Header Ads

রবীন্দ্রজয়ন্তীতেও মমতার গান !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
 
(সৌজন্যে : সামন্তক ঘোষ)
 
এ বার রবীন্দ্রজয়ন্তী নিয়েও বিতর্ক। যার কেন্দ্রবিন্দুতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ জানিয়েছে, পঁচিশে বৈশাখের অনুষ্ঠানে বাজাতে হবে মুখ্যমন্ত্রী গান এবং তা বাজানোও হয়েছে।
গত বুধবার পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। যাতে বলা হয়, প্রতিবারের মতো এ বছর দিকে দিকে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করা হবে না। তবে সরকারের তরফ থেকে কলকাতা এবং বিভিন্ন জেলায় সরকারি অনুষ্ঠান হবে। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন উপলক্ষে সরকার ট্যাবলো বার করবে জেলায় জেলায়। যা রবীন্দ্রনাথের ছবি দিয়ে সাজানো হবে। বাজানো হবে রবীন্দ্রনাথের বাছাই করা গান। তারই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা করোনা বিরোধী প্রচারের গানও বাজানো হবে। শুধু তাই নয়, পাড়ায় পাড়ায় এবং বিভিন্ন আবাসনে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানেও ওই গান বাজানোর নির্দেশ জারি করে পুলিশ। বলা হয়, সকাল ন’টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে বাজাতে হবে মুখ্যমন্ত্রীর গান।
রাজ্যের শিল্প-সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই পুলিশের এই বিজ্ঞপ্তি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পবিত্র সরকার জানিয়েছেন, ''প্রতিদিনই তো ওঁর গান শুনতে হয়। করোনার বিরুদ্ধে প্রচারও জরুরি, সন্দেহ নেই। তবে একটা দিন অন্তত রবীন্দ্রনাথের জন্য থাক ! রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান বাজানো কি খুব প্রয়োজন ছিল?''
 
পবিত্রবাবুর সঙ্গে অবশ্য এক মত নন সুবোধ সরকার। তিনি জানিয়েছেন, ''রবীন্দ্রনাথের গান বন্ধ করে তো কেউ করোনার প্রচারের গান বাজাতে বলছে না ! আমি তো বলবো, পুলিশ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। রবীন্দ্রজয়ন্তী নিঃসন্দেহে বাঙালির আবেগের জায়গা। পুলিশ সেই মঞ্চটাকেই করোনা প্রতিরোধের জন্যও ব্যবহার করছে। কারণ, এখনও করোনা নিয়ে বহু মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি।''
 
বিরোধী রাজনীতিকদের অনেকেই পুলিশের এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। প্রশ্ন উঠছে নাগরিক সমাজের একাংশেও। বলা হচ্ছে, কেন যে কোনও ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর গান, কবিতা, ছবি আমাদের শুনতে এবং দেখতে হবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসক এবং রাজনীতিক হিসেবে বিশিষ্ট কিন্তু শিল্পী হিসেবে তো নন ! তা হলে কেন সরকারি প্রচারে বার বার তাঁর ছবি, কবিতা এবং গান সামনে আনা হয়? এটাও কি এক ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার
নয়?
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ''প্রথমত রবীন্দ্রগানের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান বাজানোর অর্থ রবীন্দ্রনাথকে অপমান করা। বাঙালি সংস্কৃতিকেও অপমান করা। দ্বিতীয়ত বলতে চাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে যে প্রশাসনটি চালান, সেখানে তিনি একাই সব। অর্থাৎ, তাঁর চরিত্রটি কার্যত একনায়কতান্ত্রিক। একনায়কের কাজই হলো একমাত্র নিজেকে তুলে ধরা। সে কারণেই তাঁর প্রশাসনে তিনিই কবি, তিনিই শিল্পী, তিনিই গীতিকার। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।''
সুজনবাবুর বক্তব্যের বিরোধিতা করে প্রাক্তন সাংসদ এবং নাট্য বক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ বলেছেন, ''এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করাটাই আসলে লজ্জাজনক। সময়ের কথা মাথায় রাখা জরুরি। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা পৃথিবীতে এখন করোনা সংকট। দিকে দিকে লকডাউন। ফলে মানুষের কাছে গিয়ে সব সময় প্রচার করাও সম্ভব হচ্ছে না। রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানের মধ্যে যদি করোনার প্রচারও জুড়ে দেওয়া হয়, তাতে ভুল কিছু তো দেখতে পাই না। রাজনীতির জন্য রাজনীতি না করাই শ্রেয়।''
তৃণমূল সাংসদ শুখেন্দুশেখর রায়ের বক্তব্য, ''শুধু রবীন্দ্রজয়ন্তী নয়, বর্তমান সময়ে যে কোনও সরকারি অনুষ্ঠানেই করোনা বিরোধী সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এই গান ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকার তো করোনার মধ্যেও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনুষ্ঠান করছে। তাতে করোনা সচেতনতার বিষয়টি থাকলে অসুবিধা কোথায়?''
বিতর্ক ছিল, আছে, থাকবে। তবে নাগরিক সমাজে বার বারই একটি প্রশ্ন ফিরে ফিরে আসছে। করোনা নিয়ে প্রচার আগেও হয়েছে, আবারও হবে। তারই মধ্যে করোনা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য রাজনীতিও চলবে। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগও বন্ধ হবে না। শুধু এই একটি দিন সেই রাজনীতি থেকে রবীন্দ্রনাথকে মুক্ত রাখলে বাঙালির সম্মানহানি হতো না !

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.