শনবিলের পূর্বাঞ্চলে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন : আজও অধরা
জপমালা চক্রবর্তী, হাইলাকান্দি
: শনবিলের
পূর্বাঞ্চলে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের গণদাবিকে উপেক্ষা করার ঘটনার জেরে ব্যাপক
প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি, করিমগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ সম্পর্কিত
একটি টেন্ডার নোটিশ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করলেন শনবিল পূর্বাঞ্চল মেডিক্যাল
কলেজ ডিমাণ্ড কমিটির কর্মকর্তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এক বৈঠকে বসে ওই
টেন্ডার নোটিশ নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জিলার মধ্যবর্তী
স্থান হিসেবে শনবিল, উভয় জিলার মধ্যবর্তী স্থান হওয়ার
পাশাপাশি প্রচুর খাস জমি সমৃদ্ধ এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকার সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল
কলেজ স্থাপন করার আদর্শ জায়গা হওয়া সত্ত্বেও কোন যুক্তিতে তা বাদ পড়তে চলেছে তা
নিয়ে প্রতিবাদ ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছে। কমিটির কার্যকরী সভাপতি সুমন্ত দাসের
পৌরহিত্যে হাইলাকান্দিতে আয়োজিত এই বৈঠকে প্রেমাংশু শেখর পাল, কল্লোল
চৌধুরী, সুশীল পাল, রঞ্জিত ঘোষ, হরিমোহন
রাজভর-রা জানান, সাম্প্রতিক ওই টেন্ডার নোটিশে
রয়েছে করিমগঞ্জ জিলা সদরের হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন
প্রসঙ্গ। তাছাড়া, বিগত দুই বছর ধরে শনবিলের সরকারি
খাস জমিতে করিমগঞ্জের প্রস্তাবিত মেডিক্যাল কলেজটি স্থাপনের দাবিতে রামকৃষ্ণনগর
সার্কল অফিসে ধর্ণা কর্মসূচি, করিমগঞ্জ জেলাশাসকের কার্যালয়ের
সামনে প্রায় হাজারখানেক পুরুষ ও মহিলার অবস্থান কর্মসূচি সহ একাধিক কার্যক্রম করে
আসছে ডিমান্ড কমিটি। প্রসঙ্গত, অসমে কংগ্রেস শাসন যুগের অবসান হয়
2016 সালে। এরপরে শাসনে আসে বিজেপি সরকার। সম্প্রতি, কেন্দ্রীয়
সরকারের দ্বিতীয় পর্যায়ের ১ম বর্ষপূর্তি ও রাজ্য সরকারের চতুর্থ বর্ষপূর্তি
উপলক্ষ বিভিন্ন কার্যসূচির মাধ্যমে পালন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ উপলক্ষে
বর্তমান সরকারের কার্যকাল নিয়ে আলোচনা সভা ছাড়াও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের
মাধ্যমে বাস্তবায়ন বা রূপায়ণ করা প্রকল্পের খাতিয়ান ও তুলে ধরা হয় জনগণের
কাছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাস্তবায়িত হওয়া প্রকল্পের তালিকায় শনবিলে
পূর্বাঞ্চল মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন হয়েছে বলে এমন প্রকল্পের উল্লেখ নেই।
বিগত রাতাবাড়ি বিধানসভা নির্বাচনে
কংগ্ৰেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া প্রভাবশালী মন্ত্রী তথা বর্তমান
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি থেকে বেরিয়েছিল, যদি
অধিক ভোটে কংগ্ৰেস থেকে আগত কৃপানাথ মালাহকে জয়ী করা হয় তবে, রাতাবাড়িতে
একটি মেডিক্যাল কলেজ উপহার হিসেবে দেওয়া হবে।
নিজেদের স্বপ্নপূরণের আশায় রাতাবাড়ির জনগণ অসংখ্য ভোটে জয়ী করলেন
কৃপানাথ মালাহকে। পাঠানো হলো অসম বিধানসভায়। সেখানে বিধায়ক থেকে নির্বাচিত হলেন
অসমের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে। শুধু তাই
নয়, বিগত লোকসভা ভোটেও বিজেপি প্রার্থীকে দুই জিলার জনগণ উজাড়
করে ভোট দিয়েছিলেন। কিন্তু উভয় জিলার
