Header Ads

চৈতালি বেলা শেষে...এক বাংলাদেশী কন্যের গপ্প.. তৃতীয় পর্ব(৩)

দেবাশীষ মুখার্জী

বাড়ি থেকে চা টা খেয়েই বেরিয়েছি টুকটাক কিছু কিনবো বলে....সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত এর দিকে এগুচ্ছে ঘড়ির কাঁটা....

মাথায় কিন্তু ঘুরছে সেই বাংলাদেশী কন্যার বাকি থেকে যাওয়া গল্পগুলো...কি বলতে চেয়েছিলেন...জানার আগ্রহটা তখন মাথার মধ্যে কিলবিল করছে....

ফাঁকা তো এখন সব জায়গায়াই...রাতে রাস্তায় লোক প্রায় নেই...দাওয়া আছে এমন একটা জায়গায় বসে খানিকটা নির্লজ্জ্বতা বিসর্জন দিয়েই ফোনটা করেই বসলাম ওনাকে....এতো রাতে কাউকে ফোন করা বিশেষ করে কোন মহিলাকে এযে অস্যভতার চুড়ান্ত সীমা...সেটা কিন্তু মাথায় ছিলো না....

ফোনটা ধরেই ওপ্রান্ত থেকে বাংলাদেশী কন্যে সপ্রতিভ ভাবেই বললেন...হ্যাঁ বলুন...কিছু জানতে চাইছেন...

বললাম...ভোলা শহর ছেড়ে ভারতে কেন এলেন....

বাংলাদেশী কন্যে বললেন...ভোলা শহর ছেড়েই তো আমি ইণ্ডিয়াতে যাইনি...ভোলা ছেড়ে আমি টাঙ্গাইলের
ভারতেশ্বরী হোমসে ক্লাস নাইনে ভর্তি হয়েছিলাম...সেখান থেকে আমি ইন্ডিয়াতে যাই...

বললাম সে যাই হোক ভোলা কেন ছাড়লেন...কি এমন হয়েছিলো.....

এবার বলতে শুরু করলেন বাংলাদেশী কন্যা...

বাংলাদেশে তখন রাজনৌতিক পালাবদল ঘটেছে....বিএনপি র সরকার তখন বাংলাদেশের তখতে...
সেই সময় শুরু হলো আওয়ামি লিগ আর হিন্দুদের ওপর তুমুল অত্যাচার...বেছে বেছে আওয়ামি লিগ সমর্থক আর হিন্দুদের বাড়িগুলোকে টার্গেট করতো বিএনপি সমর্থকরা....হিন্দু মেয়েদের সেই সময়  বোরখা পরে ঘুরতে হতো নিজেদের বাঁচাবার জন্য....

গ্রামের দিক থেকে খবর আসতো কিভাবে বিএনপি সমর্থকেরা অত্যাচার করে নারী পুরুষ নির্বিশেষে মেরে ফেলছে এক একটা পরিবারকে....

জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে.....কিভাবে একটা রাজনৌতিক দল ক্ষমতায় এসে তাদের প্রতিপক্ষের ওপর....সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার চালাতে পারে...প্রতিরোধ করার জন্য কি রাষ্ট্র তার কোন ক্ষমতা ব্যাবহার করেনি...

এটা অবশ্য ঠিক রাষ্ট্র যখন মৌলবাদিদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে তখন সংখ্যালঘুরা বিচার পাওয়া তো দুরের কথা বিচার চাইতে গিয়ে আইনের কাছে অন্য পথে হয় হেনস্থা হয়েছে নয় অসহায়ের মতো অত্যাচারের সারাংশ হয়ে রয়ে গিয়েছে....দেশ কাল জুড়ে ইতিহাস এর সাক্ষী...কেবলমাত্র ধর্মীয় অনুশাসন দিয়ে শাসন করেছে যে রাষ্ট্রযন্ত্র সে দেশ অর্থনৈতিক সামাজিক আর শিক্ষার অধঃপাতনে দিন দিন নিমজ্জিত হয়েছে....

আবার বলতে শুরু করলেন বাংলাদেশী কন্যা মৌলি...

একদম একদম ঠিক বলেছেন আপনি....আমি সহমত আপনার বক্তব্যের সাথে....

