লকডাউনের সময় বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ করে জৈব বৈচিত্রকে সফল করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির
অমল গুপ্ত : গুয়াহাটি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রবিবার তাঁর মাসিক ‘মন কী বাত’ শীর্ষক রেডিও বার্তায় দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, দেশ আজ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। করোনায় উদ্ভূত জটিল পরিস্থিত পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশার আমফান সেই সঙ্গে দেশের একাংশে পঙ্গপালের হানা, এই পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার মত মানসিক শক্তি ভারতবাসী আছে। করোনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিজন মানুষকে দু-গজ দূরে থেকে মুখে মাস্ক পড়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের মানুষ পরস্পর পরস্পরকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন। মাদুরাইয়ের সি মোহন দুস্ত মানুষদের খাদ্যশষ্য বিতরণ করছেন। আগরতলার গৌতম দাস ঠেলা চালক। সে তার আয় থেকে গরিবদের সাহায্য করছেন। দেশের মহিলা আত্মসহায়ক গোষ্ঠী মাস্ক তৈরি করে মানুষকে বিনা পয়সায় দিচ্ছেন, নাসিকের কৃষক রাজেন্দ্র তার ট্রেক্টারে স্যানিটাইজ ব্যবস্থা কায়েম করে মানুষদের মধ্যে ছড়াচ্ছেন। এই লকডাউনের সময় মানুষদের মধ্যে উদ্ভাবনী শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করার জন্য রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। দেশে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুঃখ যন্ত্রণার ভাগিদার হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের ট্রেনে-বাসে এসে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাদের যন্ত্রণায় দুরবস্থার জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত। এর মধ্যেও শ্রমিক ভাইদের মনোবল অটুট আছে। গ্রামে তাদের রোজগারের ব্যবস্থা করছে সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার মাইগ্রেশন কমিশন গঠন করে পরিযায়ী শ্রমিকদের আত্মনির্ভরশীল করার জন্য চিন্তাচর্চা করছে। তিনি বলেন, স্থানীয় সামগ্রী উত্পাদন এবং বিক্রীর উপর নির্ভারশীল করে নিজের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করতে হবে। তিনি অসম থেকে জনৈক সুদীপের বার্তা সম্পর্কে বলেন, তিনি অসমের বাঁশ সম্পদকে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা বাঁশকে গ্লোবাল ব্র্যান্ড করার চেষ্টা করছি। তিনি আসন্ন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষ্যে এবং যোগাভ্যাসের তাত্পর্য ব্যাখ্যা করে বলেন, আজ বিশ্বে হলিউড থেকে হরিদ্বারের মানুষ যোগাভ্যাস করছেন। এই যোগ মানুষের রোগ উপসমের একমাত্র মাধ্যম। শরীরে ইমিউনিটি বাড়ায়, যে কোনো সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে, শ্বাসপ্রশ্বাসের ভারসাম্য রক্ষায় যোগাভ্যাসের কার্যকারীতা আজ সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। কপালভাতি, উলুলোম-বিলোলোম প্রভৃতি যোগাভ্যাস অনুশীলনের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আয়ুস্মান যোজনায় দেশের এক কোটি মানুষকে বিনামূল্যে চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি মণিপুরের সেলেন সাং-এর কথা উল্লেখ করে বলেন, তার ব্রেন টিউমার হয়েছিল। আয়ুস্মান যোজনার সুযোগ নিয়ে বিনা পয়সায় চিকিত্সা করান। প্রধানমন্ত্রী আগামী ৫ জুনের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের তাত্পর্যতা বুঝিয়ে বলেন, এবার বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম হচ্ছে জৈব বৈচিত্র। লকডাউনের ফলে প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। জঙ্গলের পশু-পাখীদের মুক্ত বিচরণ করতে দেখা যাচ্ছে। বহু দূর থেকে এখন মানুষ পাহাড়-পর্বত, জল-জঙ্গল, নদ-নদী স্বচ্ছ হয়েছে, পরিবেশ দূষণমুক্ত হয়েছে। তিনি বৃষ্টির জল সংরক্ষেণর উপর জোর দিয়ে বলেন, বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। পাঁচ-সাত দিনের বৃষ্টিকে ধরে রেখে জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি পর্যায়ে নয়, ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি মানুষকে জল সংরক্ষণের উপর জোর দিতে হবে। প্রতিটি মানুষকে বৃক্ষ রোপণের ব্যবস্থা করতে হবে। বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে জৈব বৈচিত্র অক্ষুণ্ণ থাকবে। লকডাউনের ফলে প্রকৃতি স্বস্থি পেয়েছে। মানুষের হস্তক্ষেপ নেই। তাই মানুষকেও সেইভাবে চলতে হবে, যাতে পরিবেশ প্রকৃতি অক্ষুণ্ণ থাকে। করোনার মতো সংক্রমণ থেকেও মুক্ত হতে পারে মানুষ।
কোন মন্তব্য নেই