Header Ads

করোনা রুখতে ব্যর্থ পশ্চিমবঙ্গ, অভিযোগ মোদী সরকারের !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে কাঠগড়ায় তুললো নরেন্দ্র মোদী সরকার। যে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন।
একই দিনে জোড়া চিঠি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যার তুলনায় খুব কম করোনা পরীক্ষা হয়েছে। আর রাজ্যে করোনায় মৃত্যুর হার দেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি, ১৩.০২ শতাংশ। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, পরিস্থিতির ওপর রাজ্য সরকারের নজরদারি, করোনা পরীক্ষা ও শনাক্ত করার কাজটা কতটা খারাপভাবে করা হয়েছে। তাই করোনা পরীক্ষার সংখ্যা এখন অনেক বাড়াতে হবে। মুখ্যসচিবকে অন্য চিঠিটি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের প্রধান অপূর্ব চন্দ্র। সেখানেও বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃত্যুর হার দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। 
 
এটাই প্রমাণ করছে প্রশাসনের নজরদারি কতটা দুর্বল। রাজ্য সরকার ও তৃণমূল অবশ্য এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, রাজনৈতিক কারণে এই ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে।
অজয় ভাল্লা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল রাজ্যের সাতটি জেলায় অনেকটা সময় নিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বিভিন্ন সময়ে তাঁদের পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে। তার ভিত্তিতেই তিনি এই চিঠি লিখছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের অভিযোগ, রাজ্যে লকডাউন ঠিকভাবে চালু করা হয়নি। কলকাতা ও হাওড়ায় লকডাউন ভাঙার প্রচুর ঘটনা ঘটেছে। বাজারগুলি লোকের ভিড়ে উপচে পড়েছে। তার ওপর সেখানে আবর্জনা জমে আছে। প্রচুর লোক মাস্ক ছাড়া রাস্তায় নেমেছেন। লোকে নদীতে গিয়ে স্নান করেছেন। পাড়ায় ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা হয়েছে। এমনকী যে সব জায়গায় করোনা হয়েছে, সেখানেও রিক্সা চলেছে। সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি। এ সবই হলো খারাপ ও দুর্বল নজরদারি ও লোক নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা। শ্রমিকদের মধ্যে করোনা নিয়ে সচেতনতার অভাব খুবই চিন্তার। সেই সঙ্গে চিঠিতে পুলিশ সহ করোনা যোদ্ধাদের ওপর নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হামলার উল্লেখও করা হয়েছে। আর তৃণমূলের দাবি, এই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।
অজয় ভাল্লা আরেকটি গুরুতর অভিযোগ করেছেন। তা হলো, করোনায় আক্রান্তদের খুঁজে বের করা ও নজরদারির ক্ষেত্রে প্রশাসনের গাফিলতি। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, করোনা লক্ষণ নিয়ে থাকা লোকেদের কতটা পরীক্ষা করা হয়েছে, কতগুলি বাড়িতে প্রশাসন গিয়েছে, কতজন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তার কোনও তথ্য রাজ্য সরকার দেয়নি। পাহাড়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই বলেও জানানো হয়েছে। পাহাড় থেকে নমুনা শিলিগুড়িতে পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হয়। তার জন্য সময় লাগে। এ ছাড়া রাজ্য সরকারকে বলা হয়েছে, তাঁরা যেন চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের ভালো মানের পিপিই বা সুরক্ষা পোশাক দেয়। আর দার্জিলিং ও শিলিগুড়িতে চা বাগানের শ্রমিকদের ক্ষতিপুরণ দেওয়াটাও জরুরি। অবিলম্বে ভুলগুলি শুধরে নেওয়ার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব।
এই জোড়া চিঠি নিয়ে রাজ্য সরকার রীতিমতো ক্ষুব্ধ। রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া হলো, কেন্দ্রীয় সরকার যেন গোয়েন্দাগিরি করছে। সংকটকালে এই ধরনের মনোভাব বিপজ্জনক। তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন, সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদাররা সাংবাদিক সম্মলেন করে কয়েকশ কোটি টাকা দিয়ে হাসপাতালের ওপর ফুল ফেলা, পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রেলের টিকিট দেওয়া, আরোগ্য সেতু অ্যাপের মতো বিষয়গুলি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন।
বিরোধীরা প্রথম থেকেই রাজ্যে করোনার পরীক্ষা হচ্ছে না বলে দাবি করছিল। লকডাউনেরমধ্যে কলকাতার ভিড়ে ঠাসা বাজারের ছবিও সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এটা ঠিক, সম্প্রতি রাজ্য সরকার করোনা পরীক্ষা আগের থেকে অনেক বাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় দলের চিঠিতে তার উল্লেখও আছে। ডেরেক জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষা হয়েছে দু-হাজার ৫৭০টি। মোট করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৩০ হাজার ১৪১ জনের। প্রথমদিকে কেন্দ্রীয় সংস্থা কিট পাঠায়নি বলে পরীক্ষা কম হয়েছে।
রাজ্যে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। তাই করোনার সময়েও ক্ষমতাসীন তৃণমূল ও প্রধান বিরোধী বিজেপি একে অপরের সমালোচনায় ব্যস্ত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের চিঠিকে বিজেপি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তবে তাঁরা এটাও মনে করছেন, এর মধ্যে অনেক অভিযোগেরই ভিত্তি আছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.