পরিযায়ী শ্রমিকরা আর ইন্ডিয়ান হতে পারলেন না, ভারতীয় হয়েই থেকে গেলেন, তাই তাদের এত অবজ্ঞা, এত অবহেলা
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি
আমরা স্বাধীন ভারতের নাগরিক। প্রায় ১৩৮ কোটি
জনসংখ্যা। এক সমীক্ষা
অনুযায়ী এই বৃহৎ জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক। ৯৩ শতাংশ বিভিন্ন শিল্পে অসংগঠিত শ্রমিক। ৮৫ শতাংশ ঠিকা শ্রমিক। ঠিকা শ্রমিকেরা কোন রাজ্যের কেউ জানেনা। না কেন্দ্রীয় সরকার, না রাজ্য সরকার- কারো হাতে কোনো পরিসংখ্যান বা হিসাব
নেই। নিজেদের রাজ্যে নূন্যতম সুযোগ সুবিধা না পেয়ে জীবিকা নির্বাহের লক্ষ্যে অন্য
রাজ্যে পাড়ি দেয় এবং নানা ক্ষেত্রে ঠিকা শ্রমিক হিসাবে কাজ করে চলেছে। তার হিসাব কোনো
সরকারের হাতে নেই। তারা কত লক্ষ, কত কোটি হিসাব নেই। তারা যদি ভোটার হত তবে তাদের হিসাব থাকতো বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস বা সিপিএম সরকারের হাতে। দেশের সম্পদ এই পরিযায়ী শ্রমিকরা না-কি করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। লকডাউনের দুমাস ধরে খোলা আকাশের নীচে, রাস্তায়, রেল লাইনের পাশে দিন কাটছে তাদের। লকডাউন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঠিকা কাজ চলে
গেছে। ভাড়া ঘরের মালিক ভাড়া পাবে না ভেবে তাড়িয়ে
দিয়েছে। তারা হাঁটছে, দুমাস ধরে শুধু
হাঁটছেই আর গাড়ি চাপায় মরে পড়ছে। খাদ্য নেই, পানীয় জল নেই, সম্পূর্ণ অভুক্ত অবস্থায় শত শত মাইল হেঁটে
নিজেদের রাজ্যে ফিরতে চাইছে। অথচ নিজের রাজ্যের
শ্রমিকদের নিতে চাইছেন না দেশের অধিকাংশ মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সরকার নাকি পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
সেই টাকা কোথায় গেলো? কার হাতে? বিহারের মজফরপুর
রেল স্টেশনে পরিযায়ী শ্রমিক একজন মহিলার মৃতদেহ পড়ে আছে আর তার বছর দুয়েকের শিশুপুত্র
মায়ের গায়ের চাদর সরিয়ে মাকে দেখতে চাইছে। পাশে তার এক শিশুপুত্র
মায়ের দিকে চেয়ে রয়েছে।
শিশু দুটি জানেনা জন্মদাত্রী
মা আর নেই। এই মর্মান্তিক ছবি, দেখার পরও
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলোর বিন্দুমাত্র প্রতিক্রিয়া নেই। মৃতা মহিলা কোনো দলের
ভোটার নয়।
তাই পাহাড় সমান অবহেলা। দেশের মানুষের আঁধার কার্ড আছে। অথচ তাদের কি পরিচয়, তা কেউ জানে না। শ্রমিকদের হিসাব রাখতে গেলে তো
এক পরিসংখ্যান বিভাগ থাকা চাই। সব দপ্তর, সব
বিভাগ কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় তুলে দিয়েছে। দেশের পরিকল্পনা কমিশন তুলে দেওয়া
হয়েছে। সরকারের কি পরিকল্পনা- মানুষ অন্ধকারে, দেশের পরিয়াযী শ্রমিক কত আছে? কোন রাজ্যের কত শ্রমিক বাইরে কাজ করছে তা না কেন্দ্র জানে, না রাজ্য সরকার
জানে। কেউ বলছে দেশে ৮ কোটি পরিয়াযী শ্রমিক।কেউ বলছে ১০ কোটি। ওরা ভোটার নয়, তাই আদর নেই, আপ্যায়ণ নেই। ওরা ভারতীয়, তাই এত দুর্দশা। দেশের ৭২ জন মানুষের সম্পদ মাত্র একজন মানুষ
ভোগ করে। যাদের বিদেশ থেকে আনতে বিমান যায়। বিলাসবহুল গাড়ি যায়। তারা ইন্ডিয়ান, তারা ভারতীয় নয়। তাই এত কদর, এত আদর, এত আপ্যায়ন। এ
কোন দেশে আমাদের জন্ম হল? আজ ৭০ বছর পরও আমরা
ইন্ডিয়ান হতে পারলাম না। দুঃখ-যন্ত্রনা বিদ্ধ পরিয়াযী শ্রমিক হয়ে থাকলাম।
কোন মন্তব্য নেই