Header Ads

জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ



মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাণকেন্দ্র বহরমপুর শহরএই শহরে একটি ব্রাহ্মণ পরিবারের বড় ছেলে নলিনাক্ষ সান্যালের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ছিলেন নজরুলবন্ধুর বিয়েতে তাঁকে বরযাত্রী হিসেবে আমন্ত্রণ করা হলোনজরুল প্রথমটায় কিছুতেই বরযাত্রী হিসেবে যেতে রাজি হচ্ছিলেন নাকিন্তু বন্ধু অর্থাৎ যাঁর বিয়ে ,তাঁর পীড়াপীড়িতে শেষে বাধ্য হয়ে রাজি হলেনবিয়ে পৌঁছল পাত্রীর বাড়িবরযাত্রীদের পংক্তিভোজনে বসানো হয়েছেহঠাৎ বিয়ের পাত্র অর্থাৎ কাজী সাহেবের বন্ধুর ছোট ভাই শশাঙ্কশেখর হন্তদন্ত হয়ে দাদার কাছে এসে বললেন,'দাদা, বিয়ে তুই করিস নামুসলিম বলে ওরা কাজী সাহেবকে অন্য বরযাত্রীদের সঙ্গে না বসিয়ে অন্য একটা জায়গায় একা বসিয়েছেএই শুনে বিয়ের পাত্র অগ্নিমূর্তি হয়ে উঠলেনবিয়ের আসর থেকে তিনি উঠে পড়লেন এবং বললেন,যেখানে আমার বন্ধুর অপমান হয়,সেখানে আমি বিয়ে করবো নাবিয়ের আসরে একটা হুলুস্থুল পড়ে গেলনজরুল খবর পেয়ে ছুটে এলেনতিনি বিয়ের পাত্র অর্থাৎ তাঁর বন্ধুকে অনেক বুঝিয়ে বিয়েতে রাজি করলেনঅবশেষে বিবাহকার্য সম্পন্ন হলোকিন্তু এখানেই শেষ নয়পরেরদিন ভোরবেলাসবাই তখন ঘুমুচ্ছেনপাত্রীর বাবা শরৎচন্দ্র ভট্টাচার্য সকলের আগে উঠেছেন সকালবেলায় বিয়ে বেরোনোর আগে বরযাত্রীদের আতিথেয়তার তদারকি করতেহঠাৎ তিনি থমকে গেলেন গানের সুরেশব্দ অনুসরণ করে তিনি উপস্থিত হলেন বাড়ির যেখানে মন্দির,সেখানটায়এরপর তিনি যা দেখলেন,তা এক অত্যাশ্চর্য ঘটনাতিনি বাড়ির সবাইকে ডেকে তুললেন নীরবে এবং নিয়ে গেলেন সেই মন্দিরের কাছেসকলে অবাক হয়ে গেলমন্দিরের বারান্দায় বসে নজরুল একটার পর একটা নিজের লেখা ভক্তিসংগীত গাইছেন আর তাঁর দু'চোখ বেয়ে দরদর করে জল ঝরে পড়ছেপাত্রীর বাবা ছিলেন এক গোঁড়া ব্রাহ্মণকিন্তু সেই মুহূর্তে সব ভুলে গেলেন তিনি কোনো এক মায়ামন্ত্রবলেছুটে গিয়ে তিনি পায়ে পড়লেন কাজী সাহেবেরকাজী সাহেব সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে দু'হাত দিয়ে তুলে জড়িয়ে ধরলেন'চারি চক্ষের ধারায়' তখন সেখানকার মাটি ভিজে স্বর্গভূমি হয়ে উঠেছেএরপর মেয়ের বাবা নিজে বরযাত্রীদের সাথে এক সারিতে বসিয়ে তাঁকে ভোজন করালেন এবং তাঁর মেয়েকে আশীর্বাদ করতে বললেন।........ একটু আগেই আমি সন্ধ্যা মুখার্জির মরমি কণ্ঠে শুনছিলাম নজরুলের সেই অপূর্ব গান.....'মা গো কত অপরাধ করেছিনু বুঝি/সংহার করি সে অপরাধ/বল্ লীলাময়ী মিটেছে কি তোর /মুন্ডমালিকা পরার সাধ/...যে ভক্তি পায়নি চরণতল /আজ হলো কি তা গঙ্গাজল /মোর মুক্তির তৃষা, মুক্তকেশী গো/ এলোকেশ হয়ে পায়ে লুটায়/....আমি মা বলে যত ডেকেছি /সে ডাক নূপুর হয়েছে রাঙা পায়/মোর শত জনমের কত নিবেদন/ চরণ ধরে কহিতে চায়...'............আমার দু'চোখ বেয়ে নেমে এল দরদর ধারানিজের ঘরের দরজা লাগিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদলামকী এক স্নিগধ আলোয় আমার মনে যেন শুশ্রূষা দিয়ে গেলেন নজরুল ,ঠিক যেমন করে আমার জন্মেরও বহু বহুদিন আগে এক গোঁড়া ব্রাহ্মণের মনের অচলায়তন ভেঙে দিয়েছিলেন তিনি এমনি করেনাস্তিকের কাছে কি নিছক ভাববাদ ? বস্তুবাদীর কাছে কি নিছক পাগলামি ? জানি না,জানার দরকারও নেইআমি জানি, এক সন্তানের মায়ের কাছে সব পাপের বলিদান দিয়ে তাঁর চরণস্পর্শ করে এক জন্মান্তরে উত্তরণ, আমি বুঝি, এক আলোর শুশ্রূষা যাতে এক গোঁড়া ব্রাহ্মণের মনের অচলায়তন ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে যায়, সে দীক্ষা নেয় এক বৃহত্তর সত্য বোধেকে নজরুল? হিন্দু? মুসলমান? খ্রিস্টান? না-না এবং না.....তিনি মনুষ্যত্বের অতন্দ্র প্রহরী, মানবতার মরমিয়া সাধকআজ তাঁর জন্মদিনে নতনিষ্ঠ প্রণাম (সংগৃহীত)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.