শম্ভু রক্ষিত !!
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
আমার সঙ্গে তাঁর পরিচয় আজকের নয়। বলতে গেলে ‘মহাপৃথিবী’র কৈশোরে পদার্পণের সময় থেকেই। প্রধানতঃ কবি হিসেবেই তাঁর পরিচিতিটা বহু বিস্তৃত। সম্পাদক এবং সাহিত্য সংগঠক হিসেবে তাঁর উচ্চতার মাপজোখ সে অর্থে খুব একটা হয় নি। তাঁর ভগ্ন স্বাস্থ্য ও সংসারে আর্থিক টানাটানি নিয়ে বহুমাত্রিক চর্চাও তাঁকে প্রায় সবসময়ে ঘিরে থাকলেও ‘মহাপৃথিবী’তে তাঁর দাপুটে পদচারণা ততক্ষণ শ্লথ হয়ে উঠতে পারে নি যতক্ষণ তাঁর শরীর তাঁকে একেবারে কাবু করে ফেলতে পেরেছে। প্রায় নিয়মিত তিনি ‘মহাপৃথিবী’ পাঠাতেন। তিনি নিজেই ছিলেন জাত-কবি,
ফলে কবিদের চিনতে তাঁর খুব একটা ভুল হতো না। প্রকৃত কবিতা ছাপতেন তিনি। তবু মাঝে মাঝে বেশ কিছু দুর্বল কবিতাও তাঁর ‘মহাপৃথিবী’র যাত্রী হয়ে উঠতো--আমি বিস্ময় প্রকাশ করলে বলতেন--একটু আধটু উৎসাহ না দিলে এরা কবিতা নিয়ে সিরীয়াস হবে কি করে ! তারা কতটা সিরীয়াস হতে পেরেছে আমার জানার বিশেষ সুযোগ হয় নি। ‘মহাপৃথিবী’র কবিকে একবার সাহিত্য ভগীরথ সম্মান-সংবর্ধনা জ্ঞাপক মঞ্চে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমার শিল্পী বন্ধু তপন কর-এর সঙ্গে তিনি চলে এসেছিলেন। দিন কয়েক ছিলেনও মাথাভাঙ্গায়। স্মৃতি হিসেবে সেই সব খণ্ডমুহূর্তের মূল্য অনেক ! আমি শম্ভু রক্ষিতকে কখনো সুবোধ-শ্রীজাত প্রমুখদের সারিতে বসাতে পারি নি--বসানোর কথাও ভাবি নি কখনো। কারণ,
শম্ভু রক্ষিতের জাতটাই একেবারে আলাদা--ভাবনা চিন্তা নির্মাণের মধ্যে কোনোরকম স্টান্টবাজিতে তাঁর একেবারেই আগ্রহ বা বিশ্বাস ছিল না--কবিতার জগতটাকে তিনি এক মুহূর্তের জন্যেও সার্কাসের তাঁবুর মধ্যে কসরৎ প্রদর্শনের ক্ষেত্র বলে মানতে চান নি। এসব বিষয় নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছে তাঁর সঙ্গে। তাঁর যা প্রতিভা ছিল তা দিয়ে তিনি চেষ্টা করলে হয়তো দরবারী কবি হতেও পারতেন। কিন্তু তাঁর পকেটে আমি অন্ততঃ ঝাড়ন টাইপের কোনো রুমাল দেখি নি ! আমার পত্রিকার জন্যে তিনি একাধিকবার কবিতা পাঠিয়েছেন--সে কৃতজ্ঞতা ভোলার নয়। তাঁর সঙ্গে আমার মুখোমুখি শেষ দেখা ২০১২ সালে বাংলা আকাদেমি’র সম্মান-সংবর্ধনা জ্ঞাপক অনুষ্ঠানে। ঐ অনুষ্ঠানে আমরা দু’জনেই সম্মানিত হয়েছিলাম। সেদিনও প্রচুর কথা হয়েছিল। তারপর আর মুখোমুখি কথা না হলেও ফোনে মাঝে মাঝে কথা হতো। ইদানীং তাঁর কথাবার্তার মধ্যে বুকের গভীরে লুকিয়ে থাকা কিছু অভিমান কিছু বিস্ময় উঠে আসত। খারাপ লাগতো খুব।
তবু এখনই তাঁর সেই অর্থে সত্যি সত্যি তো মহাপৃথিবীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সময় হয় নি ! তবু তো কাউকে কাউকে যেতেই হয়--আমাদের যত খারাপই লাগুক না কেন ! ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাই--যেখানেই তিনি থাকুন না কেন শান্তি ও স্বস্তিতেই যেন থাকতে পারেন তিনি !!
তবু এখনই তাঁর সেই অর্থে সত্যি সত্যি তো মহাপৃথিবীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সময় হয় নি ! তবু তো কাউকে কাউকে যেতেই হয়--আমাদের যত খারাপই লাগুক না কেন ! ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাই--যেখানেই তিনি থাকুন না কেন শান্তি ও স্বস্তিতেই যেন থাকতে পারেন তিনি !!
কোন মন্তব্য নেই