বাইরের রাজ্য থেকে আসা মানুষদের মধ্যে ৯৯ শতাংশ সংক্রমণ, ট্রেন-বিমান চললে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এই রাজ্যে না আসার কাতর আহবান সরকারের
অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : বাইরের রাজ্য থেকে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষের আসার
কথা আছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৩ লক্ষ
এসেছে। ২৫ মে থেকে বিমান, ১ জুন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। শ্রীরামপুর, কাজিরঙা, তিনসুকিয়া, হোজাই, উদালগুড়ি প্রভৃতি
কয়রেন্টিন সেন্টারে ঢুকেই বাইরের রাজ্যের মানুষগুলো ডাক্তার, নার্সদের সঙ্গে
অভদ্র আচরণ, খাবারের থালা ছুঁড়ে ফেলা, শারীরিক দূরত্ব
বজায় না রাখা, মাস্ক না পড়া, কয়রেন্টিন সেন্টারে ঢোকার
পর দল বেঁধে বাইরে বেরোনো, পান-তামূল, সিগারেট কিনতে যাওয়ার
হাজার অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসনের নাজেহাল অবস্থা। চরম অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি
লঙ্ঘনের ফলে কয়রেন্টিন সেন্টার থেকে ৯৯ শতাংশ কোভিড সংক্রমণ ঘটেছে। গুয়াহাটির সরুসোজাই স্টেডিয়ামের কয়রেন্টিন
সেন্টারে ৪ হাজার ৭০০ জন আছে। আজ একদিনে সেখান
থেকে ৪৪ জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছে। তারা সবাই বাইরের
রাজ্য থেকে এসেছে। এখন পর্যন্ত ৩২৯ জনের দেহে পজিটিভ ধরা পড়েছে। গুয়াহাটি তথা
রাজ্য আর নিরাপদ নয়, পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী
হিমন্তবিশ্ব শর্মা যিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামলেছেন কিন্তু আজ প্রায়
ভেঙে পড়েছেন। তিনি সরাসরি বলেন, বাস ছেড়ে ট্রাকে চেপে, গাদাগাদি করে শারীরিক
দূরত্ব বজাই না রেখে অসমে হাজারে হাজারে লোক ঢুকছে। তাতে অভাবনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাইরের রাজ্যে আবদ্ধ মানুষদের কাছে কাতর আহ্বান
জানিয়ে বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এই সময় অসমে আসবেন না। অসম আর নিরাপদ নেই। কিছুদিন বাদে আসুন। হিমন্তবিশ্ব শর্মা বাইরের
রাজ্য সরকারগুলোকে চিঠি দিয়ে অসমের মানুষদের সুরক্ষিত রেখে পরিস্থিতি ভালো হওয়ার
পর তাদেরকে রাজ্যে পাঠাবার জন্যে অনুরোধ করতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালও অনুরোধ জানাতে
পারেন। ১ জুন থেকে অসমে তিনটি
ট্রেন চলবে বুম্বাই থেকে, দিল্লি থেকে প্রতিদিন ট্রেন আসবে। গুয়াহাটি থেকে যোরহাট পর্যন্ত ট্রেন চলবে। অসম সরকারের আপত্তির ফলে কলকাতা থেকে কোনো
ট্রেন আসছে না। তবে সরকারিভাবে আপত্তির কথা জানা যায়নি। আজ
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ অফিসার শুভানন চন্দ জানান, দেশে ১ জুন থেকে ২০০
টি ট্রেন চলবে। অসমে চলবে ৩ টি
ট্রেন। কলকাতা গুয়াহাটির মাঝে
কোনো ট্রেন আপাতত দেওয়া হয়নি। তিনি জানান, বাইরের রাজ্য থেকে এপর্যন্ত
প্রায় ৩০টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন এসেছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যের শ্রমিকদের সেই ট্রেনগুলোতে ১৪০০-১৫০০ করে যাত্রী
এসেছে। সেই ট্রেন বন্ধ হয়নি। আগামী ২৫ মে থেকে বিমান চলবে। শিলচর বিমান বন্দরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। শিলচরের
বিজেপি সাংসদ রাজদীপ রায় কেন্দ্রীয় বিমান পরিবহন মন্ত্রীকে এক চিঠি দিয়ে ক্ষোভ
প্রকাশ করে বলেছেন, বরাকের তিন জেলার সঙ্গে মিজোরাম, মণিপুর প্রভৃতি
রাজ্যের মানুষ শিলচর বিমান বন্দর ব্যাবহার করে থাকে। অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ বিমান
বন্দরকে বাদ দেওয়া উচিত হয়নি। সরকার চাইছে আরও কিছুদিন বাদ পরিস্থিতি কিছুটা
সুস্থির হওয়ার পর যেন ট্রেন বিমান চলাচল শুরু হোক।
কিন্তু বিরোধী দল
চাইছে লকডাউনের ফলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। বৃদ্ধির হার জিরোতে চলে গেছে। শ্রমজীবী শ্রেণীর
পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। কোভিডের সঙ্গে সহাবস্থান করে চলতে হবে। লকডাউন প্রত্যাহার করতে হবে। ট্রেন বিমান সব
চালু করতে হবে। সিপিএম নেতা সুপ্রকাশ
তালুকদার বলেন, লকডাউনের ফলে গরিব মানুষের হাহাকার অবস্থা, পরিযায়ী শ্রমিকদের
হাতে কানা কড়িও নেই। প্রধানমন্ত্রীর
ঘোষিত ২০ লক্ষ কোটি টাকা জমা আছে। তিনি প্রতিজন
পরিয়াযী শ্রমিকদের হাতে প্রতিদিন ২৫০ টাকা করে এবং ৬ মাস ১০ কেজি করে চাল দেবার
দাবি জানান।
কোন মন্তব্য নেই