Header Ads

আমার হৃদয়ে আমার মননে যে তিনি রয়ে গিয়েছেন!

শঙ্খশুভ্ৰ দেববৰ্মণ উত্তরপূৰ্ব ভারতের বিশিষ্ট কবি এবং ঔপন্যাসিক। বর্তমানে তিনি ভারত সরকারের পৰ্যটন মন্ত্ৰণালয়ের (উত্তরপূৰ্ব ভারত), আঞ্চলিক অধিকৰ্তার পদে গুয়াহাটিতে কর্মরত। প্রয়াত সাহিত্যিক দেবেশ রায়ের সঙ্গে ১৭ বছর আগে কাটানো কিছু মুহূৰ্তের কথা স্মৃতিচারণ করলেন। নয়া ঠাহর-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল। 
  
 

'তিস্তাপারের  বৃত্তান্ত'   পড়েছিলাম  এমন একটা  সময়ে  যখন  মূলস্রোতের  বাংলা  সাহিত্য মানেই  হয়ে উঠেছিল   শহরকেন্দ্রিক  মধ্যবিত্তের   বিবিধ  সংকট আর  তথাকথিত   পরকীয়া  প্রেম।  এর  বাইরে  যেন  আর  কিছু  নেই।    বাংলা  সাহিত্যের    বৃহৎ  ভৌগোলিক  পরিসরের  কথা    তাই   পাঠক    যেন  ভুলতে  বসেছিল।  অথচ    প্রান্তিক    মানুষের  কথা,  গ্রামীণ  জীবন  সংস্কৃতির  কথা    এর  আগেও  বহুবার  বহুভাবে  বাংলা সাহিত্যে  উচ্চারিত  হয়েছে।  

সেই ধারাটির   কিন্তু    শহর  কেন্দ্রিক  সাহিত্যের  জোয়ারে   বিস্মৃতির  অন্তরালে   চলে  যাওয়ার  উপক্রম হয়েছিল।  তবে   যাবতীয়   প্রতিকুলতার  মধ্যেও    সততার  সঙ্গে  সৃষ্ট  সাহিত্যকর্ম  ভাস্বর  হয়ে  উঠে   প্রতিবার।  দেবেশ  রায়  সেই সততার  প্রতীক।  শহরকেন্দ্রিক  সাহিত্যের  জনপ্রিয়তার  মাঝেও  উজ্জ্বল  হয়ে  উঠেছিল  তাঁর  সাহিত্য কর্ম।    ছকবাঁধা  পথে  তিনি  এগোন নি।  'আহ্নিক গতি ও মাঝখানের দরজা’, ‘দুপুর’, ‘পা’, ‘কলকাতা ও গোপাল’, ‘পশ্চাৎভূমি’, ‘ইচ্ছামতী’, ‘নিরস্ত্রীকরণ কেন’,  ‘উদ্বাস্তু'র  মতো  গল্পগুলি  আসলে    প্রান্তিক  মানুষের   জীবনের  ধারাভাষ্য।      যযাতি'র পর   বহুস্বর  ধ্বনিত 'তিস্তাপারের   বৃত্তান্ত'   তাঁর   বহুল  আলোচিত    উপন্যাস।  এমন মাল্টি  ডাইমেনশন্যাল  ফিকশন  বিদেশি  সাহিত্যে  পেয়েছি আগে;   বাংলা  সাহিত্যে   সম্ভবত   দেবেশ  রায়ই    প্রথম  এমন  জঁ'রের  প্রবর্তক।   ভালো  লাগার   মাত্রা  তাই   আমার  বেড়ে  গিয়েছিল  বহুগুণ। কিন্তু    তখনও  কী  জানতাম   একদিন   একই  মঞ্চে  দেবেশ  রায়ের    সঙ্গে দাঁড়াতে  হবে।  আমি   তো  স্বপ্নেও  ভাবি নি  সেই  কথা।  ২০০৩'র  মার্চে   আগরতলা  বইমেলায়   ত্রিপুরা  সরকার   প্রদত্ত    সাহিত্য  পুরস্কার    গ্রহণের  সৌভাগ্য  হয়েছিল   দেবেশ  রায়ের  হাত  থেকেই।  বেশি  কথা  বলতে  পারি নি  তখন। প্রত্যেক  মানুষের    জীবনে   এমন  কিছু  মুহূর্ত আসে   যা   অবশ্যই    বাঙময়  অথচ   রয়ে  যায়  অব্যক্ত।   আমারও  সেদিন  একই   অবস্থা  হয়েছিল। ......   আগরতলার   রবীন্দ্র  পরিষদের    সান্ধ্য  অনুষ্ঠানেও    এসেছিলেন সেবার।  উদীচী  সভাগৃহে    তাঁর  প্রান্তিক   সাহিত্য  বিষয়ক  আলোচনায়     ঋদ্ধ  হয়েছিলেন  উপস্থিত  শোতৃমণ্ডলী।  পরে  তিনি  বলেছিলেন,  এই  যে  শঙ্খ ...শঙ্খশুভ্রের     'বনকুন্তলার  উপাখ্যান'  পড়লাম।  ও  চেষ্টা করেছে  স্থানীয়  মানুষের  কথা  বলার, অরণ্যচারী  জনজাতিদের    জীবনের  কথা  বলার।   চেষ্টা  করেছে   ওদের  লোকাচার  সংস্কৃতিকে   তুলে  ধরার।   মূল  স্রোতে   গা   না  ভাসিয়ে    নিজ  অঞ্চলের  মানুষ  আর  সংস্কৃতির  কথা  তুলে  ধরেছে।   স্থানীয়   ফ্লেভারকে  তুলে  ধরার    একটা  আকুতি  রয়েছে  ওর  লেখায়।   এটাই   তো  চাই। ......দেবেশ  দা'র  সেই  কথাগুলি  আমার  সাহিত্যজীবনে  আলোকবর্তিকার  কাজ  করেছে।    শুনতে  পাই  প্রতিনিয়ত    তাঁর   সেই  কণ্ঠস্বর।  তিনি  আজ   প্রয়াত  -  বিশ্বাস   হয় না  এ কথা।    আমার  হৃদয়ে  আমার  মননে   যে  তিনি  রয়ে   গিয়েছেন!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.