Header Ads

বরাকের মাতৃভাষা আন্দোলন ও শহীদ স্মৃতিচারণ


 হিরণ্ময় রায় 




আসামের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চালিহা ১৯৬০ সালের ১০ই অক্টোবর আইনসভার সামনে এক বিল পেশ করেছিলেন যা অসমিয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র সরকারী ভাষা হিসাবে ঘোষণা করার প্রস্তাব রাখে। বরাক উপত্যকার বাঙালিভাষী মানুষ কাছাড় গণ সংগ্রামের নামে এক গণ প্ল্যাটফর্ম গঠন করে সে বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের গড়ে তুলে। উপত্যকায় বাঙালির অধ্যুষিত শিলচর, হাইলাকান্দি এবং করিমগঞ্জ শহর তিনটিই সে সময়ের অভিবক্ত কাছাড় জেলার অধীনে ছিল। আসাম কংগ্রেসের ভাষা বিলের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই শিলচর, হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জ শহরগুলোতে বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল আয়োজিত হচ্ছিলো। বেশ কয়েকটি বিক্ষোভের পরে, কাছাড় গণ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি রথীন্দ্রনাথ সেন ঘোষণা করেন আসাম সরকার যেন বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষাটিকে সরকারী ভাষা হিসাবে বিবেচনা করে। আর, ১৯ মে, ১৯৬১ সালে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ সন্ধ্যা পালন করা হবে। আসাম পুলিশ গণ আন্দোলনের তিন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে রথীন্দ্রনাথ সেন, বিভূভূষণ চৌধুরী এবং নলিনীকান্ত দাস গ্রেপ্তার করেছিল ১৮ ই মে, ১৯৬১ সালে। এরপর, উপত্যকায় ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে। এ সমস্ত ঘটনাগুলি স্মৃতিচারণ করেছেন সন্তোষ দে। বর্তমানে তিনি শিলচর শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে উদরবন্দের বাসিন্দা। শিলচর শহরে তিনি তখন গুরুচরণ কলেজের ছাত্র। তখন তার বয়স প্রায় ১৮ বছর। ১৯ মে, ১৯৬১ সালে গুরুচরণ কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের এক অধ্যাপক  সকল শিক্ষার্থীদের ক্লাসে  উপস্থিত না হওয়ার নির্দেশ দেন। সন্তোষ বাবু যোগ করে বলেন যে বিপুল সংখ্যক লোক সেদিন শিলচর রেলস্টেশনে জড়ো হয়েছিল। দুপুর ২ টা অবধি ধর্মঘট শান্তিপূর্ণ ছিল। আন্দোলনকারীরা তাদের অনুগামীদের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। একজন আন্দোলনকারী পাশে থাকা এক ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আধাসামরিক বাহিনী জড়ো হয়। পুলিশবাহিনী আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা ও রাইফেল বাট দিয়ে মারতে শুরু করে। সেই মুহুর্তে জ্বলন্ত ট্রাক দেখে থানার ভারপ্রাপ্ত এক কন্ট্রোলিং অফিসার জোরে চিৎকার করে বলতে লাগলেন - আগুন’ ‘আগুন। এ চিৎকারকে গুলি চালানোর আদেশ হিসাবে মেনে পুলিশবাহিনী মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে আন্দোলনকারীদের দিকে সতেরো রাউন্ড গুলি চালায়।গুলিবিদ্ধ এগারোজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। শহীদদের নাম কমলা ভট্টাচার্য, শচীন্দ্র চন্দ্র পাল, বীরেন্দ্র সূত্রধর, চণ্ডী চরণ সূত্রধর, হিতেশ বিশ্বাস, সত্যেন্দ্র দেব, কুমুদ রঞ্জন দাস, সুনীল সরকার, তারানী দেবনাথ, সুকমল পুরকায়স্থ এবং কানাইলাল নিয়োগি। বিশ্বের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে কমলা ভট্টাচার্য হলেন একমাত্র মহিলা ভাষা শহীদ। পরবর্তীতে, আসাম সরকার সে বিতর্কিত ভাষা বিলকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল।

[লেখক দেরাদুনের পেট্রোলিয়াম উনিভার্সিটির অধ্যাপক। মতামত লেখকের নিজস্ব।]

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.