গত কয়েক দিনের প্ৰবল বৃষ্টিতে বন্যা বিধ্বস্ত হয়েছে অসমের বেশ কয়েকটি জেলা
নয়া ঠাহর ওয়েব ডেস্ক, ২৬ মেঃ মহামারি কোভিড-১৯ প্ৰকোপের মধ্যেই গত কয়েকদিনের নিরন্তর বৃষ্টিতে বন্যা বিধ্বস্ত হয়েছে অসমের বেশ কয়েকটি জেলা। রাজ্যের নলবাড়ি, ধুবড়ি, গোয়ালপাড়া, লখিমপুর, ধেমাজি, ডিব্ৰুগড়, দরং সমেত বিভিন্ন জেলা জলে প্লবিত হয়েছে। ৩০ হাজারেরও বেশি লোক বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছে।
দেশের আবহাওয়া বিজ্ঞান কেন্দ্ৰ জানিয়েছে- ২৬ এবং ২৮ মে অসম এবং মেঘালয়ে প্ৰবল ঝড় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে দক্ষিণ পশ্চিম দিকে আসা হাওয়ার ফলে এই দুই রাজ্যে এই ৩ দিন প্ৰবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে মঙ্গলবারের সন্ধ্যেবেলার বৃষ্টিতে রাজ্যের বিভিন্ন প্ৰান্তের সঙ্গে সঙ্গে মহানগর গুয়াহাটিতেও বিভিন্ন জায়গায় কৃত্ৰিম বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। জলে ভরে গিয়েছে মহানগরের বিভিন্ন জায়গার নালা নৰ্দমাগুলি।
ছবি, সৌঃ এনডিটিভি
সোমবার রাতে প্ৰবল বৃষ্টিতে নিম্ন অসমের ধুবড়ি জেলার গোলকগঞ্জে একটি কোয়ারেন্টাইন শিবির ভেঙে পড়েছে। শিশু , মহিলা সমেত মোট ১৮ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতরভাবে আহত হয়েছে ৮ জন। তাদের হালাকুরা হাসপাতালে ভৰ্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে, গত কয়েকদিনে প্ৰচণ্ড ঝড় বৃষ্টিতে ধুবড়ির তামারহাট, গোলকগঞ্জ সমেত বিস্তৃত অঞ্চল তছনছ হয়েছে। ঝোড়ো হাওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় শিকড় সমেত উপড়ে গেছে বড় বড় গাছ। ভেঙেছে ঘর বাড়ি, গাড়ি, ছিড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে মানুষের যাতায়াতের ব্যবস্থা ব্যহত হয়েছে। দৈনন্দিন সাধারণ জনজীবন স্তব্ধ হয়েছে।
ধুবড়ি জেলার তামারহাট থানার হাতীধুরা ডেভেলপমেন্ট ব্লকের তামারহাট গ্ৰামপঞ্চায়েত, ডিংডিঙ্গা গ্ৰামপঞ্চায়েত, কামানডাঙ্গা গ্ৰামপঞ্চায়েত, কুমারগঞ্জ গ্ৰামপঞ্চায়েত এবং পাগলাহাট গ্ৰামপঞ্চায়েত ছাড়াও বিটিএডির বিস্তৃত এলাকার ক্ষতি হয়েছে। এখনও অবধি প্ৰশাসনের তরফ থেকে কোনও সাহায্য আসেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে নগাঁও জেলার কলিয়াবরের বরঘুলিতে মহাবাহু ব্ৰহ্মপুত্ৰের পারে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। জলসম্পদ মন্ত্ৰী কেশব মহন্তের কেন্দ্ৰ ২ এবং ৩ নং বরঘুলিতে ভাঙনের ফলে নদীপারের বাসিন্দাদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। চোখের সামনে নদীপারের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি, মসজিদ, চাষের ক্ষেত নদী গৰ্ভে চলে গেছে। যত শীঘ্ৰ সম্ভব একটা ব্যবস্থা গ্ৰহণের জন্য মন্ত্ৰী কেশব মহন্তের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন নদীপারের এলাকার বাসিন্দারা।
এদিকে বন্যায় গোয়ালপাড়ার রংজুলি টাউনের বেলপাড়া,মহাজনপাড়া,সরদার পাড়া,দোসীমা সমেত বেশ কয়েকটি গ্ৰাম জলে ডুবেছে। জলের নিচে অৰ্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। ফলে গ্ৰামবাসীদের থাকা খাওয়ার ভিষণ অসুবিধা হচ্ছে। চরম দুৰ্ভোগে মধ্যে দিয়ে কাটছে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর দিন রাত। মেঘালয় থেকে জল নেমে এসে জলে থৈ থৈ গোয়ালপাড়ার বেশ কয়েকটি গ্ৰাম। এদিকে নীপকোর রঙানদীর বাঁধের জল ছেড়ে দেওয়ার ফলে লখিমপুরের বেশ কয়েকটি গ্ৰাম জলে প্লাবিত হয়েছে। অরুণাচল প্ৰদেশের হাইড্ৰো ইলেক্ট্ৰিক প্লান্ট ( RHEP)রঙানদীর বাঁধের জল ছেড়ে দেওয়ার ফলে ৩ দিন ধরে রঙানদীর নিচের অংশ বন্যার জলে ডুবেছে। গত ২৪ ঘন্টায় নিরন্তর বৃষ্টিতে আরও নতুন নতুন এলাকা জলে থৈ থৈ অবস্থা।
এদিকে, নলবাড়ির রাস্তায়ও গত কয়েক দিনের নিরন্তর বৃষ্টিতে এক হাটু পৰ্যন্ত জল জমেছে। একই পরিস্থিতি সদর থানার সামনে নলবাড়ি কলেজেরও। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নলবাড়ি পৌরসভার চরম ব্যৰ্থতার কারণেই একটু বৃষ্টিতেই এলাকায় জল জমে যায়। নেই নালা নিষ্কাষণের কোনও সুব্যবস্থা।
নিম্ন অসমের দক্ষিণ শালমারা- মানকাচর জেলার সদর হাটশিঙিমারির ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দেওয়ানের আলগা গ্ৰামে সোমবার ঈদের দিন ভোর রাতে প্ৰচণ্ড ঝড় বৃষ্টিতে প্ৰচুর ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে এলাকার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি ভেঙেছে, এলাকার বহু পুরনো গাছ উপড়ে পড়েছে। বেশ কয়েকটি দরিদ্ৰ পরিবারকে ইন্দিরা আবাস যোজনার অধীনে ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। সেই পরিবারগুলির ঘরে টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। ৩৮৯নম্বর দেওয়ানের আলগা এল পি স্কুলের টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। সব মলিয়ে ঝড়ে হাহাকার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই