Header Ads

ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে আর যাইহোক রাজনীতি নয় !!


বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়

মূল প্রসঙ্গে ঢোকার আগে একটা বিষয়ে একটু আলোকপাত করা প্রয়োজনআমি এখন প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গীইত্যাদি লিখে যে পোস্টটি দিয়েছিলাম তাতে যেসব মন্তব্য লেখা হয়েছে তা দেখে আমার মনে হয়েছে অনেকেই ভেবেছেন আমি প্রত্যক্ষভাবে তাঁদের সঙ্গে ছিলাম ! না, প্রত্যক্ষভাবে আমি তাদের সঙ্গে থাকি না (থাকার কথাও নয়)--তবে পরোক্ষভাবে অবশ্যই থাকিকি ভাবে থাকি তা পুরোপুরি বিস্তারিতভাবে বলা যাবে নাকলকাতা-দিল্লি-ঢাকা- হোক কিংবা লণ্ডন-ওয়াশিংটন-নিউইয়র্ক--এইসব বিশষে বিশেষ জায়গায় আমার বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য সোর্স বা সূত্র রয়েছে যাদের সঙ্গে এই হাইফাই প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগ কি ভাবে রাখছি সেটা হাইটেক প্রযুক্তি সম্পর্কে যাদের ধারণা রয়েছে তাদের বুঝতে অসুবিধে হবে নাবিশেষ বিশেষ ঘটনাস্থলে শারীরিকভাবে আমি না থাকলেও আমি উপস্থিতদের মধ্যে আরএকজন হিসেবেই থাকি--অনেকের সঙ্গে কথা বলিবেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেলিফোন-হোয়াটসয়্যাপ নং- আমার কাছে থাকেটাটকা ছবিও আমি সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যাই--সময়মতো পোস্ট করিআমাকে যারা ফলো করেন তারা জানেন, আমি এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ খবরাখবর শেয়ার করি যা তারা পরের দিনে প্রকাশিত প্রিন্টমিডিয়াতেও পান নাআমার কিছু পোস্টের চুম্বক বিশেষ বিশেষ জায়গায় বা ব্যক্তির কানে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে আমার নির্ভরযোগ্য সোর্স বা সূত্রের ভূমিকা যে কতটা জোরালো সেটা আমি ছাড়া আর কারুর জানার কথা নয়আমার অনেক পোস্ট বা মন্তব্য যে বহু সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে তারও অসংখ্য প্রমাণ আছে আমার কাছেকিন্তু এর চেয়ে বেশি বিস্তারিত বলা যাবে না বলেই এখানেই বিষয়টাকে মুলতুবি রাখতে হচ্ছে
দ্বিতীয় আর একটি বিষয় হল--কোনোরকম সত্যাসত্য যাচাই না করে--একপেশে বিশেষ বিশেষ দল বা সংগঠন প্রভাবিত সংবাদপত্র-চ্যানেল-পের্টালের বিশেষ বিশেষ দলের প্রচারমূলক-অভিসন্ধিমূলক-প্ররোচনামূলক খবর-প্রতিবেদনকে বেদবাক্য মনে করে অত্যন্ত অমার্জিত ভাষায় এবং ভঙ্গিতে প্রতিবাদের নামে ব্যক্তিআক্রমণে তুর্কিনাচন শুরু করে দেন কেউ কেউএরা প্রত্যেকেই নিজের নিজের দল বা সংগঠনের ওয়াশিং মেশিনে এমনভাবে মাথা ধুয়ে নেয় যে সেই মাথায় যুক্তিবোধ নিরপেক্ষতা ভদ্রতা--এসব কিছুই ঢোকে নাআগে এই ধরণের বেলিড্যান্সারদের কোনোরকমে সহ্য করে
যেতাম--এখন আর পারি না--নিঃশব্দে তাদের আনফ্রেণ্ড করে দিতে হয়এরপর তারা কোথায় কাদের নিয়ে আমার পিণ্ডি চটকাচ্ছে আমি যাতে দেখতে না পাই এবং তারা যাতে আমার কোনো পোস্টে কোনো মন্তব্যও আর না করতে পারে--আমার প্রাইভেসি সেটিং সেইভাবে করে রাখিযন্ত্রণার চেয়ে স্বস্তিটাই আমার কাছে বিশেষভাবে জরুরি
প্রত্যক্ষভাবে আমি আজ মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে না থাকলেও অনেক কিছু দেখা শোনার রেঞ্জের মধ্যেই ছিলামসব সময়েই থাকি--অল্পক্ষণের মধ্যেই আমার পোস্টে প্রকাশিত ছবি বা বিস্তারিত বার্তায় সেটা প্রতিফলিত হয়--আজও হয়েছেফেসবুকে যতদিন থাকবো--আশা করি এমনটাই চলতে থাকবে
