Header Ads

চৈতালি বেলা শেষে...এক বাংলাদেশী কন্যের গপ্প... দ্বিতীয় পর্ব (২)

  দেবাশীষ মুখার্জী 

বাংলাদেশ....

এই বাংলাদেশের বরিশাল ডিভিশনের এক শহর ভোলা....বরিশাল থেকে ঘন্টা তিনেক লঞ্চে করে গেলেই পৌঁছে যাওয়া যায় ভোলায়...ভোলার তিনদিক ঘিরে রয়েছে মেঘনা...মেঘনা নদী

এই তিনদিক মেঘনা দিয়ে ঘিরে থাকা ভোলা শহরের মেয়ের গল্প নিয়েই এই গল্পের পটভুমি...

এই শহরের মাটিতেই জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা মৌলির...বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান...বাবা আর মা দুজনেই চাকরী করতেন....তাই অস্বচ্ছলতা তাকে দেখতে হয়নি....স্বচ্ছল একটা পারিবারিক বাতাবরনে পনেরোটা বসন্ত গায়ে মেখে কিশোরীবেলা ডানা মেলেছে তার....

গান থেকে পড়াশোনা নিয়ে নিজস্ব নিয়মের গতিতেই প্রবাহিণী ছিলো মৌলি...গান তাকে একটা আলাদা পরিচিত দিয়েছিলো...গান কে কেন্দ্র করেই তার এদেশে ন্যাশানাল এওয়ার্ড পাওয়া...
এই ন্যাশানাল এওয়ার্ড সেটা যে দেশেরই হোক পাওয়া কিন্তু খুব একটা সোজা ব্যাপার নয়...আর এই এওয়ার্ড এর কারনেই তার পরিচিতিও বেশ হয়েছিলো...
কিন্তু কোথায় যেনো একটা ইনসিকিউরিটি কাজ করতো মৌলির মনে....হতে পারে সে দেশের রাজনৌতিক পট পরিবর্তন এর একটা কারন....
অনেকেই হয়তো বলবেন একটা পনেরো ষোলো বছরের মেয়ে রাজনীতির কি বোঝে....
না সত্যিই বোঝে না একটা পনেরো ষোলো বছরের মেয়ে রাজনীতির...কিন্তু রাজনৌতিক দলের পোষ্যদের চোখের ভাষা বুঝতে একটা কিশোরী মেয়ের রাজনীতি বোঝার দরকার হয়না এটাও তো ঠিক....
আসলে শরীরে যৌবন যখন কড়া নেড়ে জানান দেয় আমি আসছি এবার তখন সেই বার্তা প্রথম শোনে কিশোরীর শরীর...চেনা অচেনা পুরুষের চোখ বলে দিয়ে যায় মৌলিকে...দেখো আয়নায় চেয়ে দেখো..তুমি এবার বড় হচ্ছো....নিজেকে ঢাকতে শেখো কিশোরী কন্যে....

মৌলিদের স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারটা ছিলো বেশ সময়ে বাঁধা...একা একা তারা কেউ স্কুলে যেতো না...নিদৃষ্ট একটা সময়ে তারা যে যার নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্কুলের পথে হাঁটা দিতো...সেই সেইমতো সবাই যে যার বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরতো নিদৃষ্ট সময় অনুযায়ী...তারপর রাস্তায় মিলিত হয়ে দলবদ্ধ ভাবে স্কুলে ঢোকা....আর স্কুলে থেকে ফেরার সময় সেই একই পদ্ধতি...দলবদ্ধ হয়ে ছুটির সময় বাড়ি ফেরা....

নিজেরা এভাবেই তখন নিজেদের বাঁচিয়ে চলতাম...

নিজেরা এভাবে নিজেদের বাঁচিয়ে চলতেন মানে...

ফোনে কথা বলতে গিয়ে জানতে চেয়ে ফেলেছিলাম...

ফোনের ওপ্রান্তে তখন বাংলাদেশী কন্যা...একটুও ইতস্তত ভাব না করেই বলতে শুরু করলেন....

জানেন এই ভোলা শহরের টাউনহলে প্রায় আমার গানের প্রোগ্রাম থাকতো...এই প্রোগ্রামের জন্য আমাকে প্রায়ই রির্হাসালের জন্য সুকুমারদার বাড়িতে যেতে হতো...সুকুমার দার পুরো নাম সুকুমার সাহা...উনি হিন্দু.....
তবে রির্হাসাল যতক্ষনই চলুক না কেন সন্ধ্যে নামার আগে তিনি আমাকে...আর ধরুন আমার মতো আর যারা মেয়ে থাকতো তাদের সবাইকে বাড়ি ফেরানোর ব্যাবস্থা করে দিতেন...
আমাকে যেমন প্রায় দিনই হায়দার ভাই কে বলে হায়দার ভাইয়ের সাথে বাড়ি পাঠাতেন....

এটা বলে যেই একটু ঢোঁক গিলেছেন বাংলাদেশী কন্যা...

সাথে সাথে প্রশ্ন করেছি....

ওই যে বাকি মেয়েদের কথা বলছে ওরাও কি আপনার মতোই হিন্দু না অন্য কোন ধর্মের ছিলো...

বাংলাদেশী কন্যে জানালেন...না না ওরা সব আমার মতো হিন্দুই ছিলো....

কথা আর ওদিকে না বাড়িয়ে অন্য দিকে নিয়ে গেলাম...

আচ্ছা আপনি ভোলা শহর কেন ছাড়লেন....

বাংলাদেশী কন্যা বলতে শুরু করলেন....ভোলা শহর তখন আমাদের হিন্দুদের জন্য মোটেও নিরাপদ ছিলো না...বিশেষ করে আমরা হিন্দু মেয়েরা তখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি...চার দিক অশান্ত....রাজনৌতিক পালা বদল ঘটেছে বাংলাদেশে....

আরোও কিছু বলতে চাইছিলেন....কিন্তু আমার শোনার মতো পরিস্থিতি ছিলো না....
রাত্রি তখন সাড়ে দশটা...
লকডাউনের শহরের ফাঁকা রাস্তায়  কুকুর আর মশার সাথে সহবস্থান করা আর যাচ্ছিলো না...

তাই পরের দিন শুনবো বলে ফোন কেটেছিলাম...

পরের দিনের কথা নিয়ে আসছি পরের পর্বে...

চলবে....

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.