'মমতাজি'কে শংসাপত্র মোদীর, সঙ্কটের মুহূর্তে ভারত সরকারও লাগাতার পশ্চিমবঙ্গের পাশে থাকবে : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
কলকাতাঃ প্রধানমন্ত্রী নিজে মুখ না খুললেও তাঁর সরকারের একগুচ্ছ মন্ত্রী রোজ নিয়ম করে গালিগালাজ করছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। আর করোনা মোকাবিলা নিয়ে হওয়া ভিডিয়ো-বৈঠকে তো মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকেই— 'হোয়াই অলওয়েজ বেঙ্গল, বেঙ্গল, বেঙ্গল!'' ক্রমশ চেপে বসতে থাকা সেই তিক্ত আবহটাকে সম্ভবত উড়িয়ে নিয়ে গেল এক অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। বসিরহাট কলেজে বৈঠক করতে বসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। করোনার বিরুদ্ধে যখন যুদ্ধ চলছে, তার মাঝেই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আমপানের (প্রকৃত উচ্চারণে উম পুন) হানা— কতটা প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন পশ্চিমবঙ্গকে হতে হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মন্ত্র এবং সাইক্লোনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মন্ত্র পরস্পরের সম্পূর্ণ বিপরীত— এদিন বসিরহাট কলেজে বসে এমনই বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ব্যাখ্যায়— করোনার বিরুদ্ধে লড়ার জন্য ঘরবন্দি থাকতে হয়, পরস্পরের সঙ্গে দূরত্ব বহাল রাখতে হয় আর সাইক্লোনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে সবাইকে একসঙ্গে গিয়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছে। এই দুটো বিপরীত পরিস্থিতির বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গকে যখন একসঙ্গে লড়তে হচ্ছে, তখন কতটা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তা তিনি উপলব্ধি করতে পারছেন বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। সেই প্রসঙ্গেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেষ্টার কথা তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, দুই বিপরীত পরিস্থিতি সত্ত্বেও মমতাজির নেতৃত্বে রাজ্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই সঙ্কটের মুহূর্তে ভারত সরকারও লাগাতার পশ্চিমবঙ্গের পাশে থাকবে এবং যা প্রয়োজন, তা করার চেষ্টা করবে।
কেন্দ্র ও বাংলার সরকারের মধ্যে যে রকম টানাপড়েন চলছিল, তাতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে এমন মন্তব্য এই মুহূর্তে বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। যদিও দুর্গত এলাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী যদি মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলতেন, তা হলে খুব বেমানান পরিস্থিতি তৈরি হত বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই মত। সে কথা জানেন বলেই প্রধানমন্ত্রী ওই পথ নেননি বলে ওই পর্যবেক্ষকরা দাবি করছেন। কিন্তু করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে মোদির দলের রাজ্য শাখা এখন দু'বেলা আক্রমণ করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তা মোদী জানেন না, এমনও হতে পারে না। তা সত্ত্বেও মমতার জন্য মোদির এই শংসাপত্র সামনে এল। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, সঙ্কটের সময়ে দেশ বা রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে এরকম আচরণই প্রত্যাশিত।
কোন মন্তব্য নেই