রাজ্যে মঙ্গলবার থেকে আমফানের প্রভাব পড়েছিল--বুধবার থেকে সে প্রভাব তীব্র হতে থাকে এবং বিকেল হতে না হতেই তার ভয়ঙ্কর তাণ্ডবের চেহারা রাজ্যের সিংহভাগ এলাকা কাঁপিয়ে দিয়েছিলকতটা ভয়ঙ্কর তার চেহারা মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে তা বর্ণনা করাও কঠিনচুতর্দিকে লণ্ডভণ্ড অবস্থা--৮০ জন প্রাণ হারালো--গ্রামের পর গ্রাম ভেসে গেল--হাজার হাজার ঘর-বাড়ি মাটিতে মিশে গেল--ক্ষেতের পর ক্ষেতের ফসল নষ্ট হলো--চারিদিকে হাহাকার আর্তনাদ খাবার জল নেই--আলো নেই--চারদিকে আমাজনের ছোট ছোট আবহ
করোনার বিধ্বংসী আবহে এমনিতেই মানুষের ঘরে ঘরে খাবার ছিল না--হাতে কাজ ছিল না--এমনই এক চরম দুর্বিপাকের মধ্যেই আমফানের বিধ্বংসী তাণ্ডব রাজ্যের মানুষের অভিজ্ঞতায় এটা ছিল নাকেন্দ্র পূর্বাভাস দিয়েছিল তাদের আহাওয়া দপ্তরের মাধ্যমেতাদের নির্ভুল পূর্বাভাস না থাকলে ৮০ জন নয়--৮০ হাজার মানুষের প্রাণ যেতে পারতো ! রাজ্য সরকারও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে ক্ষয়ক্ষতি যতটা কম হয় তার জন্যেমুখ্যমন্ত্রীও কল্পনা করতে পারেন নি--আমফানের তাণ্ডব এই মাপের হতে পারেতিনিও তাই তাঁর তীব্র বিষাদ হতাশা চেপে রাখতে পারেন নিপরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে তিনি তাই বলেছেন, রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে কেন্দ্র রাজ্যের পাশে এসে দাঁড়াকপ্রধানমন্ত্রী নিজে এসে পরিস্থিতি দেখে যান
মাত্র চব্বিশ ঘন্টা যেতে না যেতেই প্রধানমন্ত্রী ছুটে এলেন রাজ্যেমুখ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আকাশপথে বিপর্যস্ত অঞ্চল ঘুরে দেখলেনবিগত -বছরের মধ্যে এমন দৃশ্য দেখা যায় নিমোদী প্রমাণ করলেন--রাজ্য যদি সদর্থক মানসিকতা নিয়ে তাঁর সাহায্য চায় তাহলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে পাশে দাঁড়াতে দ্বিধা করবেন না--কোনো আনুষ্ঠানিকতা কোনো ডিপ্লোমেটিক আচার-আচরণগত বিলম্ব বা দীর্ঘসূত্রিতার সুযোগও নেবেন না
আমার দীর্ঘ সাংবাদিকতার জীবনে আমি আজপর্যন্ত কোনোরকম বিপর্যয়ে মাত্র চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কোনো প্রধানমন্ত্রীকে ছুটে আসতে দেখি নিনানান প্রেটোকলের অজুহাতেও কোনো প্রধানমন্ত্রীকে ছুটে আসতে দেখেছি বলে মনে করতে পারছি নাকেন্দ্রীয় দল অবশ্য এসছে যখন বন্যার জল সব শুকিয়ে গেছে কিংবা খরায় ফুটিফাটা মাঠগুলো বর্ষার জলে ভিজে গেছে ! এমনটাই দেশের রীতিএমনটাই দেশের রাজনীতি
আঁতুর ঘর থেকে শ্মশান--আমাদের দেশের একমাত্র দূরারোগ্য চুলকানি হলো রাজনীতিচব্বিশঘন্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ছুটে আসা, তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতির মোকাবেলার জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা নিয়েও ন্যাংটো রাজনীতি শুরু হয়ে যাবে--সত্যি বলতে কী শুরু হয়েও গেছেআড়াআড়ি দুটি শিবিরে বিভক্ত লোকজন মোদী মমতাকে অত্যন্ত অমার্জিত ভাষায় সবসময়েই কামড়ানোর জন্যে তৈরি থাকেইফলে প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই পদক্ষেপ নিয়ে রাজনীতি হবে না--এটা ভাববার কোনো কারণই নেই
