুলের স্মৃতি গুলো মনে করে হাসতে সুযোগ করে দিলাম।
কিন্তু যেমন যেমন বড় হয়ে উঠলাম প্রতিবাদ টা কখন যে স্বার্থপরতার পর্যায়ে নেমে এল টের ও পেলাম না। এখন আমরা প্রতিবাদ করি কিন্তু তার পিছনে হয়তো আমাদের স্বার্থ আর মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা জেলাস ভাবনাটা কাজ করে। "হয়তো" কথাটা লিখলাম কারন এখনও হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ আছেন যাঁরা বিনাস্বার্থে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেন। যদিও তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে তাঁদের কে প্রতিনিয়তই "ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর" প্রবাদ বাক্য টি শুনতে হয় । এখন প্রতিবাদের ধরন আমূল বদলে গেছে,
এখন প্রতিবাদ, জেলাস আর নিন্দা সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে ।এখন সামনে থেকে দাঁড়িয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস বা ইচ্ছে কোনোটাই নেই বললেই চলে । এখনও প্রতিবাদ হয় সাংঘাতিক ভাবে প্রতিবাদ হয় কিন্তু সবই মোবাইল ফোনে, হোয়াটস অ্যাপ আর ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায় যদিও ঝড় বললে বোধহয় ভুল বলা হবে "সাইক্লোন" বয়ে যায়, কেউ আবার যদি বিরুদ্ধে কিছু মন্তব্য করেছেন কি ফেঁসেছেন একেবারে রীতিমতো বোমা বর্ষণ শুরু হয়ে যাবে, যদিও সবই ঐ মোবাইল ফোনে । এখন সামনে দাঁড়িয়ে জটলা করে অন্যায়ের প্রতিবাদ যে একেবারেই হয়না তা নয়, হয় কিন্তু প্রতিবাদের বিষয় গুলো নগন্য ও জঘন্য যেমন অন্য পাড়ার ছেলে এসে নিজের পাড়ার মেয়ে র সাথে রোজ কথা বললে প্রতিবাদ হয় পাশের বাড়ির ঝি একটু বেশি কাজের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রতিবাদ হয় উপরের বা নীচের ফ্ল্যাটের লোক যদি একটু বেশি জল খরচ করে দেয়, প্রতিবেশীর কুকুর যদি বাড়ির সামনের রাস্তায় প্রাতঃকৃত্য সেরে ফেলে তাহলে তো তীব্র ভাষায় তার প্রতিবাদ হয় সে ভাষা এখানে লেখা যাবে না। এই থেকেই বোঝা যায় প্রতিবাদের গন্ডি টা কত ছোট হয়ে গেছে । এখন মানুষ আপস করতে শিখেছেন তাই প্রতিবাদ হয়না দিনের পর দিন রাস্তায় বৃষ্টির জল জমে থাকলে প্রতিবাদ হয় না, দিনের পর দিন ড্রেনের মুখ প্লাস্টিক বোঝায় হয়ে বন্ধ পরে থাকলে প্রতিবাদ হয় না,
ফুটপাত ঘিরে দোকান ঘর বানিয়ে নিলে প্রতিবাদ হয় না, কয়েক দিন ধরে এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে থাকলে প্রতিবাদ হয় না বাসের ভাড়া বাস মালিক রা নিজের ইচ্ছে মত বাড়িয়ে নিলে প্রতিবাদ হয় না, কারন এই সব সমস্যা গুলোই সামূহিক সমস্যা, তাই এসবের দায়িত্ব টা না হয় অন্যের জন্য তোলা থাক।বললাম যে মানুষ এখন আপস করতে শিখেছেন শিক্ষিত হয়েছেন সাথে সাথে অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিরদাঁড়া সোজা করে সামনে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।তাই নিজেকে আড়ালে রেখে সোশাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড়,
থুড়ি সাইক্লোন বইয়ে দেয়।।
-বিশ্বরূপ সেনগুপ্ত,
জামালপুর,
মুঙ্গের,বিহার









কোন মন্তব্য নেই