Header Ads

চৈতালি বেলা শেষে...এক বাংলাদেশী কন্যার গপ্প... প্রথম পর্ব (১)


 মহামারি করোনা উদ্ভুত জটিল পরিস্থিতিতে ‘নয়া ঠাহর’এর সাহিত্য সেবা। আপনারা ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন.. 


 বাংলাদেশের এক তরুণি কাঁটাতার পেরিয়ে ভারতে এসে যে লড়াইয়ের সম্মুখীন হয়েছেন তাঁর জীবন সংগ্ৰামের কাহিনী দেবাশীষ মুখাৰ্জীর কলমে ‘নয়া ঠাহর’ এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
----------------------
সকাল থেকেই ঝিমঝিম করে বৃষ্টিটা হয়েই চলেছে...থামার কোন লক্ষণ নেই....
পাশের বাড়ির কাকিমার কাছে এসে আটকে গেছে মৌলি....
দেখতে দেখতে ঝমঝমিয়ে নেমে পড়লো বৃষ্টিটা....
আজ পাশের বাড়ির কাকিমার কাছে এসে দুটো রুটি আর একটু আলুভাজা দিয়ে কোনক্রমে পেটটা ভরিয়েছে মৌলি....গায়ে জ্বরটা এখনো রয়ে গেছে....
এখন এখান থেকে বাড়ি যেতে হলে জ্বর আর বৃষ্টিকে মাথায় নিয়েই বাড়ি ফিরতে হবে....
কাকিমা জোর করে প্যারাসেটামলটা খাইয়ে দিলেও জ্বর যেমনকার তেমনই রয়েছে....
এদিকে বেলা বয়ে যাচ্ছে....বাড়ি ফিরতেই হবে...দুপুরে জেঠুমা আর দিদির সাথে ভাতে বসতেই হবে....কিন্তু বৃষ্টির থামার কোন লক্ষনই নেই....
অগত্যা কাকিমা বলে মৌলি....কাকিমা আমি বেরুচ্ছি...
কাকিমা অবাক হয়ে বলেন...সে কিরে...এই অবস্থায় যাবি কি করে...তার ওপর আবার গায়ে জ্বর যে তোর মা....বৃষ্টিটা একটু ধরলেই না হয় বেরুবি...
মৌলি খানিকটা নাছোড়বান্দা গোছের একটা দৃষ্টিতে কাকিমার দিকে তাকিয়ে বলে...এর পর আমি গেলে তবে ওরা খেতে বসবে....কিন্তু নিজেও জানে সে যাক বা না যাক এতে তার জেঠিমা আর জেঠতুতো দিদির খাবার সময়ের কোন অন্যথা হবে না....
ছোট্ট একটা অভিনয় করে নিজের মনবানানো একটা প্লটের সাথে মৌলি তার পাশের বাড়ির কাকিমার সাথে...
তারপর একছুট লাগায় ঝমঝমিয়ে পড়তে থাকা বৃষ্টিটাকে মাথায় নিয়ে...
গায়ের ওড়নাটা ভালো করে মাথায় জড়িয়ে নেয়....এই সময় রাস্তায় লোকজনও কম....
একছুটে বাড়ি ঢুকে যায় মৌলি..
এইটুকু আসতেই ভিজে কাকভেজা হয়ে গেছে...
বাড়িতে ঢুকে চটিটা সন্তর্পণে খুলে রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে দেখে...তার ভাবনাই সঠিক..
জেঠিমা আর দিদি খেতে বসে গেছে....
মনে মনে কষ্ট হলেও কাউকে কিছু বলার নেই তার...
জামাকাপড় পালটে রান্নাঘরে আসে মৌলি....
দেরি হয়েছে...তাই নিজেকেই নিজে বেড়ে খেতে হবে...
ভাতের হাঁড়িটার দিকে হাত দিতে যে যাবে....
ধমকে উঠলেন জেঠিমা...
ভাতের হাঁড়িতে তোমার জন্য ভাত রাখা নেই....খেতে হলে কালকের রাতে জল দেওয়া পান্তা আছে...আজ ওটাই খাও....
জ্বর হলেও পান্তা....!!! কষ্টে খুব কষ্টে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে মৌলি...
আজ তার মা এখানে থাকলে নিশ্চয় এই জ্বর নিয়ে তাকে পান্তা ভাতে বসিয়ে দিতেন না....
মা পারতেন না সে নিশ্চিত...কিন্তু জেঠিমা কিভাবে পারলেন...
