Header Ads

ছেলেখেলার লকডাউন আশঙ্কার অতলে টেনে নিয়ে চলেছে আমাদের !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
ভেবেছিলাম পশ্চিমবাংলার লকডাউন প্রসঙ্গে একটা শব্দও লিখবো না--লেখার তো সত্যি সত্যি কিছু নেই গভীর উদ্বেগের সঙ্গে বিভ্রান্ত হওয়া ছাড়া ! আমার তো জানাই ছিল--আমরা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যেসব সিদ্ধান্ত মানতে বলবে আমরা তা মানব না--আমাদের ‘রাজনৈতিক মানবিকতা’ কিছুতেই নাইট-কার্ফু মানতে পারে না--কারণ, রাত্রির সিংহভাগ আমাদের বিশেষ প্রয়োজনে বাধাবন্ধনহীন রাখতেই হবে এবং কার্ফু জারি করলে জনগণ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যাবে। সুতরাং কার্ফু বাতিল--এমন কী ১৪৪ ধারাও নয় !
গোটা দেশে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর রেখাচিত্র যখন দ্রুত উর্দ্ধমুখী এবং সেটা কোথায় গিয়ে থামবে যখন ধারণাই করা যাচ্ছে না এবং এই পশ্চিমবঙ্গেও যখন প্রতি এক লক্ষে দেড় হাজারও টেস্ট করা যাচ্ছে না এবং রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থাটাই যখন রীতিমতো নড়বড়ে তখনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে সংখ্যা উঠে আসছে তা দেখেও আমাদের মনে করতে হবে আমরা পুরোপুরি সেফ জোনেই রয়েছি ! যদি লাখে দশহাজার টেস্ট করা সম্ভব হতো তাহলে যে কী ছবি আমাদের দেখতে হতো তা নিয়ে আর কিছু ভাবতে চাই না।
আমরা যে বয়সে এসে দাঁড়িয়েছি তাতে আমার সন্তানের উদ্বেগ ও আতঙ্ক যে কী পরিমাণে প্রতিদিন বেড়ে চলেছে তা বোঝানো খুব শক্ত। পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত সচেতন সন্তান মাত্রেই তাদের
মা-বাবাদের নিয়ে ভয়ানক উৎকণ্ঠার মধ্যে ছটফট করছে। এটা
যে কতটা অসহনীয় তা আমাদের রাজ্যের কর্তাব্যক্তিরা একটুও বুঝতে পারছেন বলে মনে করার কোনো কারণই আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পিক টাইম--ঠিক এই সময়টিতেই এ রাজ্যে ‘রাজনৈতিক মানবিকতা’কে অগ্রাধিকার দিয়ে কার্ফুর সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেওয়া হল। ২৫’মের তিন-চারদিন আগে বড় বড় দোকান-বাজার খুলে দেওয়ার দায়বদ্ধতাকে পরিস্থিতির প্রেক্ষিত বিবেচনা করেও মুলতুবী রাখা গেল না ! কতকগুলো বিষয়কে বিবেচনা করে কন্টেইনমেন্ট জোন চিহ্নিত করা হয়--তাকেও তিনভাগে ভাগ করলে যে তার গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে এটা বুঝে উঠতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে আমাদের মতো স্বল্পশিক্ষিত অচেতন মানুষদের।
বিশেষজ্ঞরা কি ভাবছেন বা কি বলছেন জানি না--কিন্তু আমাদের স্পষ্ট করে জানতে ইচ্ছে করছে কমিউনিটি সংক্রমণ বলতে ঠিক কি বোঝায়--আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় একলক্ষে পৌঁছে যাওয়ার পরেও কমিউনিটি সংক্রমণের মধ্যে আমরা ঢুকে যাই নি ভেবে নিশ্চিন্ত থাকতে হবে ! বড় বড় দোকান-হকার্স মার্কেট খুলে দিলে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা যাবে (যদিও এ রাজ্যের লকডাউনের বাজারহাটের ছবিতে  সেটা প্রায় দেখাই যায় নি)--এমন নিশ্চয়তা কোথা থেকে ভেসে আসছে আমরা জানি না। সেলুন-পার্লারে তো ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শ ছাড়া কিছুই হবার যো নেই--আর যারা এখানে কাজকর্ম করবে এবং যারা যাওয়া আসা করবে তাদের সকলের করোনা টেস্ট হয়ে যাবে তো? ডাক্তারদের অনেকই করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে না পারলে রুগী দেখতে চাইছেন না যেখানে সেখানে এইসব হট্টমেলায় কমিউনিটি সংক্রমণরোধ করা সম্ভব হবে শুধুমাত্র ভাষণ ও বাণীতে?
আমরা যারা বিশেষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি তাদের উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগের কোনো মূল্যই নেই? এমনিতেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই সংক্রমণ নিয়েই ঢুকেছেন এমনটা কিন্তু জেলায় জেলায় স্পষ্ট হচ্ছে। জুনের মাঝামাঝিতে গিয়ে এ রাজ্যের ছবিটা কেমন দেখতে হবে সেটা নিয়ে আমরা কেউ ভাববো না?
টুঁ-শব্দটিও করবো না? আতঙ্কে উদ্বেগে আমরা অস্থির হব না? সারা পৃথিবীর সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পরিস্থিতি খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা যাদের আছে তারা আতঙ্কিত বোধ করবেই লকডাউন নিয়ে এই ধরণের ইম্ম্যাচিওর ছেলেখেলার মারাত্মক প্রবণতায়। যে সময়টিতে সর্বাধিক সতর্কতার প্রয়োজন ছিল--কঠোরভাবে লকডাউন মেনে চলা দরকার ছিল--ঠিক তখনই সবকিছু খোলামেলা করে দেওয়ার পরিণাম যে কী হতে চলেছে বা হতে পারে সেটা ভাবতে গেলেই শিউরে উঠতে হয় ! আমাদের ভাগ্যটাকেই লকডাউন করে দিয়ে যে ‘লকডাউন’ এই সময়টাতে চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল তা একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না। এখন ঈশ্বরই একমাত্র
ভরসা !!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.