বিজেপি আমলেও বরাক উপত্যকা উপেক্ষিত
শিলচরঃ আসামে সম্প্রতি বিভিন্ন বিভাগে চাকরি হয়েছে। এই লকডাউন এর মধ্যেও এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্ট ১১১ জন চাকরি পেয়েছে। কিন্তু বরাক উপত্যকার একজন নেই। রুরাল হেলথ মিশন ১৬ জনে চাকরি হয়েছে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে। প্রতিবন্ধীদের চাকরি দেওয়া হয়েছে প্রায় ২০০ জনকে। কিন্তু বরাক উপত্যকার একজনের স্থান হয়নি। তার মানে কি এই যে বরাক উপত্যকায় একজনও যোগ্য প্রতিবন্ধী নেই। বরাক উপত্যকায় কম করেও ১০০০০ যোগ্য প্রতিবন্ধী প্রার্থী রয়েছে। তাদের চাকরি পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। নার্সে জন্য চাকরি দেওয়া হয়েছে ৩০০ জন। বরাক উপত্যকার কি কেউ ছিল না। কিন্তু প্রতিবছর মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকে মেধাতালিকায় স্থান পাচ্ছে অনেক ছাত্র-ছাত্রী। অথচ স্বাস্থ্যমন্ত্রী নির্বাচনের আগে এই বরাক উপত্যকায় এসে জনসভায় বলেছিলেন যে বরাকে চতুর্থ এবং তৃতীয় শ্রেণীর যত চাকরি দেওয়া হবে সব বরাক উপত্যকা থেকে দেওয়া হবে। কিন্তু একজন চাকরি পেল না। কোথায় গেল মুখ্যমন্ত্রীর বরাক বম্মপুত্র সমন্বয়। এই কি সমন্বয় নমুনা। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে যে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বসে সমস্ত চাকরি দেওয়া হয় এবং তাদের ট্রান্সফার করে বরাক উপত্যকায় পোস্টিং দিয়ে দেওয়া হয়। বরাক উপত্যকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে লাঞ্ছিত বঞ্চিত এবং তারা প্রতারণার শিকার হয়েছে এবং তারা প্রতিটি ব্যাপারে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার থেকে বঞ্চিত বৈষম্যের শিকার হয়েছে এই যদি চলতে থাকে তাহলে বরাক উপত্যকার মানুষকে ভিন্ন পথের কথা চিন্তা করতে হবে। সময় হয়েছে যে আমরা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার থেকে যদি ভাবে বঞ্চিত এবং বৈষম্যের শিকার হতে থাকি তাহলে আমরা আসামের সঙ্গে থাকবো কিনা সেটা এখন ভাবার সময় হয়েছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই নিয়োগপত্র গুলি যখন দেওয়া হয় তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন বরাকের সাংসদ সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি। কিন্তু বরাক উপত্যকার এই বৈষম্যের জন্য একটি কথাও বলেননি। শুধু তাই নয় এতগুলো নিযুক্তি দেওয়া হচ্ছে তারপরও একটি শব্দ নেই। এইভাবে বঞ্চিত হচ্ছে বরাকের ছেলেমেয়েরা। শাসকদলের রহস্যটা কি। তাহলে কিসের জন্য আমরা এই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছি আজকে প্রশ্ন উঠেছে। একমাত্র কমলাক্ষ্য শিলাদিত্য ছাড়া এই বাঙ্গালীদের সমস্যা এবং উপত্যকার সমস্যা নিয়ে কেউ মুখ খুলে না। এটা অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় বরাকের মানুষ এখনো কেন ঘুমিয়ে আছেন জেগে উঠুন প্রতিবাদ করুন। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এর মুখে সবসময় সমন্বয়ের কথা,
উনি ঘনঘন বরাক উপত্যকার সফর করেন কিন্তু কাজের বেলায় কিছুই নেই। বরাক উপত্যকার সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে বরাক উপত্যকার প্রতি এভাবে বৈষম্য করা চলতে থাকে তাহলে মানুষ কেন আসামের সঙ্গে থাকবেন। একটা হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন করার জন্য আজকে প্রায় ২৫ বছর ধরে আন্দোলন চলছে। কিন্তু এই হাইকোর্টের বেঞ্চ কেন হচ্ছে না সেটা আমি জানিনা। হাইকোর্টের বরাক উপত্যকা থেকে ৩০% লোক মামলার জন্য যান। কিন্তু শিলচরে হাইকোর্টের বেঞ্চ এর পরিকাঠামো রয়েছে। ভালো ভালো আইনজীবীরা আছেন। তারপরও হাইকোর্টের বেঞ্চ শিলচরে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের বেঞ্চে রয়েছে উত্তরবঙ্গে। উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে গিয়ে যাতে কষ্ট করতে না হয় তার জন্য শিলিগুড়িতে বেঞ্চ স্থাপন করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টের বেঞ্চ আছে। কিন্তু গৌহাটি হাইকোর্টের বেঞ্চ শিলচরে স্থাপন হতে কিসের বাধা রয়েছে। গুয়াহাটিতে আমাদের যোগাযোগের অনেক অসুবিধা রয়েছে। উকিলের সঙ্গে এবং বিচার বিভাগীয় সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে যে ভাষার প্রয়োজন সেই ভাষার ব্যাপারে সমস্যা হয়। যারা যান তাদের থাকা-খাওয়ার সমস্যা হয়। মামলা কারনে তারা দালালের হাতে প্রতারিত হন। কিন্তু হাইকোর্টের একটা বেঞ্চ হওয়ার জন্য আজকে পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেই। ভাষার শহীদ স্টেশন নামাকরণ এর জন্য দিল্লি থেকে সমস্ত ক্লিয়ারেন্স চলে এসছে। কিন্তু ফাইল আটকে পড়ে আছে দিসপুরে। বাঙ্গালীদের স্বীকৃতি দিতে কিসের আপত্তি। যেখানে সারা আসামে অসমীয়া চালু করেছে, বরাক উপত্যকা এবং বড়োলেন্ডে ভাষা বাংলা এবং বড়ো ভাষা রেখেছে সেটা ভালো কথা। কিন্তু এই ভাষা শহীদদের নিয়ে মানুষের সেন্টিমেন্ট রয়েছে। ১৯৬১ র শহীদের কথা মানুষ ভুলতে পারেনা। তাদের স্মৃতিতে একটা ভাষা শহীদ স্টেশন এর ফাইটার কেন আটকে আছে। এই ব্যাপারে বরাকের মন্ত্রী , বিধায়করা কি ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নেতারা কেন মুখ খুলে না এটা আমার প্রশ্ন।
প্রদীপ দত্ত রায়
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আকসা
আইনজীবী গৌহাটি হাইকোর্ট।
কোন মন্তব্য নেই