দেখুন রাষ্ট্র কিভাবে সেদিনের সেই সঙ্ঘবদ্ধ সন্ত্রাস আটকেছিলো সেটা আমার জানা নেই...আসলে বাড়ি থেকে আগেও বেরুতে পারতাম না আর রাজনৌতিক পালাবদলের পর তো আরো পারতাম না....
এমন অনেক দিন হয়েছে রিক্সা করে বাড়ি ফিরছি...রিক্সা থামিয়ে আমায় প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে...আকার ইঙ্গিতে অন্য প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে...কই সেই সময় তো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমার এই লাঞ্চনার প্রতিবাদ করতে কেউ তো এগিয়ে আসেনি...
কেন আসেনি বলুন তো...কেন জানেন...কেননা ওখানে আমরা ছিলাম সংখ্যালঘু হিন্দু....হ্যাঁ কেউ কেউ আড়াল থেকে এগিয়ে আসতে চাইতেন কিন্তু আমরা বাড়াবাড়ির ভয়ে সেটাও চাইতাম না....

একটা রাগ রোষ ফুটে বেরুচ্ছে মৌলির গলা থেকে...

একটু থেমে আবার শুরু করলেন....

জানেন আমার যেদিনই টাউনহলে গানের প্রোগ্রাম থাকতো...তার পরদিন স্কুল যাবার সময় বা ফেরার সময় রাস্তার মোড়ে আড্ডা মারা ছেলেগুলো সেই গানটাই গাইতো যেটা তার আগের দিন আমি প্রোগ্রামে গেয়েছি....
একবারের জন্যও মনে হতো না এরা সাংস্কৃতিক কোন অনুষ্ঠান দেখতে যেতো টাউনহলে...শুধু মনে হতো এরা গান শুনতে নয় আমাদের ফলো করতে অনুষ্ঠানে আসতো....

আবার কখনো কখনো কি হতো জানেন...

বাইরে বেরিয়েছি কোন একটা কাজে...সন্ধ্যে হয়ে গেলে তো বাইরে বেরুনোর কোন কথাই নেই....ব্রড ডে লাইটে আমাকে দেখিয়ে অন্য একটা ছেলে অন্য একজন ছেলেকে বলছে...ভাইয়া দেখেন ভাবী আসতাসে...
জানেন সেই সময় সবার সামনে কতোটা লজ্জায় পড়তে হতো বলে বোঝাতে পারবো না আপনাকে....

বললাম শুধু এই কারনগুলোর জন্যই ভোলা ছাড়তে হয়েছিলো আপনাকে...

মৌলি বলে উঠলেন...না শুধু এই কারনগুলো কেন...আরো কারন ছিলো....
আশেপাশের গ্রাম থেকে খবর আসছে...
কারুর ঘরে ধান সিদ্ধ হচ্ছে....সন্ত্রাসীরা ঘরে ঢুকে যারা ধান সিদ্ধ করছিলো তাদের নাভিতে বা যোনিতে ধান দিয়ে...পায়ের গোড়ালি দিয়ে রগড়ে দিয়ে মেরে ফেলেছে তাদের...মেয়েদের শরীর থেকে কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছে তাদের গোপনাঙ্গ.....পুরুষদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে....

ভোলা তখন এক আতঙ্ক নগরী....

বাবা মা দুজনের কানেই গিয়ে পৌঁছেছিলো রাস্তায় আমাকে আটকানোর কথাগুলো....

বাবা মা দুজনেই এই শহরে আমাকে আর রাখা যাবেনা ঠিক করলেন....এ শহর তখন আমার জন্য আর নিরাপদ ছিলো না...

ওনাদের সিন্ধান্তেই আমাকে একপ্রকার ছাড়তে হয়েছিলো এই শহর....

অনেকটা বলে এবার একটু থামলেন মৌলি....

বললেন...আবার যা বলার কাল বলবো...টাঙ্গাইল থেকে আমাকে কেন ইন্ডিয়ায় চলে যেতে হয়েছিলো...আজ রাখি...

বলেই ফোনটা কেটে দিলেন...

আমিও অপেক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করলাম...মাথাটা এবার ঝিমঝিম করছে...গুলিয়ে যাচ্ছে সবকিছু....

চলবে....

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.