সুবিধার্থে শনবিলের পূর্বাঞ্চলে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের স্বপ্ন আজও অধরা।
নির্বাচনের আগে শনবিল অঞ্চলে
প্রতিশ্রুতির উপর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিয়ে ভোট আদায় করা হয়, এরপর
নির্বাচন শেষ হলে প্রতিশ্রুতির কথা বেমালুম ভুলে যান। এমন
কথাও এদিনের বৈঠকের আলোচনায় প্রাধান্য পায়। এছাড়া, বিগত
দিনে ডিমান্ড কমিটির পক্ষ থেকে দিসপুরে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব
শর্মার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তখন এক্সপার্ট টিম যথাসময়ে ওই অঞ্চলে
গিয়ে মেডিক্যাল কলেজটি স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচন করবে বলে আশ্বাস প্রদান
করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও এক্সপার্ট টিম তো আসেইনি বরং উল্টো টেন্ডার নোটিশ
দেওয়া হয়ে গেল বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ডিমান্ড কমিটির কর্মকর্তারা। তাছাড়া তারা
আক্ষেপের সুরে জানান যে, নির্বাচনের সময় তারা গালভরা
প্রতিশ্রুতির বুলি আওড়ালেও বাস্তবে কতটুকু তা রক্ষা করেন তারা সেটা, সহজেই
অনুমেয়।
আজ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর ধরে বিভিন্ন
সরকার এশিয়া খ্যাত শনবিলকে একটি ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতি
দিয়ে আসছে। শনবিল তথা রাতাবাড়ির জনগণ ভেবেছিলেন এবার অন্তত জনগণের সরকার বলে
নিজেদের জাহির করা (সবকা সাথ সবকা বিকাশ) এই সরকার কথা রাখবে। কিন্তু
কার্যক্ষেত্রে তার উল্টো হলো। এখানেই শেষ নয়, বিগত উপনির্বাচনে যখন দেখা গেল
অসমের মুখ্যমন্ত্রী শনবিল অঞ্চলে নির্বাচনী ভাষণে বলেছিলেন যে, নির্বাচনের
একমাস পরে এসে শনবিলে একটি প্রজেক্ট ঘোষণা করবেন। কিন্তু এক্ষেত্রেও সরকারের
ব্যর্থতা আবার প্রমাণ হলো। তাছাড়া, বিগত সেপ্টেম্বর মাসে
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা যখন করিমগঞ্জে এসেছিলেন তখন শনবিল
পূর্বাঞ্চল ডিমান্ড কমিটির কর্মকর্তারা তার সঙ্গে দেখা করেন এবং বৃহত্তর বদরপু্র
পল্লী ও নগর বিকাশ পরিষদের পক্ষ থেকে কল্লোল মজুমদার সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা এই
দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি উনার হাতে তুলে দিলে উনি বলেন নভেম্বর মাসে এসে মেডিক্যাল কলেজের ব্যাপারে
বিহিত ব্যবস্থা নেবেন বলে একই আশ্বাস দেন। ফলে, শনবিলের
মানুষ যে তিমিরে ছিলেন, সেই তিমিরেই রয়ে গেলেন। আবার ভোট
এলে শুনা যাবে প্রতিশ্রুতির বুলি। এখন
জনগণই বিচার করুন তাদের সঙ্গে কি দিনের পর দিন প্রতারণা করা হচ্ছেনা? শনবিল
অঞ্চলে মেডিক্যাল কলেজ গড়ে উঠলে উভয় জিলার মানুষ উপকৃত হতেন, উপকৃত
হতেন বৃহত্তর বদরপুরবাসীও। তাছাড়া, এখানে
একটা ট্যুরিজম গড়ে উঠতো, সেইসঙ্গে এতে সরকারের আয় ও
বাড়তো। এইভাবে একটি গণদাবিকে এই সরকার উপেক্ষা করছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন
ডিমান্ড কমিটির কর্মকর্তারা।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আয়োজিত
ডিমান্ড কমিটির বৈঠকে সাম্প্রতিক এই সরকারি বিজ্ঞপ্তির তীব্র প্রতিবাদ জানানো হবে
বলে সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করা হয় এবং এ ব্যাপারে পর্যায়ক্রমে তীব্র থেকে তীব্রতর
আন্দোলনের পথে ধাবিত হওয়ার সিদ্ধান্ত ও গ্ৰহণ করা হয়েছে বলেও ডিমান্ড কমিটির
সুত্রে খবরটি প্রকাশ।










কোন মন্তব্য নেই