Header Ads

অগপ, কংগ্রেস, বিজেপি কোনো দলের সরকার বরাকের ভাষা শহিদদের স্বীকৃতি, মর্যাদা আর্থিক সাহায্য কিছুই দেয়নি, বিধানসভাতে বারবার দাবি উঠেছে, সরকার বিস্ময়করভাবে চুপ থেকে গেছে



অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : যারা মানুষ খুন করে জেল থেকে বেরোল, সেই সব জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদীরা সমাজের মূল স্রোতে সামিল হয়ে গণতন্ত্র সামলাচ্ছেন। তাদের পুরস্কৃত করা হল বিগত ১০ বছরের অগপ, সরকার পরবর্তীতে ১৫ বছরের কংগ্রেস সরকার আর আজ চার বছরের বিজেপি সরকার তিন সরকারের বহু অমিল, কিন্তু বাঙালিদের সম্পর্কে তাদের স্থিতি বদল হয়নি। এনআরসি, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিজেপি আমলে রাজ্যের হিন্দু মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে যেভাবে হেনস্থা করা হয়েছে, কাঠ গড়ায় দাঁড়া করানো হয়েছে, তার তুলনা মেলা ভার। আগামীকাল অসমের বাংলাভাষী মানুষদের কাছে এক বিশেষ রক্তাক্ত দিন। ১৯৬১ সালের ১৯ মে বরাক উপত্যকার শিলচর শহরে বাংলাভাষার দাবিতে ১১ জন বাঙালি পুলিশের গুলিতে প্রাণাহুতি দেন। আজ প্রায় ৬০ বছর পরও ১০ জন যুবক ১ জন যুবতীকে ভাষা শহিদদের মর্যাদা দেওয়া হলো না। শিলচর রেল স্টেশনকে ভাষা শহিদ স্টেশনের মর্যাদা দেওয়া হলো না। সত্যেন্দ্র দেব, চন্ডী চরণ সূত্রধর, বীরেন্দ্র সূত্রধর, সুনীল সরকার, হিতেশ বিশ্বাস, সুকোমল পুরকায়স্থ, কমলা ভট্টাচার্য্য, শচীন পাল, তরণী দেবনাথ, কানাইলাল নিয়োগী ও কুমুদ দাস এই ১১ জন ভাষা শহিদদের নাম বছরে মাত্র একবার শোনা যায়। কাল বরাক উপত্যকায় সর্বত্র শহিদদের স্মরণে, সভা সমিতি হবে, ফুলে ফুলে ভরে যাবে শহিদ বেদীগুলো, সঙ্গে বক্তৃতার ফুলঝুরি ছুটবে, তারপর? সব তুলে রাখা হবে পরের ১৯ মের জন্যে। অসম বিধানসভাতে বহুবার বরাকের শহিদদের প্রসঙ্গ উত্থপিত হয়েছে। উত্তর করিমগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক কমলাখ্য দে পুরকায়স্থ বেশ কয়েকবার ভাষা শহিদদের উপযুক্ত মর্যাদা, দেবার আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন, বিস্মযের কথা শাসক দল বিজেপির কোনও বিধায়ক এই দাবির সমর্থনে এগিয় আসেননি। অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বাজেট ভাষণে শহিদদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। করিমগঞ্জের ঐতিহাসিক মালিদহর-এর শহিদদের মর্যাদা দেওয়ার দাবিও তুলে ছিলেন কমলাখ্য, সরকার ভাসা ভাসা জবাব দিয়েছিল। বিগত কংগ্রেস সরকার বিশ্ব কাঁপানো নেলি গণ হত্যার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং শিলচরে গুলি চালানোর ঘটনার তদন্ত কমিটি মেহরৌত্রা কমিটির প্রতিবেদন চেপে দেওয়া হয়। বেসরকারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল অন্যায়ভাবে, সুপরিকল্পিতভাবে বিনা প্ররচনায় পুলিশ গুলি করে ১১ জনকে হত্যা করে। চেয়ারম্যান এস সি চ্যাটার্জি, সিদ্ধাথ শঙ্কর রায়, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, রনদেব চৌধুরী, অজিত কুমার দত্ত এবং এস কে আচার্জি এই তদন্ত কমিটির মেম্বার ছিলেন। ১৯৬১ সালের ১১ জুন সেই তদন্ত রিপোর্টে শেষে বলা হয়েছে, নিজেকে প্রকাশের জন্য মানুষের মাতৃভাষার অধিকার মৌলিক মানবিক অধিকার। এই অধিকারকে অস্বীকার করা কিংবা দমনের মাধ্যমে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, এর কোনোটাই আসাম তথা ভারতের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়। বরাকের এই আন্দোলনে অন্যতম নেতা পরিতোষ পাল চৌধুরীরা শেষ পর্যন্ত ভাষা শহিদদের স্বীকৃতি ও মর্যাদার দাবিতে লড়ে গেছেন। কিন্তু আজ আর কেউ লড়েন না। বিজেপি বিধায়ক দিলীপ পালের এক মন্তব্যকে স্মরণ করিয়ে দিলাম। তিনি ভাষা শহিদ স্টেশনের দাবি প্রসঙ্গে বলে ছিলেন, আজ আর কি কেউ বাংলা পড়ে, সবাই তো বাংলা ছেড়ে ইংরেজি ধরেছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.