আজ প্রায় দুবছর হতে চলল এদেশে এসেছে মৌলি...কিন্তু এমন ব্যাবহার এর আগেও পেয়েছে...আজ এটা প্রথম নয় তার কাছে...আগে এগুলোকে সে বড়দের শাসন হিসাবে দেখে এসেছে...মনে সেভাবে আঘাত করেনি...কিন্তু আজ কি হলো মৌলির....
কোনক্রমে সেই ভাতগুলো চোখেমুখে গুঁজে নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় ফেলে দেয় শরীরটা...জ্বরটা আস্তে আস্তে বাড়ছে মনে হচ্ছে....জ্বর বোঝার জন্য এখন আর তার থার্মোমিটার লাগে না...মায়ের হাতের ঠান্ডা স্পর্শ কপালে পেতে হয় না....সীমান্তপারের শতযোজন দূরে থাকা মা কে ছেড়ে এখন সে দিব্যি বাঁচতে শিখেছে...শরীরের জ্বর ছাড়াও আত্মীয়ের অকারণ মানসিক অত্যাচারের উত্তাপও বুঝতে শিখেছে....
আসলে এই জ্বরটা কাল থেকেই এসেছে....স্কুল থেকে ফেরার পর মাইগ্রেনের যন্ত্রনা আর জ্বর নিয়ে শুয়ে পড়েছিলো মৌলি...শোবার আগে দিদিকে বলেছিলো...দিদি আমি যদি ঘুমিয়ে পড়ি তাহলে আমাকে যেনো আর ডাকিস না....
রাতেও কেউ ডাকেনি তাকে...জ্বর গায়েই ঘুমিয়ে রাত কাবার করেছে...এবাড়িতে কেউ তার খোঁজও করেনি...
কেন মেয়েটা না খেয়ে সারারাত বিছানায় পড়ে রইলো...
বাবা মায়ের নিশ্চিন্ত আশ্রয় ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করা...যে একটা লড়াই করা এটা বোধহয় সেদিনই বুঝতে পেরেছিলো মৌলি...এর আগেও হয়তো ঘটেছে এমন কিছু তবে সেটা ছিলো তার কিশোরীবেলা....আর এখন সে এক পরিপূর্ণ যুবতী....শরীর আর মনে দিন দিন বড় হয়ে উঠছে সে...তাই এই ব্যাবহার গুলো একটা প্রচন্ড আঘাত হানে তার বুকে আজকাল...
কিন্তু প্রতিবাদ অভিমান আবদার...ধুত যে আবদার অভিমান বাবা মায়ের কাছে চলে এগুলো আত্মীয়ের সাথে চলে নাকি.....সে যতই কাছের আত্মীয় হোক না কেন...চলে না..
ভাবতে ভাবতেই ঘুম চলে আসে দুচোখে...ঘুমের মধ্যেই স্বপ্ন দেখে মৌলি তার সেদেশের সেই সেদিনের কথাগুলো.....
টাঙ্গাইলের ভারতেশ্বরী হোমসে(নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের এই স্কুলের নাম জগতবিখ্যাত) ক্লাস নাইনে ভর্তি হয় সে....গানের জন্য স্কুলের শিক্ষিকাদের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ছিলো মৌলি...আর হবেই না বা কেন...
গানে ন্যাশানাল এওয়ার্ড পাওয়া মেয়েটিকে ভালো না বেসে উপায়ও ছিলো না শিক্ষিকাদের....হ্যাঁ ওদেশে গানে ন্যাশানাল এওয়ার্ড পেয়েছিলো গান অন্ত প্রান মৌলি....
বিখ্যাত স্কুল...গানে এওয়ার্ড উইনার মেয়েটাকে হটাৎ করে সবকিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর...কিসের হাতছানিতে এদেশে আসতে হয় তাকে....
তাহলে কি সংখ্যালঘু হিসাবে একটা ইনসিকিউরিটির কারনে ওদেশ ছেড়ে এদেশে আসতে হয়েছে তাকে..?? নাকি ওদেশে থেকে সেভাবে নিজের কেরিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব নয়...??? যে সুযোগ সে এদেশে পাবে ওদেশে সে সুযোগ পাওয়া সম্ভব নয়??
কোন কারনটা সঠিক....
কেন আসতে হলো তাকে এদেশে....
প্রশ্নটা কিন্তু ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে....
চলবে....

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.