Header Ads

আমি তোমার সেই সেখ আব্দুল মান্নান

সেখ আব্দুল মান্নান

‘ আমার নাড়ি থেকে ওদের একটা একটা কেটে প্রতিবেশীদের বিলিয়ে দিয়ে খুব আত্মসুখে আছো তাই না ? আমার কথা একটুও  ভাবলে না ? কে আমার বংশ রক্ষা করবে ? দুদিন পরে বউয়ের কথায় আমাকেও সাফ করতে তোমার হাত কাঁপবে না।’
- আচ্ছা, তুমি কে বলতো সেই থেকে বক বক করে আমার মাথা খাচ্ছো ?
‘ সে কথা পরে হবে। তার আগে বল আমি যা বলছি তা ঠিক না ভুল ?’
- আমি তো মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। কী কেটেছি তোমার নাড়ি থেকে ? বংশ রক্ষার ব্যাপারটাই বা কী ? আবার বলছ বউয়ের কথায় তোমাকে সাফ করে দেবো !
‘ সে তুমি বুঝবে কি করে ! তুমি যে মজে আছো আমার সন্তানদের একে একে আমার থেকে আলাদা করে বিলিয়ে দেবার নেশায়। বাড়িতে নিয়ে যারা সুস্বাদু সব্জি বানিয়ে উদরস্ত করবে তারাও তোমাকে ধন্যবাদ জানাবে। এতে তোমার তো আঙুল ফুলে কলাগাছ। আর আমার বেলায় লবডঙ্কা।’
- আবার যাতা বলে আমার মাথা গরম করছ ! এতই যদি বুকের পাটা তাহলে পরিচয় দিচ্ছ না কেন ? কখন থেকে আমায় হিউমিলিয়েট করে যাচ্ছো !
‘ আহ্‌ এত রেগে যাচ্ছো কেন ? যা বলছি ধৈর্যধরে শুনলে তবেই তো বুঝবে না কি !’
- ঠিক আছে বল।
‘ বলছি তুমি যখন তোমার মাকে ছেড়ে আন্দামান চলে গিয়েছিলে দু-পয়সা রোজগারের জন্যে, তখন তোমার মন খারাপ করেনি ?  ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার আগে তুমি মাকে বলনি যে তোমার যাবার সময় মা যেন একফোঁটাও চোখের পানি না ফেলে ?’
-  হ্যাঁ বলেছিলুম, তো তার সাথে এর কি সম্পর্ক ?
‘ সম্পর্ক আছে বলেই তো বলছি। তুমি মাকে চোখের পানি ফেলতে বারন করেছিলে কেন?’
- কেন কি মায়ের চোখের পানি দেখে যাতে আমি  দুর্বল না হয়ে পড়ি।
‘ তাই বলে তুমি তাকে কাঁদতেও দেবে না ? জানো তুমি চলে যাবার পর কতদিন আড়ালে আবডালে তোমার জন্যে কত চোখের পানি ফেলেছে তোমার মা ? জানোনা। তুমি মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধন। তার আত্মার সাথে অদৃশ্য বাঁধনে বাঁধা আছো তুমি। সেই বাঁধন কেটে তুমি যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলে ঘর থেকে তখন যে মায়ের ভেতরটা ডুকরে উঠেছিল, সেটা কি জানতে ? আমি জানি । আমিও যে সন্তান শোকে জর্জরিত এক মা। তাই আজ আমি  অন্তর দিয়ে অনুভব করতে পারছি তোমার মায়ের সেই মর্ম ব্যথা।’
- আরে সেই থেকে ইমোশনাল কথা বলে বলে আমায় দুর্বল করে দিচ্ছ কেন ? কী অপরাধ করেছি আমি ? বার বার বলছি তো তুমি কে, তুমি কে ? তবুও মুখ লুকিয়ে রয়েছ ?
‘ হাঃ হাঃ হাঃ। তুমি হাঁসালে আমায়। আরে কথা যখন বলছি  আমি আমার পরিচয় নিশ্চয় দেব। একটু সবুর তো কর। কথায় আছে না সবুরে ম্যাওয়া ফলে। সবুর করলেই জানতে পারবে আমি কে। আমার সন্তানদের আমার থেকে আলাদা করেই তুমি ক্ষান্ত নও। আজকাল আমার শিরা উপশিরা কেটে কেটেও বিলিয়ে দিচ্ছ লোককে। বিনিময়ে পাচ্ছো সাবাসি।’
- দেখ তুমি কিন্তু ধৈর্যের সীমা লঙ্ঘন করে চলেছ একের পর এক। এখন আবার বলছ তোমার শিরা উপশিরা কেটে বিলিয়ে দিয়ে নাম কিনছি! আচ্ছা, তুমি একটা পাগল না অন্য কিছু ?
‘ তাতো তুমি বলবেই, তুমি পাগল বলবে নাতো কে বলবে! যখন আমার ফল হচ্ছিল না তুমি খিস্তি দিয়ে বলছিলে না আমি বাঁজা বলে। আজ আমি মা।আমার বুক থেকে আমার সন্তানদের ছিনিয়ে নিচ্ছ অথচ একবারও ভাবছ না আমার ভবিষ্যৎ রক্ষা হবে কি করে! মায়ের গর্ভফুল থেকে সন্তানকে আলাদা করলেও মা কষ্ট পায় না।কেননা ওই সন্তানই বড় হয়ে একদিন মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে সেই আশায়।’
- আচ্ছা আমি কি তোমার জন্য মাথার চুল ছিঁড়ে পাগল হয়ে যাব ভেবেছ ?
‘ না না আমি চাই না তুমি পাগল হও। তবে পুণ্যদাস বাউলের সেই গানটার কথা মনে আছে তোমার “ লাউয়ের আগা খাইলাম ডগা গো খাইলাম, লাউ দিয়ে বানাইলাম ডুগডুগি, সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী।” আমি হলাম তোমার সেই সাধের লাউগাছ গো, লাউগাছ। চিনতে পারছো না আমায় ? কত আদর যত্নে, জল দিয়ে, ফ্যান দিয়ে আমাকে একটু একটু করে বড় করলে। আমার জন্য সুন্দর মাচা বানিয়ে দিলে। আর তোমার মায়ের মতো এই হতভাগিনীকে তুমি চিনতে পারলে না !’
চকিতে ঘুম ভাঙল আদমের। ধরফর করে উঠেই পুবের জানলা খুলে দ্যাখে মাচাভরা লাউগাছ ওর পানে চেয়ে হাসছে খিলখিল । সূর্যের কচি রোদ  তার সবুজ অঙ্গে ঢেলে দিচ্ছে সঞ্জীবনী সুধা।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.