Header Ads

ভারতেও করোনা নিজেকে পাল্টাচ্ছে বারবার !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
 
বিশ্বজুড়ে প্রলয় সৃষ্টি করেছে আনুবিক্ষণীক জীব নভেল করোনাভাইরাস। প্রতিনিয়ত নিজের গঠন বদলে ভাইরাসটি আরো সংক্রামক হয়ে উঠছে। বারবার জিনগত পরিবর্তনের ফলে ভ্যাকসিন আবিষ্কারেও বেগ পেতে হচ্ছে গবেষকদের। মেক্সিকোর লস অ্যালমস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি ও ভারতের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, জিনের গঠনের এই বদল বা মিউটেশন সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ভারতে। প্রায় ৫০ শতাংশ ভাইরাল স্ট্রেনের মিউটেশন হয়েছে ভারতেই।
 
ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনই হল যত নষ্টের গোড়া। যত কারিগরি সেখানেই। মানুষের শরীরে ঠাঁই খুঁজে নেওয়ার চাবি হল এই স্পাইক প্রোটিন। তাই একেই বদলে বদলে নিজের শক্তি বাড়িয়ে চলেছে করোনাভাইরাস, এমনটাই দাবি গবেষকদের।
সার্স-কভি-২ ভাইরাস যে জিনের গঠন বদলাচ্ছে সেটা এখন অনেকটাই পরিষ্কার। তা না হলে একটা ভাইরাসের পক্ষে এতদিন ধরে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে ঠাঁই বদলে যাওয়া সম্ভব হত না। নিজের জিনের গঠন বদলে ফেলে নতুন নতুন রূপে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ভাইরাস। জিনের গঠনের এই বদলকেই বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘জেনেটিক মিউটেশন’। প্রায় সব ভাইরাসের মধ্যেই এমন জেনেটিক মিউটেশন বা জিনগত বদল দেখা যায়। কারো বেশি, কারো কম। কিন্তু সার্স-কভি-২ সেখানে সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এতবার জিনের গঠন বদলেছে এই ভাইরাস যে তার আসল উৎস খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে গবেষকদের কাছে।
লস অ্যালমসের ভাইরোলজিস্টরা বলছেন জিনের গঠনের এই বদল বা মিউটেশন সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ভারতে। প্রায় ৫০ শতাংশ ভাইরাল স্ট্রেনের মিউটেশন হয়েছে ভারতেই। অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও)-এর ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী এসএস ভাসান বলেছেন, ভারতীয়দের শরীর থেকে নেওয়া ৮২টি নমুনার মধ্যে যে ভাইরাল স্ট্রেন পাওয়া গেছে তার ৫০ শতাংশই জিনের গঠন বদলে ফেলেছে। এই মিউটেশনের নাম দেওয়া হয়েছে D614G। ডক্টর ভাসান বলছেন, 'সাধারণ ভাইরাস ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে যদি তার ভিতরে একাধিক মিউটেশন হয়। অর্থাৎ বদলে যায় জিনের গঠন। সাধারণ ফ্লু-এর ভাইরাসও তখন হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। তেমনই কিছু ঘটে চলেছে করোনাভাইরাসের সঙ্গেও। এতবার সে নিজেকে বদলে ফেলছে যে এখন থেমে যাওয়ার ক্ষমতা তার নিজেরও নেই।'
এমনকি এই ‘মডিফায়েড’ ভাইরাসকে রোখার উপায়ও গবেষকদের অজানা। কারণ যে ওষুধ বা ভ্যাকসিনই দেওয়া হোক না কেন, ভাইরাস তার ধরন বদলে ফেললে সেই ভ্যাকসিন নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। আর এই মিউটেশন সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনেই।
কাঁটার মতো খোঁচা খোঁচা দেখতে ওই অংশগুলোই ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন। মানুষের শরীরের ঢোকার জন্য এই স্পাইক প্রোটিনরা কোষের মধ্যে তাদের বন্ধু প্রোটিন খুঁজে নেয়। যার সঙ্গে জোট বেঁধেই কোষে ঢোকার রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায়। মানুষের দেহকোষের এই প্রোটিন হল এসিই-২ । এই প্রোটিনই ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করছে। শরীরের যে যে অঙ্গের কোষে এই প্রোটিন রয়েছে সেখানেই গিয়ে জুড়ে বসছে ভাইরাস। তারপর এই বাহক প্রোটিনের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে কোষের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। একবার দেহকোষে ঢুকতে পারলেই আর রক্ষে নেই। যতখুশি প্রতিলিপি তৈরি করে সংখ্যায় বেড়ে চলেছে এরা।
ভারতের সিএসআইআর-এর ইনস্টিটিউট অব জিনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির গবেষক ডক্টর বিনোদ স্কারিয়াও রয়েছেন এই গবেষণায়। ডক্টর ভাসান ও ডক্টর বিনোদ বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার সিএসআইআরও-তে ৭,১৭৬ ভাইরাস জিনোম নিয়ে গবেষণা চলছে। বিশ্বের নানা দেশ থেকে কভিড রোগীদের নমুনায় পাওয়া ভাইরাল স্ট্রেনের জিনের গঠন বিন্যাস পাঠানো হয়েছে সেখানে। তার মধ্যে থেকে ভারতীয়দের শরীরে পাওয়া ভাইরাল স্ট্রেনের ৫০ শতাংশের মধ্যে এই মিউটেশন দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি বদল হয়েছে ওই স্পাইক প্রোটিনেরই।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.