Header Ads

মহামারির মাঝে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে ঘটতে পারে বড়সড় বিপত্তি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
বর্তমানে করোনা আতঙ্কে জর্জরিত সারা বিশ্ব। এরই মাঝে লকডাউনের বিধিনিষেধ লঘু করছে কিছু দেশ। বয়স্কদের তুলনায় বিশ্বে কমবয়সীদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও অনেকটাই কম। কিন্তু সম্প্রতি ইউনেস্কোর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, কোনোপ্রকার উপসর্গ না থাকায় কম বয়সীদের করোনা সম্ভাবনা ধরা পড়ছে না, ফলত এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি চালু করলে ঘটে যেতে পারে বড়সড় বিপদ। কি বলছে ইউনেস্কোর রিপোর্ট?

ইউনেস্কোর রিপোর্ট মোতাবেক, বিশ্বে নথিভুক্ত শিক্ষার্থীর প্রায় ৭২.৪% অর্থাৎ প্রায় ১২০ কোটি পড়ুয়ার পড়াশোনা লকডাউনের জেরে ব্যাহত হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া, ইজরায়েল, চীন, জার্মানির মত দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর কথা বললেও ভারত সরকার এখনও পর্যন্ত তেমন কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। অন্যদিকে অপর একটি সমীক্ষানুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা প্রায় ৩ গুন অধিক শিশুদের মধ্যে। চীন, ইতালি ও মার্কিন গবেষকদের সমীক্ষা অনুযায়ী, যেসকল স্থানে করোনার প্রভাব একেবারে কমেনি সেইখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সংক্রমণ বাড়বে। যদিও গবেষণায় উঠে এসেছে, বিদ্যালয় বন্ধ করলে পুরোপুরি আটকানো না গেলেও করোনার প্রভাবকে প্রায় ৪০-৬০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
চিনে করোনার আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মাঝেই ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই জরিপ করা হয়। গবেষণায় উহানের ৬৩৬ জন সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ও তাদের সংস্পর্শে আসা ১২৪৫ জন এবং সাংহাইয়ের ৫৫৭ জন সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ও সংস্পর্শে আসা ১২৯৬ জনকে নথিভুক্ত করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন বয়সের নাগরিকদের নিয়ে করা জার্মান ও ব্রিটিশ গবেষকদের করা অন্য একটি সমীক্ষানুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে যত সংখ্যক করোনা ভাইরাস থাকা সম্ভব, সমপরিমাণ ভাইরাস একটি শিশুর শরীরেও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বিদ্যালয় চালু হলে সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্কদের মতই ভূমিকা নেবে শিশুরা।
গবেষকরা ৩৭১২ জনের পরীক্ষা করেন যাতে বয়স ও করোনা ভাইরাসের সংখ্যার সম্পর্ক বোঝা যায়। সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১-১৩ বছরের শিশুরা বিশ্বের মোট করোনা আক্রান্তের ২%-এরও কম, ১৩-১৮ বছরের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা বেড়ে হয় ৫%। অন্যদিকে ২ রা এপ্রিল পর্যন্ত ২৫৭২ টি কেস অনুসন্ধান করে মার্কিন সংস্থা সিডিসি জানিয়েছে, ৩২% আক্রান্তের বয়স ১৫-১৭, ২৭% আক্রান্ত ১০ থেকে ১৪ বছরের, এক বছরের কম বয়সীদের মধ্যে আক্রান্ত ১৫% ও ১১%-এর বয়স ৫ থেকে ৯। তথ্যানুযায়ী, শিশুদের মাত্র ২% আইসিইউতে ভর্তি হয় যাদের মধ্যে অধিকাংশই ১ বছরের কম বয়সী। অন্যদিকে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশুদের মধ্যে উপসর্গের প্রকাশ না ঘটায় চিন্তিত গবেষকরা।
ভারতের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, "ভারতে করোনা টাস্ক ফোর্স অবস্থা খতিয়ে দেখছে। অবস্থা বুঝেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।" সূত্রের খবর, ভারতে বয়স অনুযায়ী মৃত্যুর হার বিশ্বব্যাপী হারের সাথে খাপ খায় না। সারা বিশ্বে ৬০ বছরের উর্দ্ধের মানুষদের ক্ষেত্রে করোনা বিপজ্জনক প্রমাণিত হলেও, ভারতে ৪৫% মৃতের বয়স ৬০-এর নিচে। অন্যদিকে, ০-১৩ বছরের শিশুদের মৃতের হার ভারতে সারাবিশ্বের তুলনায় বেশি। ফলত চিন্তিত ভারতীয় চিকিৎসকমহল। মার্কিন সংস্থা সিডিসির মতে, আমেরিকায় উপসর্গহীন অবস্থায় আক্রান্ত হবে কয়েক হাজার শিশু। তথ্যের বহরে তাই এই 'নিস্তব্ধ সংক্রমণকারী'-দের নিয়ে কপালে ঘাম ছুটছে প্রশাসনের।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.