অথচ, পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুভব করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যে পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটাই জনগণের কাছে কাঙ্ক্ষিত ছিলকেন্দ্র-রাজ্যের সম্পর্কের মধ্যে এই সমন্বয় সমঝোতার মানসিকতাই রাজ্যের পক্ষে মঙ্গলজনক বলেই মনে করেন সিংহভাগ মানুষতাঁরা আরও মনে করেন--কেন্দ্রের সমস্ত প্রকল্প রাজ্যে চালু করলে রাজ্যের মানুষেরই উপকার হতে পারে এবং সেটা দেরি না করে এখনই করা উচিতকরা হবে কি হবে না--সেটা ১০০% রাজনৈতিক প্রশ্ন--যা সাধারণ মানুষের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়মোদী আজ যে ধরণের ইতিবাচক বার্তা দিয়ে গেলেন--তাঁর এই মানসিকতা যদি অটুট থাকে তাহলে রাজ্যকে ফের চাঙ্গা করে তুলতে মমতার খুব কষ্ট হবে না
কেন্দ্রের অর্থ পিএম টু ডিএম’-এর দাবি উঠেছিল এক সময়ে--সেই ইতিহাস স্মরণ করেই রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, রাজ্যের হাতে টাকা না দিয়ে ধনজন অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা জমা দেওয়ার মতো দুর্গতদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি যেন টাকা দেওয়া হয়সরাসরি দুর্গতদের হাতে বা অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে পারেন নি মনমোহন সিংওকারণ, সে টাকা কোনো কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয় প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মানুষকে টেনে তুলতে হলে বহুবিধ পরিকল্পনা নিতে হয়--যা দুর্গতদের অ্যাকাউন্টে টাকা ফেলে দিলেই করা যায় নাহাতে টাকা পেলেই সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়া সকলের পক্ষে সম্ভব হয় না--চোখের পলকে টাকা শেষ হয়ে যায়তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী যদি সব ক্ষেত্রেই সরাসরি মানুষের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার সংস্কৃতি চালু করেন তাহলে রাজ্য সরকার-ত্রিস্তর পঞ্চায়েত-পুরসভাগুলোর প্রয়োজন কি? গুলো তো তুলে দিলে বিশাল খরচ বেঁচে যায়ভারতের একটিও বিজেপি রাজ্যের মানুষকে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে বিডিও অফিসে আবেদন করে টাকা নিতে দেখা গেছে? দিলীপবাবু মুখ্যমন্ত্রী হলে এই নিয়মে রাজ্য চালাবেন কি? এটা তো দেশের নিয়ম--কেন্দ্র থেকে তৃণমূল স্তরে মানুষের কাছে আসতে আসতে দশ টাকা দশ পয়সা হয়ে যায় ! এই নিয়মটাকে ভাঙাটাই জরুরি না পিএম টু ডিএমপ্রথা চালু করাটা জরুরি?
রাজ্য সরকারের ভূমিকাকে মান্যতা দিয়েই সরকারি নিয়মরীতি রক্ষা করতে হবেএই বিষয়টাকে নিয়ে রাজনীতি করতে চাইলে মানুষের উপকার হবে না--বঞ্চনা বেড়ে যাবে--মানুষের ক্রোধ হতাশাও বাড়বেদিলীপবাবু যেটা চাইছেন সেটা আগে কোনো বিজিপ শাসিত সরকারে চালু করে দেখান ব্যাপারটা কতটা সহজ গ্রহণযোগ্যএসব ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা মানুষ মেনে নেবে নাএক সঙ্গে তাদের জল-আলো-রাস্তাঘাট-খাদ্য-স্বাস্থ্যব্যবস্থা চাইঅ্যাকেউন্টে টাকা ফেলে দিলেই এইসব অত্যন্ত জরুরি চাহিদাগুলো নিজের নিজের মতো মিটিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নেই--থাকার কথাও নয় তবু এইসব গুরুতর বিষয়গুলো নিয়েও রাজনীতি করতেই হবেনা হলে বিরোধী রাজনীতির সম্মান থাকবে না মনে হয়কিন্তু যাদের জন্যে রাজনীতি--সেই মানুষ কিন্তু সব বোঝে--সব জানেতাই এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে আর যাইহোক রাজনীতি নয়--এই বিশ্বাসে যারা মানুষের কাছে যাবে--মানুষ তাদের পাশে দাঁড়ালেও দাঁড়াতে পারেসরকারি পয়সা চোরদেরও এটা বিশেষভাবে ভাবা জরুরি

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.