Header Ads

চৈতালি বেলাশেষে...এক বাংলাদেশী কন্যের গপ্প... সপ্তম পর্ব..(৭)

দেবাশীষ মুখাৰ্জী 
 
নিলয়ের ছোটমামার নাম বিহারীলাল...সবাই তাকে বিহারীমামা বলেই জানতো...এই বিহারীলালের পেশা ছিলো লোক ঠকানো...তান্ত্রিক জ্যোতিষ ছাড়াও সে আবার দীক্ষা দিতো...শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে মাধ্যমিক পাশ সে করেনি....কিন্তু সব ব্যাপারে তার কিছু না কিছু বক্তব্য থাকতোই...
মৌলির কথায় ও আমার চোখের দিকে তাকালেই আমি অবশ হয়ে যেতাম...জানিনা তুকতাক কিছু জানতো কিনা...পেটে আমার শিক্ষা ছিলো তাই ওগুলো মাথায় এলেও বিশ্বাস করিনি....
মজার কথা হচ্ছে...যখনই নিলয় মৌলির সাথে গল্প করতে আসতো তখনই বিহারীমামা সেখানে হাজির হয়ে যেতো...মৌলি তখন নিলয়ের সাথে যতনা কথা বলেছে তার চেয়ে বেশী কথা বলেছে বিহারীমামার সাথে...আর নিলয় সেই সময় চুপ করে পাশে বসে থেকেছে....
সেদিন পয়লা বৈশাখ...মৌলি তখনও মামারবাড়িতে...
 
পুজো হবে বাড়িতে তাই মামাতো দাদার বন্ধুরা বাড়িতে এসেছে....
এর মধ্যে একটা কান্ড করে বসে নিলয়...
সবার মাঝে হাঁটু গেড়ে বসে মৌলিকে একটা গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে...অতি নাটকীয় এক ভঙ্গিতে...
সবার মতো মৌলিও হকচকিয়ে যায়....
গোলাপটা নিয়ে নেয় মৌলি....অর্থাৎ এক কথায় এই সম্পর্কটা মেনে নেয় সে...
এই ঘটনায় সবাই অবাক হলেও বিহারীলাল কিন্তু অবাক হয়নি...
দূরে দাঁড়িয়ে ঘটনাটা দেখতে দেখতে মুচকি মেরে হাসছিলো বিহারী....
কেন কি উদেশ্য ছিলো বিহারীর....
স্পস্ট হয়নি সেটা মৌলির কাছেও....
বিহারীর তখন সবে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে....
যাই হোক এর কিছুদিন পর জেঠুর বাড়ি ফিরে আসে মৌলি....
সম্পর্কটা ভীষন ভাবে বেঁচে থাকে এদের দুজনের। মধ্যে...
মৌলি আস্তে আস্তে নির্ভর করতে শুরু করে নিলয়ের ওপর....
এদিকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা এগিয়ে আসে....
জেঠুর বাড়িতে থাকা কার্যত অসম্ভব হয়ে পরে মৌলির কাছে...এবার জেঠিমার অত্যাচারটা অন্য ভাবে আসে...পড়াশোনা ছেড়ে ঘর গৃহস্থালির অনেক কাজ মৌলিকে করতে হয় মৌলিকে....
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার তিনমাস আগে মৌলির মা মৌলির কাছে আসেন বাংলাদেশ থেকে....
এই সময় মৌলির মাকে ঘরের কাজ অনেকটাই করে দিতে হয়....
মৌলির জেঠু তার পরিবার নিয়ে উত্তরবঙ্গ ঘুরতে যান...ঘরে রেখে যান মৌলি আর তার মাকে...
এই সময় সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মৌলির মা পায়ে মারাত্মক আঘাত পান...
পড়াশোনা শিকেয় ওঠে মৌলির....
জেঠুরা ফিরে আসলে মৌলিরা সিন্ধান্ত নেয় এ বাড়ি ছেড়ে তারা ভাড়া বাড়িতে উঠে যাবে....
জেঠু প্রথমে আপত্তি করলেও পরে সম্মতি জানান....
বাড়ি ভাড়ার জন্য মৌলির জেঠু বাসু নামের এক দালালকে ভাড়া বাড়ি দেখার জন্য বলতে বাসু একটা ভাড়া বাড়ি দেখে দেয় মৌলিদের জন্য....
মৌলিরা জেঠুর বাড়ি ছেড়ে সেই ভাড়া বাড়িতে গিয়ে ওঠে....
কিন্তু এই সময় একটা সমস্যা দেখা দেয় মৌলিদের...
মৌলির বাবা মৌলিদের কাছে যে চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন সেই চ্যানেলে গোলমাল শুরু হয়...
অথৈজলে পড়ে মৌলিরা....
হাতে টাকা না পেলে খাবে কি...দিন চলবে কি করে....
জেঠুর কাছে এই সময় টাকা চাওয়াটাও বেশ অস্বস্তিকর...
কি করবে ভেবে পায় না মৌলিরা...
এই সময় মৌলিদের পাশে এসে দাঁড়ায় নিলয়....
মৌলির মা হয়তো নিলয়কে খুব একটা পছন্দ করতেন না...
কিন্তু এই অসহায় সময়ে নিলয় ছাড়া তাদের মা মেয়ের আর কোন উপায় নেই....
নিলয় সারামাসের রেশন...যা যা লাগে খেতে পড়তে তার সমস্তটাই ব্যাবস্থা করে...এছাড়া হাত খরচের জন্য যে টাকাটা লাগবে সেটারও ব্যাবস্থা করে...
মৌলির মায়ের অপছন্দটা এবার বদলে যেতে থাকে....
মৌলির উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও হয়ে যায়....
মৌলির মা এবার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে থাকেন...
এই সময় বাংলাদেশ থেকে মৌলির বাবা মৌলির মাকে ডেকে পাঠান জরুরি ভিত্তিতে...
কিন্তু যাবো বললেই তো আর বিদেশে ফিরে যাওয়া যায় না...পাসপোর্ট ভিসার ব্যাপার থাকে...মৌলি আর মৌলির মা এই ব্যাপারে কিছুই জানে না....
অগত্যা মৌলির মা শরণাপন্ন হন বাড়ির সেই দালাল বাসুর কাছে....
বসু বলে তার সাথে মৌলিকেও যেতে হবে বাংলাদেশের এম্ব্যাসিতে....
ইচ্ছে না থাকলেও রাজী হতে হয় মৌলির মা কে....
মৌলি মায়ের ভিসার ব্যাবস্থা করতে বাসুর সাথে কলকাতা যাবে বলে ঠিক হয়....
মৌলি কিন্তু কলকাতার সেভাবে কিছুই চিনতো না সেদিন...
অচেনা এক লোকের সাথে অচেনা মহানগরীতে মৌলি..
চলবে...

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.